আহা কি আনন্দ
শ্রীপার্থ
আইপিএল ফাইনালে সেঞ্চুরি করার একমাত্র কৃতিত্ব রয়েছে এক বাঙালি ক্রিকেটারের। কিন্তু সেই ক্রিকেটারের নাম সৌরভ গাঙ্গুলি নয়, তিনি ঋদ্ধিমান সাহা। এ হেন এক কৃতিত্ব অর্জন করার পরও ঋদ্ধিমানের শহরে ফিরে আসা নিয়ে কোন হৈচৈ হয় না,
তার গলায় মালা পরাতে ছুটে যান না কোন ডবকা যুবতি, সংবর্ধনার কথা বললে মাছি তাড়ানোর মতনই উড়িয়ে দেন হোমরাচোমরা কর্মকর্তা। সংবর্ধনা হয় না তার কারণ ঋদ্ধিমান যে দলের হয়ে খেলেন তার নামের কোথাও, বিশ্বাস করুন কোথাও, কলকাতা জুড়ে নেই। শুরুতে একটা ‘ক’ আছে বটে, তবে সেটা কলকাতার ক নয়, নেহাতই কিংস-এর । কিন্তু আমাদের এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজা শব্দের প্রতি কোন দুর্বলতা থাকা সম্ভব নয়, নেইও । আমাদের যা কিছু উল্লাস, নৃত্য, কোমরদোলানো, তারস্বরে চিৎকার সবই কলকাতাকে ঘিরে, কলকাতার জন্য।
বাচ্চারা যেমন জুজু শব্দটা উচ্চারিত হলেই সব বায়না ভুলে শান্ত হয়ে যায়, আমরাও একইভাবে কলকাতা শুনলেই সব ভুলে যাই। থানা থেকে পাস তুলে অথবা না তুলে, ব্যারিকেড ভেঙে লক্ষ লোকের ভিড়ে মারামারি করে, ঘোড়সওয়ার পুলিশের লাঠি খেয়ে ছুটে যাই দুবাহু শূন্যে তুলে।
এই আমির মধ্যে আর আমি একলা থাকি না। সব ভেদাভেদ মুছে গিয়ে সাম্যবাদের ঝলক দেখা যায়, সবাই এক নিমেষে সমান হয়ে যাই। একই সঙ্গে একই স্টেডিয়ামে একই খেলাকে ঘিরে এই আনন্দ যজ্ঞে মেতে ওঠেন ভুতোদা, পালবাবু, বড়বাবু, মুনাই, মন্ত্রী, মহামন্ত্রী, লায়লা, মজনু, জানেমন, দয়ালু শাশুড়ি, ভিলেন মা, গত জন্মের হা্রিয়ে যাওয়া নাতবৌ। এই কলকাতা নাইট রাইডারসে কলকাতা বা রাজ্যের কেউ না থাকুক, ধরে ধরে বাঙালি লক্ষ্মীদের অলক্ষ্মী ভেবে বাংলার সব ক্রিকেটারকে তাড়িয়ে দেওয়া হোক না, তবু আমরাই জিতেছি। থুড়ি কলকাতা জিতেছে। নিন্দুকেরা যাই বলুক না কেন, নামে কলকাতা থাকলে আমরা ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে কাবাব দিয়ে কচুরি খেতে পারি, অরণ্যদেবের মতন প্যান্টের ওপর জাঙ্গিয়া পরতে পারি, টারজানের মতন গাছে উঠে কলার খোসা ফেলতে পারি, জিলিপি মুখে নিয়ে মাঝ রাস্তায় ডিগবাজি খেতে পারি, চেঁচিয়ে ৮০ বছরের দিদিমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিতে পারি, নাচতে নাচতে বড় রাস্তায় যানজট পাকিয়ে দিতে পারি, বান্ধবীর থেকে পয়সা ধার করে গৌতম গম্ভীরকে গরম সিঙ্গারাও খাওয়াতে পারি। ঐ যে কলকাতা আছে – মুখে অথবা ল্যাজে।
ও, দুলহানিয়া নিয়ে যাওয়া দিলওয়ালে। ওই তো হারকে ভি জিতনেবালে বাজিগর, ও মহব্বতে, ও দেবদাসও। ও চাক দে ইন্ডিয়া। ওকে সিনেমায়-টিভিতে দেখা যায়। এমন লোকের জন্য না নেচে থাকা যায়! আরে উরুগুয়ে বা কোস্টারিকার কোন টিমের নামের আগে পিছে যদি কলকাতা, পাশকুড়া বা গঙ্গারামপুরের নাম থাকে তাহলেও আমরা চেঁচিয়ে মাত করে দিতে পারি।
আহা পাঠান, গম্ভীররা কামাক না কোটি টাকা, কষ্ট তো কম করে নি বাছারা। রাতের বেলা সূর্য ডুবে গেলে ঠাকুমার ঝুলির গল্প না শুনে খেলতে হয়েছে,
প্রত্যেক ম্যাচে দুই, তিন, পাঁচ- যাই হোক না কেন রান করতে হয়েছে, আবার বেচারাদের বলও করতে হয়েছে। কষ্ট কি কম! ওদের নিয়ে একটু আনন্দ করব না! ওদের জয়ে অফিস, স্কুল,কলেজ কামাই করব না! কি যে বলে ঐ কটা লোক! ওদের মনে কোন উদারতা নেই, ওরা সঙ্কীর্ণ। ওরা নিজেদের মনটা বড় করতে পারে নি তাই বাংলা নিয়ে হ্যাংলা হয়েছে। এ খেলা বাংলার খেলা – এ জয় বাংলার জয়। শাহরুখের ক্লাব তবু জয় কলকাতার, থুড়ি বাংলার। কবিগুরু তো বলেই গেছেন পাঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মারাঠা দ্রাবিড় উৎকল – বঙ্গ । সবই বঙ্গ । জয় হে। আসছে বছর আবার হবে। বাঙালিহীন বাংলার জয়ে মেতে উঠব বাঙালিরাই।