আন্ডারকারেন্ট
হিল্লোল ভট্টাচার্য
ড.গাঙ্গুলি একটা ভর্ৎসনার দৃষ্টি হেনে ভারী পর্দাটা সরিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। মনীষা চোখের ইশারায় শৈবালকে বলতে যাচ্ছিল, ডাক্তারবাবুকে বাইরের দরজা পর্যন্ত ছেড়ে আসার কথা; তাকিয়ে দেখল, অপরাধীর মত মুখ করে লজ্জায় নতমস্তক হয়ে বসে আছে শৈবাল। হওয়াই উচিৎ, আজ নিয়ে গত একবছরে সে যা যা করেছে, তা ভুল নয়, অপরাধ। সোমদত্তা মাথায় ড্রেসিং করা অবস্থায় লিভিং রুমের একটা ডিভানে শুয়ে আছে, কড়া ডোজের ওষুধের প্রভাবে ঘুমোচ্ছে।
শৈবাল আর সোমদত্তার বিয়ে হয়েছে ঠিক একবছর, অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ। এমনি সব ঠিকঠাকই আছে কিন্তু শৈবালের একটা অদ্ভুৎ স্বভাব যেন তাদের মধুময় বিবাহিত জীবনকে কন্টকাকীর্ণ করে তুলছে। ভয়…মানুষকে ভয় দেখানোর মধ্যে এক অদ্ভুৎ আনন্দ পায় সে। স্কুলজীবন থেকে এর সূত্রপাত, হোস্টেলে রাতবিরেতে সাদা চাদর মুড়ি দিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে প্র্যাঙ্ক করেছে, শ্মশান থেকে হাড়গোড় বা খুলি জোগাড় করে গভীর রাতের পথচারীদের সাথে উৎকট রসিকতা করে পৈশাচিক আনন্দ লাভ করেছে শৈবাল। প্রথম প্রথম বড়রা বকাবকি করলেও কেউ খুব বেশি মাথা ঘামায়নি এটা নিয়ে। বয়সের সাথে সাথে এক ধরণের নেশার মত তার মজ্জায় গেড়ে বসেছে মানুষকে ভয় দেখানোর প্রবণতা। ঠিক যেন ড্রাগের অ্যাডিকশন, করে ফেলার পর কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার অন্ত থাকে না তার কিন্তু আবার কিছুদিন পর কাউকে ভয় না পাওয়াতে পারলে ভেতরে ভেতরে ছটফট করতে থাকে শৈবাল।
শৈবালের নিজের হার্ট খুব সবল, হবে নাই বা কেন? ছোটবেলা থেকে হলিউডের যাবতীয় হরর ফিল্ম এবং বাঙলা ও ইংরেজি ভৌতিক বই নিয়ে তার নাড়াচাড়া। সেসব জায়গা থেকে পাওয়া আইডিয়ায় ভর করে নানান মেকাপ ও ছদ্মবেশ ধারণ করে, নির্জন অন্ধকার রাত্রে মানুষজনের হৃদকম্প ধরানো যার প্রিয় খেলা, তার কি নিজের ভয় পেলে চলে?
