বড়দিন হল খ্রিস্ট প্রেমীদের জন্য ত্যাগের উৎসব

বটু কৃষ্ণ হালদার ##

“নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান/বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান” এই মহান উক্তির মধ্যে দিয়ে লক্ষ লক্ষ দেশ প্রেমীদের আত্ম ত্যাগের মধ্যে দিয়ে ভারত বর্ষ বিশ্বের দরবারে সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের দেশ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।এই দেশের আগাগোড়া রক্তের বেড়া জাল দিয়ে ঘেরা।তবে আমরা এই চরম সত্য অনেকে মেনে নিতে পারি না।দেশ নায়কদের অপমান করা ব্যাক্তি রা ও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়।এর কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন উৎসব পালিত হয়।সেই সংস্কৃতির টানে বিদেশি পর্যটক রা আগত হন।ধর্মের টানে ভারতে এসে অনেকে স্থায়ী বসতি গেড়েছে।একদিকে যেমন ধর্ম পালন,সংস্কৃতি সমন্ধে জ্ঞান লাভ করা হয় তেমনি ব্যাবসা তে ও সমৃদ্ধি লাভ হয়।

ভারতে যেমন দুর্গাপূজা,কালীপূজা, গণেশ পূজা, ছোট পূজা, ঈদ মহরম আনন্দের সাথেই পালিত হয় ঠিক তেমনি পালন করা হয় আত্ম ত্যাগের দেবতা ঈশ্বরের পুত্র পবিত্র যীশুর জন্মদিন যা সমগ্র বিশ্বের কাছে দিন বড় দিন হিসাবে পরিচিত। যুগ যুগ ধরে এই উৎসব আমাদের ভারতবর্ষে পালিত হয়ে আসছে। প্রভু যীশু আমাদের পাপের কারণে প্রাণ ত্যাগ করেছিলেন।তাই এই উৎসব খিস্তি প্রেমীদের জন্য ত্যাগের উৎসব হিসাবেই পরিচিত।বড়দিন কি জন্য পালন করা হয় তা আমাদের একটু জেনে নেওয়া দরকার। প্রকৃতি চলে তার আপন খেয়ালে। তাকে উপেক্ষা করার মতো সাহস মানবসমাজের নেই। মানব সভ্যতা তারা যখন প্রকৃতি প্রতিকূলতার মধ্যে পড়েছে তখনই সেই সমস্যা সমাধানের উপায় নিজেই খুঁজে বার করেছেন। পাপে পরিপূর্ণ ও জর্জরিত মানবসভ্যতাকে তিনি যেমন সৃষ্টি করেছেন তেমনি তাকে ধ্বংস করেছেন। সেই ইতিহাস আমরা বহুবার পড়েছি। ঠিক তেমনি সত্য ও ন্যায় কখনো প্রধানত হয়নি মিথ্যার কাছে। সূর্যকে যেমন আড়াল করা যায় না তেমনি সত্য ও ন্যায় ধর্মের কখনোই মিথ্যার বেড়াজাল দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। এই পৃথিবীতে যখনই অধর্ম পাপ অরাজকতা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে ঠিক সেই সময়ে কোন না কোন ধর্মের প্রতীক ঈশ্বরের দূত এসে সেই পাপ থেকে অ_ধার্মিকদের মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছে। প্রভু যীশু হলেন তার জ্বলন্ত নিদর্শন।

