চোর
শ্যামল সরকার, গুড়িয়া হাটী, কোচবিহার ##
সোনুর লাগানো লংকাগাছটায় একটিমাত্র লংকা ফলেছে। ঘন সবুজ এতটুকু একটি শিশু লংকা একটি সাদা লঙ্কাফুলের গোড়ায়। বালক সোনুর বারম্বার জিজ্ঞাসা —- ‘আমি তো শুকনো লংকার বীজ লাগিয়েছিলাম, কাঁচা লংকা কেন হল মা?’ কাজে ব্যস্ত মা সমাপিকার গম্ভীর মুখ ছেয়ে গেল প্রীতিময় হাসিতে। বলল —-‘শুকনো লংকা যে তুমি খেতে পারবে না। খুব ঝাল হবে যে, তাই’। সোনুর খুব ভাল লাগল মায়ের কথা। ওর প্রতিদিন ওটা তুলবার ইচ্ছে —- ওটা খেতে হবে। ওটা খেলেই সোনু ঝট করে বড়ো হয়ে যাবে। মা বলে —-‘দাঁড়া, একটু বড়ো হতে দে বাবা’।
সোনু স্কুল থেকে ফিরেই প্রতিদিনের মতো আজও দেখতে গেল — কত বড়ো হল লংকাটি। সে অবাক। দ্যাখে —- গাছে লঙ্কাটি নেই। তার দু’গাল বেয়ে নামতে শুরু করেছে অশ্রুধারা। একটি লংকার জন্য দত্ত বাড়ীতে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলেছে বালক সোনু। বাবা সুপ্রকাশ স্বান্ত্বনা দিচ্ছে —- ‘সামান্য তো একটি লংকা’। সোনু কাঁদতে কাঁদতে বলল — ‘ওটি মূল্যবান বলেই না চুরি হল। মূল্যহীন কিছু কি কখনো চুরি হয়’ ? বাবা কথা ঘোরাতে বলল —- ‘বাগানে কি করছিস, এবার ঘরে আয়’। সোনুর সিরিয়াস উত্তর —- ‘ডিটেকটিভ বইতে পড়েছি, মূল্যবান কিছু পেলে চোর আবার ফিরে আসবেই, আরো কিছু নেবার ছিল কিনা দেখতে’।
একটু বাদেই একটি লাল ঠোঁট চঞ্চল টিয়ে উড়ে এল ওখানে। এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখল কাছে পিঠে কেউ আছে কিনা। তারপর এগিয়ে গেল সোনুর লংকা গাছের দিকে। এবার হাসি পেল সোনুর। কান্নাভেজা গালে একটুকরো রোদের মতো নির্মল হাসি। প্রশ্রয়ের।