দুর্ভাগ্যবশত তার বউ হ’ল সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর। নরমস্বভাব সোমদত্তা বড় ঘরের মেয়ে হলেও বরাবর লো প্রোফাইল মেইন্টেইন করে। স্ট্যামারিং এর একটা সমস্যার জন্য ছোটো থেকেই খুব বেশি বাইরের লোকের সাথে কথোপকথনে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে না সে।
আত্মবিশ্বাসের অভাব তার সঙ্গ ছাড়ে নি কখনো। বিয়ের সাত দিনের মাথায় গভীর রাতে যখন সাদা পাঞ্জাবীকে রক্তাক্ত করে বুকে একটা আমূলবিদ্ধ ছুরি নিয়ে থিয়েট্রিক্যাল ঢঙে ডোরবেল বাজিয়েছিল শৈবাল, আতঙ্কে প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে উঠেছিল সোমদত্তা। থরথর করে কাঁপছিল সে, পাড়া প্রতিবেশীরা ছুটে আসাতে শৈবালের লাশ কে উঠে বসতে হয়, যদিও অভিনয়টা আরো কিছুক্ষণ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল তার। বলাই বাহুল্য, পড়শিরা কেউই ব্যাপারটা অ্যাপ্রিশিয়েট করল না বরং সবার সহানুভূতি ছিল সোমদত্তার প্রতি। খবর পেয়ে সোমদত্তার বেস্টফ্রেণ্ড মনীষা এসে পড়েছিল সে রাতেই।
“ইট ওয়াজ নট ফানি, ইট ওয়াজ নট ফানি অ্যাট অল শৈবাল” – ক্রদ্ধ স্বরে ধমক দিয়েছিল প্রখর ব্যক্তিত্বময়ী মনীষা। চশমার ফাঁক থেকে তার দুচোখ বলে দিচ্ছিল, ব্যাপারটা একেবারেই পছন্দ করে নি সে।
“ছ..ছ..ছাড়…. মনীষা, ও হয়ত একটা হা হা হার্মলেস জ জ জোক করতে চেয়েছিল” – রাগ বা আতঙ্কে সাধারণত তোতলামি বেড়ে যায় সোমদত্তার।
এর পর আলোর স্যুইচ অফ করে বেডরুমের জানালা দিয়ে ফলস মড়ার খুলি ছুঁড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রায় প্যানিক অ্যাটাকের মত হয়েছিল সোমদত্তার।
“ভূত বলে কিছু নেই সোমা, তুমি খামোখাই এত ভয় পাও” – বলে শৈবাল। বিদেশের হ্যালুইনের কস্টিউম পার্টির গল্প বলে ভয় ব্যাপারটা যে আসলে ভীষন উপভোগ্য, সেটা বোঝানোর চেষ্টা করে সে।
“জানো তো, মাঝেমাঝে হ্যালুইন আর ভূতচতুর্দশী একই তিথিতে পড়ে, ব্যাপারটা কি অদ্ভুতুড়ে রকমের ইন্টারেস্টিং না?”
সোমদত্তা কোন ইন্টারেস্টই পায় না এতে; জলার পেত্নী, জম্বি মুভি কিম্বা ভ্যাম্পায়ার – কিছুতেই বিন্দুমাত্র আকর্ষণ নেই তার। নিখাদ লাভ স্টোরি বা রোমান্টিক কমেডি তার প্রিয়তম জনরা।
-“তুই ওকে সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে নিয়ে যা সোমা, হি নিডস কাউন্সেলিং, এটা নর্মাল নয়; কাউকে ভয় দেখিয়ে নিজেকে তৃপ্ত করার এরকম তীব্র প্যাশন মস্তিষ্কের বিকার ছাড়া আর কি বল?” – শৈবালের অবর্তমানে মনীষা আর সোমদত্তার দীর্ঘ ফোনালাপ হয়, কখনো বা সামনাসামনি।
-“লাভ নেই রে, নিয়ে গেছিলাম ড. পি মিত্রর কাছে, ডাক্তার ওকে মৃদু ধমক দিয়ে বলেছেন ভবিষ্যতে যেন এরকম আর না করে, আনফরচুনেটলি এ রোগের কোনো দাওয়াই নেই। উলটে শৈবাল জিজ্ঞেস করেছিল, ডাক্তারবাবু এরকম কিছু ওষুধ পাওয়া যাবে, যাতে আমি ভয় দেখালে ওর হার্টের ওপর খুব একটা চাপ পড়বে না, মানে সি উইল বি সেফ?”