খ্রিস্টীয় বাণী অনুযায়ী আমরা জানতে পারি ঈশ্বর যেমন ঝড় জল আলো বাতাস সৃষ্টি করেছিলেন ঠিক তেমনি তার আশ্চর্যতম সৃষ্টি হল আদম আর হবা।তাদের কে মানুষরূপে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। তাদের সৃষ্টি করার পর তিনি বলেছিলেন তোমরাই পৃথিবীর সমস্ত সুখ ঐশ্বর্য ভোগ করো কিন্তু একটি গাছের ফল খেওনা।সেই গাছের নাম হল সদ সদ জ্ঞান দায়ক বৃক্ষের ফল। কিন্তু তারা শয়তান সাপের প্রলোভনে পা দিয়ে, সেই গাছের ফল হবা নিজে খেলেন তার স্বামীকে ও খাওয়ালেন। এই কৃতকর্মের জন্য ঈশ্বর খুব রেগে গেলেন কারন তারা ঈশ্বরের বাক্য অমান্য করেছিলেন। ঈশ্বর রেগে গিয়ে তাদের অভিশাপ দেয় যে দশ মাস দশ দিন প্রসব যন্ত্রণা ভোগ করে এ পৃথিবীতে জীবের সৃষ্টি করবে। সেই বাগান থেকে তাদের তাড়িয়ে দিলেন। এরপর থেকে পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার ঘটতে থাকে। একের পর এক বংশ বিস্তার লাভ করতে করতে মানব সৃষ্টি হতে থাকে। মানুষ সৃষ্টি হতে থাকলো এর ফলে পৃথিবীতে পাপের ভাগ বাড়তে লাগল।মানুষ ঈশ্বরের বাক্য অমান্য করতে শুরু করলো। ঈশ্বর পরিস্থিতি বুঝে তিনি অনেক জ্ঞানী গুণীদের প্রবক্তাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। তারা পাপীদের উদ্দেশ্যে বারবার বলেছিল তোমরা পাপ করোনা মন ফেরাও। কিন্তু তারা কোন কথায় কর্ণপাত করলো না।পাপ, অরাজকতা য় যখন পৃথিবীতে পরিপূর্ণ হতে লাগল তখন মানুষ ক্রন্দন করতে লাগলো আমাদেরকে বাঁচাও ঈশ্বর আমাদেরকে বাঁচাও। তখন যোহন লিখিত সুসমাচারের ৩ অধায়ে লিখিত আছে:_ঈশ্বর পৃথিবীতে এমন প্রেম করলেন,যে তার এক জাত ও সন্তানকে দান করলেন,যে কেউ তাকে বিশ্বাস করে,কেউ যাতে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন লাভ করে। এরপর ইসতির মনস্থির করলেন তার সন্তানকে পৃথিবীতে পাঠাবেন।কিন্তু তার সন্তানকে যে পাঠাবেন তার জন্য তিনি কোনো পবিত্র গর্ভ পেলেন না। অবশেষে খোঁজ পেলেন মরিয়মের। কিন্তু মরিয়ম ছিলেন অবিবাহিত। যোষেফের বাগদত্তা।তিনি মরিয়মের কাছে স্বর্গের দুতের দ্বারা খবর পাঠালেন।ঈশ্বরের দুতের সেই কথা শুনে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। তখনই ঈশ্বরের বাণী মরিয়মের কানে ধ্বনিত হলো তুমি ভয় পেয়ো না। এই প্রথম পৃথিবীতে কোন পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়া মরিয়মের গর্ভে প্রভু যীশুর স্থান হল। এরপর যখন তারা বেথলেহেমে নাম লেখাতে গেলেন। তখন মরিয়ামের প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল। বেথলেহেমে এত বেশি লোকের সমাগম হয়েছিল সেখানে তারা কোন জায়গা খুঁজে পেল না।অবশেষে এক আস্তাবলে  যীশুর জন্ম হলো। যীশুর যখন জন্ম হলো তখন মেষপালক রাখাল রা মাঠে ছিলেন। তখন ঈশ্বরের দূত তাদের খবর দিলেন, যে তোমাদের মহা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি,দাউদ নগরে এক রাজার জন্ম হয়েছে। তখন রাখালরা দৌড়ে গিয়ে দাউদ নগরে সেই রাজা কে দেখতে গেলেন। ঠিক সেই সময় একটা তারা উদিত হয়েছিল। তিনজন জ্ঞানী সেই তারা কে দেখে, গণনা করে বলেছিলেন এক রাজার জন্ম হয়েছে। সেই তারা কে অনুসরণ করে করে পণ্ডিতরা হেরোদ রাজার প্রাসাদে খবর নিতে গেলেন, পণ্ডিতরা বললেন আপনার প্রাসাদে রাজা জন্ম নিয়েছে আমরা তাকে প্রণাম জানাতে এলাম।