দেবযানীর অভিশাপ

 (মহাভারতের  কাহিনী অবলম্বন)
বিশ্বজিৎ রায় ##

ধিরে ধিরে উঠিলো কচ্ : প্রাতকাল আসন্নে, 
পড়েনি রবির ছটা তখনও,

 আশ্রম প্রাঙ্গণে। 
কুটিরে শায়িত দেবযানী – শুক্রাচার্য কন্যা, 
সুখের ঘর গড়িবার লাগি, স্বপ্নে নিমগ্না।
” হয়েছে সময় “- ভাবিলো কচ্, যেতে হবে এইবার। 
দেখিলো দেবযানী- স্নেহময়ী প্রেমিকারে আরবার। 
কচ্ ধরিলো অভিমুখ দক্ষিণাচালে, 
শুনিতে পাইলো সেই পরিচিত স্বরে-

দেবযানী : ” হে আর্যে , কোথায় চলিলে ” ?

কচ্ : ” নিজ গৃহে। ফিরিবো এইবার”।

দেবযানী : ” আর আমি? “

কচ্ : “তুমি রবে আশ্রমে “।

দেবযানী : “আশ্রমে ! 
কথা দিয়েছিলে মোরে, নিবে নিজ ঘরে, 
দিয়ে পত্নীর মান-
ভুলিলে কেমনে তব বাক্য ? ভুলিলে কেমনে-
নারী যে চাই শুধু পত্নীর সম্মান। 
প্রেমের লাগি যবে ধরেছিনু হাত, 
কূলধর্ম করিলাম সব পরিহার, 
জড়াইনু পিতৃ-সংঘাতে –
সব বৃথা ? 
সব ভুলে গেলে! “

কচ্: ” ভুলি নাই প্রিয়ে, ভুলি নাই, 
ভুলিবো কেমনে। 
রেখেছিলে নিজ ঘরে, 
আপনো যতন করে –
সে তো ভুলিবার নয়। 
শিখিয়াছি আজি-অমরত্বের মৃতসঞ্জিবীনী বিদ্যা, 
শিখাইলো পুত্রসম স্নেহে, শুক্রাচার্য তব পিতা। 
ভুলিবো কেমন। 
আসিয়াছি যে পিতৃ-কর্তব্য পালনে। “

দেবযানী : ” নারীরে করিয়া ছলনা, 
কর্তব্য করিবে পালন! 
সে তো শুধু নিজেরে বঞ্চনা। 
কর্তব্যের লাগি ত্যাজিয়া সীতারে, 
সুখি কী হয়েছিল রাঘবে ? 
সে সম্ভব নহে। “

কচ্ : ” বৃহস্পতি পুত্র আমি, শুক্রাচার্য তব পিতা। 
ধর্ম, সমাজ, রীতি – 
সবই তো ভিন্ন মোদের, ঘর বাঁধিবার বাসনা- 
নয় সে কী  বৃথা। 
ধর্মের শৃঙ্খল কাটিবার করো না প্রয়াস, 
সে তো –
ক্লান্ত পথিকের তরে মায়াবিনী মরিচীকা। “

দেবযানী : ” ধর্ম মোদের গড়া, 
বিধাতার নয়। 
আজও পড়ে মনে, 
স্নেহের যতনে-
ফিরাইলো পিতা তব প্রাণ বারবার, 
ধর্মই যদি বাঁধা হতো আর্যে ,
বলো তো মরে –
পেতে কী ফিরে তব প্রাণ আরবার ? 
ধর্ম, সমাজ, রীতি সংসার জীবনে,
সাথর্ক শুধু হয় প্রেমের বাঁধনে। 
লোক লজ্জার তুমি করিছো যে ভয়-
সে তো ছলনামাএ, 
মনে রেখো তাই-
প্রেম যে অনন্ত, নাহি তার ক্ষয়।
শোনো তবে আজ, 
দেই অভিশাপ-
যে মূহুর্তে তুমি আশ্রম ত্যাজিবে, 
মৃতসঞ্জিবীনী বিদ্যা বিস্মৃত হইবে। “

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 − two =