অবসন্ন স্বরে জবাব দেয় সোমদত্তা।
আজ যেটা হ’ল সেটা চূড়ান্ত রকমের বাড়াবাড়ি, বলা যায় সহ্যের সব সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার মত। তাদের অ্যানিভার্সারি আজ, অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছিল শৈবাল, অ্যানিভার্সারি ডিনারে যাওয়ার জন্য একটু বেশিক্ষণ ধরেই সাজছিল সোমদত্তা। পার্টি গাউনে শোভিতা হয়ে বেডরুম থেকে বেরিয়ে এসে শৈবাল কে দেখতে পেল না সে, বোধহয় অন্য ওয়াশরুমে তৈরী হচ্ছে।
দু একবার ডেকে সাড়া না পেয়ে লিভিংরুমে এসে সোমদত্তা দেখল, একটা বেশ লম্বা বাক্স খুব সুন্দরভাবে গিফট প্যাক করা। বৈদ্যুতিক আলো নেভানো, চারপাশে সুগন্ধী মোমবাতির নরম আলো মায়াবী বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে। শৈবালের মধ্যে এতটা রোমান্টিসিজম লুকিয়ে ছিল? ভীষণ ইমপ্রেসড হয় সোমদত্তা। বাক্সটার ওপর সুদৃশ্য র্যাপের সাথে একটা গ্রিটিংস কার্ড রঙিন বো নটে আটকানো। কার্ড টা তুলে দেখল,
“টু দ্য সুইটেস্ট ওয়াইফ এভার,
হ্যাপি অ্যানিভার্সারি, লাভ!
– শৈবাল”।
আর তর সইল না সোমদত্তার, তাড়াতাড়ি করে গিফট র্যাপ ছিঁড়ে বাক্সটার ঢাকনা খুলে ফেলার সাথেসাথেই একটা আতঙ্কিত চিৎকার দিয়ে ছিটকে এল সে। একটা দস্তানা পরা হাত বেরিয়ে এসেছে ভেতর থেকে, কয়েক মুহুর্ত দস্তানার মধ্যে থেকে আঙুল গুলো পর্যায়ক্রমে ওঠানামা করে তাল ঠুকল বাক্সের কিনারে, তারপর একটা সিনেমাটিক পজ দিয়ে আলো অন্ধকারের মধ্যে ধীরেধীরে উঠে দাঁড়ালেন কাউন্ট ড্রাকুলা। কলারতোলা ওভারকোট সমেত ফুল কস্টিউম, দু কষ বেয়ে রক্ত গড়াচ্ছে; আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না সোমদত্তা। মাথাটা ঘুরে পড়ে যাবার সময় দেখল কাউন্ট ড্রাকুলা একটা হাত তার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। কাঠের বাক্সের কোণায় লেগে মাথাটা বেশ খানিকটা কেটে গেছিল। তার জ্ঞানহীন শরীর ভূলুণ্ঠিত হবার পর কপাল থেকে চুঁইয়ে পড়া রক্ত ভিজিয়ে দিচ্ছিল অ্যাফ্রোডিজিয়াক ক্যান্ডেলের পাদদেশ।
এবারের শকটা কিন্তু সহজে কাটল না, প্রথম রাতে অতটা বোঝা না গেলেও কিছুদিনের মধ্যে সোমদত্তা কে হাসপাতালে ভর্তি হতে হ’ল। নানান পরীক্ষার পর বোঝা গেল, হৃদযন্ত্র বেশ দুর্বল। কিছুদিন হাসপাতালে থেকে বাড়ি ফিরে এলেও খুব সাবধানে থাকার কড়া নির্দেশ দিলেন ডাক্তার। কোনোরকম শক প্রাণঘাতী হতে পারে এরকম অবস্থায়। বেশিরভাগ সময় বসে বা শুয়ে থাকে আজকাল সোমদত্তা। মনীষা অনেকটা সময় কাটায় এ বাড়িতে এখন। শৈবাল অবশ্য তারপর থেকে আর কোনো দুস্কর্ম করে নি, সম্ভবতঃ মনীষার কড়া নজরদারির জন্য। তবে অকারণেই মাঝেমাঝে ভয়ে কেঁপে ওঠে সোমদত্তা,
“ওই… ওই যে পর্দার পে পে পেছনে কে?”