পণ্ডিতদের সেই কথা শুনে হেরোদ রাজা অবাক হয়ে গেলেন।বললেন রাজার দেশে রাজা জন্ম।এই ঘটনা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাদেরকে বললেন আপনারা খোঁজ নিন যদি সেই রাজার দেখা পান আমাকে খবর দেবেন। তখন পণ্ডিতরা পুনরায় সেই তারার অনুসরণ করে আস্তাবলে পৌঁছালেন।তাকে প্রণাম করলেন আর সোনা,কুন্দ্রু,গন্ধ রস সহ দামি জিনিস উপহার দেন। আর রাজা হেরোদ  দূত পাঠিয়ে দাউদ নগরের সমস্ত শিশুদের মেরে ফেলার আদেশ দিলেন। এই সংবাদ ছড়িয়ে যেতেই প্রভু যীশুর মাতা ও পিতা সেখান থেকে পালিয়ে যান। এরপর পর প্রায় ৩০ বছর তিনি তার পিতা-মাতার সঙ্গে ছিলেন।পিতা মাতার সঙ্গে থাকাকালীন প্রভু যীশু তার অলৌকিক আশ্চর্য কাজ আরম্ভ।অন্ধকে চোখ দিলেন,দুর্বলকে হাঁটার শক্তি দিলেন,কবর দিয়ে তুলে মৃত পচা গলা দেহতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেন,ভূত ছাড়ালেন। তার অলৌকিক কার্যাবলীর খবর চারিদিকে রটে যায়,সবাই যীশু যীশু বলে গৌরবান্বিত করতে লাগলো।তার এই উত্থান ভালোভাবে মেনে নেননি তৎকালীন সমাজের বিদ্বজনরা।যারা তৎকালীন সময়ে ধর্মের নামে ব্যাবসা শুরু করেছিল তারা ভয় পেয়ে গেল যীশ কার্যকলাপ দেখেস। অবশেষে সমাজের নিয়ম অবমাননার দায়ে তার বিচার চাইলেন পিলাতের কাছে। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হল বিচারের জন্য।কিন্তু পিলাত তার কোন অন্যায় ধরতে পারলেন না।। কিন্তু সমাজের নিয়ম বাহকরা চিৎকার করে বলল যীশুর বিচার চাই তাকে ক্রুশে দাও,ক্রুশে দাও।পিলাত চিৎকার শুনে জনগণের পক্ষে গেলেন। তবুও তিনি বলেছিলেন এই উপবাসের মাসে আমরা একজনের শাস্তি মুকুব করতে পারি। কিন্তু দুষ্কৃতী বারাব্বাস কে মুক্তি দিলেও যীশুকে মুক্তি দেয়নি।তাকে ক্রুশে দেবার অনুমতি দিলেন। এরপর তারা যীশুকে নিয়ে গেলেন ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য।মাথায় কাঁটার মুকুট পরানো হোল।৩৯ বার চাবুক মারা হলো। সারারাত নির্যাতন করা হলো।সারা শরীর রক্তাক্ত হয়ে গেলো।এর পর তাকে দিয়ে মাইল এর পর মাইল ক্রুশ বহন আনা হোল।নিজের বয়ে আনা ক্রুশে তাকে হত্যা করানো হল।।ক্রুশে থাকা কালীন তিনি অপরাধীদের সম্পর্কে বলেছেন:_হে পিতা ঈশ্বর ওদেরকে ক্ষমা করো ওরা নিজেরাই জানেনা ওরা কি করছে।তিনি ক্ষমার বাণী শুনিয়েছেন।ত্যাগের বাণী শুনিয়েছেন। অপরাধীর অপরাধ ক্ষমার কথা বলেছেন”।অথচ বর্তমান সময়ে ধর্ম কে হাতিয়ার করে চলছে নিধন যোগ্য।

ধর্ম হলো আত্মার আকুতি।ধর্ম কথার প্রকৃত অর্থ হলো নিজের ধর্ম কে অক্ষরে অক্ষরে পালন ও রক্ষা করা আর অন্য ধর্মর প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন। কিন্তু বর্তমান সময় আমরা দেখতে পাচ্ছি ধর্মের নামে একশ্রেণীর ধর্মান্ধরা রক্তপাত ঘটিয়ে চলেছে।এটা সত্যি কি কোন ধর্মের বাণী হতে পারে?কার ধর্ম বড় তা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছেসিরিয়া,আফগানিস্তান,পাকিস্তান,চিন,ফ্রান্স,সহ বাংলাদেশ তার জীবন্ত নিদর্শন। আমরা কম-বেশি অনেকেই ধর্মের বাণী শুনি বলি ধর্ম স্থানে যাই, কিন্তু প্রকৃত মানুষ কয়জন হয়ে উঠেছি?মানুষের অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য বারবার মানবসভ্যতা প্রশ্নচিহ্নের মুখে,আর তার জন্য দায়ী কারা সেই প্রশ্ন সবার সামনে রেখে যাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 8 =