কি ভাবে বুঝবেন মুখের ক্যান্সার ?

দিন দিন বাড়ছে মুখের ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা। মুখগহ্বরের যে কোনও জায়গা বা জিভে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগসমূহের সমষ্টি হচ্ছে মুখগহ্বর ক্যান্সার। মুখের ক্যান্সার সাধারণত ঠোট, জিভ, গাল, জিভের নিচে, তালু প্রভৃতি জায়গাতে হয়ে থাকে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের যুগে এই রোগ দ্রুত নির্ণয় ও এর থেকে আরোগ্য লাভের অনেক সুযোগ সৃষ্টি হলেও ক্যান্সারের প্রতি মানুষের খানিকটা আতঙ্ক যেন সহজাত। তবে আমাদের মনে রাখা দরকার, মুখের ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে গড়িমসি না করে দ্রুত চিকিৎসার পদক্ষেপ নিলে এর থেকে সম্পূর্ণ নিরাময় অসম্ভব নয়।

কি ভাবে হয় মুখের ক্যান্সার?

১. তামাক বা তামাকজাত যে কোনও পণ্য সেবন (যেমন বিড়ি, সিগারেট, সাদা পাতা, গুল, হুঁকা, চুরুট, খইনি ইত্যাদি) এবং জর্দা, সুপারি, চুন দিয়ে পান খাওয়া।

২. অতিমাত্রায় মদ্যপান।

৩. ধারালো বা বাঁকা দাঁত; ত্রুটিযুক্ত ডেঞ্চার, ফিলিং, আর্টিফিসিয়াল ক্রাউন, ব্রিজ বা অ্যাপ্লায়েন্স দ্বারা মুখগহ্বরের কোনো অংশে ক্রমাগত আঘাত লাগা।

৪. সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির সরাসরি সংস্পর্শে থাকা (ঠোঁটের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়)।

৫. বংশগত ইতিহাস থাকা।

৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা।

৭. খাদ্যতালিকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস (ভিটামিন এ, সি, ই) এর ঘাটতি।

মুখের ক্যান্সারের লক্ষণ :

 ১. মুখগহ্বরে দীর্ঘমেয়াদী অস্বাভাবিক ফোলা/রক্তক্ষরণকারী ক্ষত, মুখগহ্বর, চোয়াল বা তার আশেপাশে ব্যথা অনুভব করা।

২. সাদা বা লাল বর্ণের দীর্ঘমেয়াদী ছোপ, যা সহজে সারছে না, অস্বাভাবিক রংয়ের কোনও ছোপ যা হঠাৎ আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৩. মুখগহ্বরের কোনো অংশে জ্বালাপোড়া, খোঁচানোর মত অনুভূতি হওয়া, মুখগহ্বর বা তার আশেপাশে কোনও অংশে বোধশক্তি হারানো, দৃশ্যমান কোনও কারণ ছাড়াই দাঁত নড়বড়ে হয়ে যাওয়া।

 ৪. মুখগহ্বর, চেহারা, গলা বা ঘাড়ে চাকা বা দলার উপস্থিতি, চোয়াল বা জিহ্বা স্বাভাবিকভাবে নাড়াতে না পারা বা ব্যথা অনুভব করা।

৫. গলায় কিছু আটকে আছে বলে মনে হওয়া। কথা বলতে, খাবার চিবাতে ও গিলতে কষ্ট হওয়া, কণ্ঠস্বর পরিবর্তন, মুখে দুর্গন্ধ।

৬. হঠাৎ ওজন হ্রাস।

এরকম কিছু লক্ষণ মুখের ক্যান্সারে থাকতে পারে। তবে এসব লক্ষণ দেখা দিলেই যে নিশ্চিত ক্যান্সার হয়ে গেছে তা কিন্তু নয়, অন্যান্য রোগেও এমন লক্ষণ আমরা পেয়ে থাকি। তাই বলে লক্ষণগুলোকে অবহেলা করারও কোনও সুযোগ নেই।

যে কোনও রোগ যত দ্রুত নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা শুরু করা যায়, তার তত ভাল পরিণতি আশা করা যায়। মুখ-দাঁতের বাৎসরিক চেকআপ না করানো, নিয়মিত সেলফ স্ক্রিনিং (মুখগহ্বরে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায় কিনা তা নিজে নিজে দেখা) না করা, মুখগহ্বরে সমস্যা দেখা দিলে রেজিস্টার্ড ডাক্তারকে না দেখিয়ে হরেক রকম চিকিৎসা আর টোটকা ব্যবহার করে সময় নষ্ট করা- এসব কারণে ক্যান্সার আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে!

ভয় পাবেন না, উপরিউক্ত কোনও উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে একজন ন্যুনতম বিডিএস ডিগ্রিধারী রেজিস্টার্ড ডেন্টাল সার্জনকে দেখিয়ে ফেলতে হবে। দ্রুত চিকিৎসা করলে সেরে ওঠার সম্ভাবনাও বাড়ে অনেকটাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 − six =