-“কেউ না, কেউ নেই ওখানে সোমা” – মনীষা আর শৈবাল মিলে বোঝায়। হৃদরোগের সাথে সাথে ড. পি মিত্রের চিকিৎসা ও চলছে এখন। স্কিজোফ্রেনিয়াটা আস্তে আস্তে গেড়ে বসছে। অহেতুক ভয়, অবসাদ, হ্যালুসিনেশন, পার্সিকুটরি ডিল্যুশন – লক্ষণগুলো স্পষ্ট হতে থাকে।
ডাক্তারের পরামর্শে ওরা চেঞ্জে এসেছে, সিকিমে, সোমদত্তার প্রিয় হিলস্টেশন, মনীষা ও সঙ্গে আছে। খুব বেশী বেরোতে চায় না সোমদত্তা, মাঝেমাঝে হোটেলের বাইরে একটা বেঞ্চে বসে একলা পাহাড়টার দিকে তাকিয়েই সন্ধে খানা কাটিয়ে দেয় সে। তবু মনে হয় যেন কলকাতার থেকে খানিকটা উন্নতি হয়েছে স্বাস্থ্যের।
আজ সূর্যাস্তের পর হোটেলে ফিরে এসেছে শৈবাল আর সোমদত্তা। মনীষা একটা জরুরী কাজ সেরে ফিরবে।
এখানে, পাহাড়ি এলাকায়, ঝুপ করে রাত্রি নেমে আসে তাই সাধারণত কলকাতার থেকে অপেক্ষাকৃত তাড়াতাড়ি ডিনার সারা হয়ে যায়। আজ ডিনারের পর একটা ইংরেজি গল্প পড়ে শোনাচ্ছিল শৈবাল, কবরখানার কিঞ্চিৎ বিবরণ থাকলেও গল্পটা ভৌতিক নয়, আদ্যন্ত রোমান্টিক।
গল্পের নায়ক ভীষণ ভালোবাসত তার স্ত্রীকে। স্ত্রীর অকালমৃত্যুর পরে তাকে কিছুতেই ভুলতে পারেনি সে। প্রতি মাসে স্ত্রীর জন্মতারিখে এক গোছা রক্তগোলাপ রেখে আসত কবরের সামনে। নভেম্বরে অর্থাৎ মেয়েটির জন্মদিনে যখন সে গোলাপের তোড়াটা রেখে ফিরে আসছিল, হঠাৎ মনে হল তার নাম ধরে কেউ যেন ডাকল মেয়েলি গলায়। খুব পরিচিত স্বরে চমকে উঠে টেড, এ গল্পের নায়ক, ফিরে তাকাতেই দেখে, তার স্ত্রী সারা গোলাপের তোড়াখানা হাতে নিয়ে উঠে বসেছে, হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। মন্ত্রমুগ্ধের মত এগিয়ে যায় টেড, সারার হাতখানা বরফশীতল, তবু তারা আলিঙ্গনবদ্ধ হয়।
“ও কে ও কে ও ও ও খানে?” সোমদত্তার আর্ত চিৎকারে থতমত খেয়ে বই ছেড়ে ধড়মড় করে ওঠে শৈবাল।
“কই, কোথায়?”
“ও ও ও ওই যে, বা বা বাথরুমের কাচের দ দ দরজার ওপাশে!”
