নৃত্যকাঞ্চনের বাৎসরিক নৃত্যানুষ্ঠান, কথক নৃত্যে মাতলেন দর্শকরা

শুভজিৎ দাস 

এখনও যে সনাতন ভারতীয় নৃত্যের প্রতি মানুষের গভীর আগ্রহ রয়েছে তা বোঝা গেল নৃত্যকাঞ্চনের বাৎসরিক  নৃত্যানুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে। প্রতিভা দাসের পরিচালনায় ও প্রশিক্ষণে দীর্ঘ বছর ধরে শ্রীরামপুরের বুকে কথক নৃত্যের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে চলেছে নৃত্যকাঞ্চন। তার সুনাম ছড়িয়েছে অন্যত্রও। সেই সুনামের কারনেই গত ২ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে শ্রীরামপুর রবীন্দ্রভবনে দর্শক সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মত। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে নৃত্যকাঞ্চনের শিক্ষার্থীদের কথক নৃত্যের লাইভ প্রদর্শন মুগ্ধ করে রাখে দর্শকদের। তবলায়  জয়দেব মল্লিক, কন্ঠে বিশ্বজিৎ দাস  এবং সেতারে সঙ্গত করেন সন্দীপ নিয়োগী। বোল পড়ন্ত  পড়েন  প্রতিভা দাস।শিক্ষার্থীদের পর কথকের নানা ভঙ্গিময় উপস্থাপনায় দর্শকদের মন ভরিয়ে দেন প্রতিভা দাস।

 

 

 

 

 

 

 

এর পর পরিবেশিত হয় বেশ কয়েকটি নজরুল নৃত্য। অনুষ্ঠানের এই অংশটি সকলের সামনে অসাধারণ নৈপুণ্যে  তুলে ধরে সংস্থার কচিকাঁচারা। তারপর শুরু হয় বহু প্রতীক্ষিত রবীন্দ্র নৃত্যালেখ্য  সকাল সাঁজের রাগ-রাগিনী। গান ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ  জীবনের  সকল আনন্দের উৎস। তিনি বলেছিলেন ‘গান যখন সম্পূর্ণ জাগে মনের মধ্যে, তখন চিত্ত অমরাবতীতে গিয়ে পৌঁছয়।’  গান রচনার নেশায় যখন তাঁকে পেয়েছে সব ভুলে, তখন তিনি তাতেই ডুবে গেছেন। তাঁর চারটি রাগাশ্রয়ী গানের নৃত্য পরিবেশনাই ছিল নৃত্যকাঞ্চনের নিবেদনের ডালিতে। এর মধ্যে দুটি সকালের ও দুটি রাত্রিকালের রাগ।

 

 

 

 

 

 

‘এ কি সুগন্ধ হিল্লোল বহিল আজি প্রভাতে, জগত মাতিল তায়…’দিনের প্রথম প্রহরের ভাবনার এই গানটির আকুতি যেন আত্মানুসন্ধানের পথে যাত্রা।‘নীল দিগন্তে… ওই ফুলের আগুন লাগল’ ঋতুনাট্য বসন্তে এই গানটি  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্যবহার করেছেন। রে… গা… ধা… নি… কোমল ব্যবহারের ফলে আপাত দৃষ্টিতে ভৈরবী বলে মনে হলেও শুদ্ধ ‘গা’- এর ব্যবহার রয়েছে। তাই গানটি ভৈরবী থেকে বেড়িয়ে অনুভবে পরজ-বসন্ত রাগের ছায়ায় বর্তমান।‘প্রচণ্ড গর্জনে  আসিল এ কী দুর্দিন’…  গানটির  রাগ ভূপালি। রাত্রির প্রথম প্রহরের রাগ এটি, কল্যাণ ঠাঁটের। এই গানের বাণীটি একটি ঝড়ের পূর্বাভাস। ভিন্ন ভাবনায় গানটি বর্ষার হলেও পূজা পর্যায়ের, ব্রম্ভসংগীত।‘ আনন্দধারা বহিছে ভূবনে’… রবীন্দ্রনাথের গানে আমরা আনন্দ ধ্বনি জাগাও … অর্থাৎ তাঁর মন্ত্র ছিল সদা থাকো আনন্দে। সেই আনন্দরস আমাদের শান্ত করে স্নিগ্ধ করে। সবশেষে ‘ আগুনের পরশমণি’ রবীন্দ্রগানে মঞ্চে প্রার্থনার ভঙ্গীতে একযোগে সকলের উপস্থিতির মধ্যে দিয়ে এক অপরূপ আবহ তৈরি করে শেষ হয় সংস্থার বার্ষিক অনুষ্ঠান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × one =