“কেউ নেই সোমা, ওখানে কেউ নেই”।
সোমদত্তা পরিস্কার দেখে, ঘষা কাচের পাল্লায় একটা ছায়ামূর্তি, হুবহু গল্পে সারা যেমন সাদা রঙের গাউন পরেছিল তেমনি, মুখটা রক্তশূন্য, একহাতে গোলাপের তোড়া। ধীরেধীরে পাল্লাটা সরে যায়, নারীমূর্তি টি এগিয়ে আসছে সোমদত্তার দিকে।
“আহ!আ আ আহ” – বুকে একটা তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে লুটিয়ে পড়ে সোমদত্তা।
ঘণ্টা তিনেক অতিবাহিত।
পুলিশ, ডাক্তার ইত্যাদি ফর্মালিটি মিটে গেছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য সোমদত্তার মৃতদেহ পোস্টমর্টেমে পাঠানো হয়েছে। থানার অফিসার বিদায় নেওয়ার পর দরজা বন্ধ করে ফিরে আসে শৈবাল। উল্টো দিকের দেওয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে আছে মনীষা, তার দিকে নির্নিমেষ চোখে তাকিয়ে। শৈবাল ও চোখ সরায় না খানিকক্ষণ, তারপর দুজনের ঠোঁটেই এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। হাসি ক্রমেই দীর্ঘতর হতে থাকে তারাও পরস্পরের কাছাকাছি আসে। দীর্ঘশ্বাসের সম্মিলিত আওয়াজ পাওয়া যায়, স্বস্তির শ্বাস, মাঝখানের দেওয়াল সরে যাওয়ার নিশ্চিন্তির নিঃশ্বাস।
পুলিশের কাছে শৈবালের গল্প বলা ও সোমদত্তার আর্ত চিৎকার পর্যন্ত কোনোকিছুই লুকোবার প্রয়োজন পড়ে নি। ওটা যে ডিল্যুশনই ছিল, ড. মিত্র তা সার্টিফাই করতে পারেন, গত এক বছরে শৈবাল ও মনীষা ছাড়া আরো অনেক সাক্ষী গড়ে উঠেছে সেটা প্রমাণ করার। অতএব মিশন অ্যাকম্পলিশড!
অসম্ভব যৌন আকর্ষক, দীর্ঘাঙ্গী মনীষার গরম নিশ্বাস তাকে মাতাল করে দিচ্ছে। কাছে পাবার উদগ্র কামনায় মনীষা কে পাগলের মত জাপটে ধরে শৈবাল। কমলালেবুর কোয়ার মত ঠোঁট দুটোতে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে একটা দীর্ঘ চুম্বন একেঁ দিতে চেয়ে আশ্লেষে চোখ বন্ধ করে ফেলে। পরক্ষণেই চমকে ওঠে শৈবাল, খট করে একটা আওয়াজ শোনা যায়। তার ঠোঁটের মধ্যে ঠিক ডিপফ্রিজে জমানো আইসকিউব চোষার মত একটা অনুভূতি টের পায় সে, বিম্বাধরা মনীষার রক্তশূন্য ঠোঁটের তাপমাত্রা এখন হিমাঙ্কের নীচে। ইলেকট্রিক শক খাবার মত ছিটকে পিছিয়ে আসে শৈবাল। আতঙ্কিত হয়ে তাকিয়ে থাকে মনীষার দিকে, মাথাটা গোলমাল পাকাচ্ছে, কিচ্ছু বুঝতে পারছে না সে। আবার একটা মৃদু শব্দ হল, এবার মনীষার পায়ের দিক থেকে; মদের গ্লাসে আগে বরফ রেখে স্কচ ঢাললে আইসকিউবে ফাটল ধরার যে আওয়াজ পাওয়া যায়, তেমন। মনীষার পায়ের পাতাজোড়া আস্তে আস্তে বরফে পরিণত হয়ে যাচ্ছে, স্বচ্ছ বরফ, তার ভেতর দিয়ে এক্সরের মত হাড়ের কাঠামো প্রতীয়মান হচ্ছে। বরফে চিড় ধরার আওয়াজটা পায়ের পাতা বেয়ে ধীরেধীরে ওপরের দিকে উঠছে, অর্থাৎ কাফ মাসল, হাঁটু, মসৃণ ঊরু সব……. সব হিমায়িত হয়ে যাচ্ছে।
শৈবাল একটা আর্তনাদ করে ওঠে, উফফফফ, আর তাকিয়ে থাকতে পারছে না সে। মনীষার ঘাড়ের কাছটা ভেঙে ঝুলে পড়ছে, গোঙানোর মত স্বর ভেসে আসে তার গলা থেকে,
“সব ডি ডি ডিল্যুশন নয়, স স সব চোখের ভু ভু ভুল ছিল না!”
জীবনে প্রথমবারের জন্য সংজ্ঞাহীন হয় শৈবাল।
Oshadharon