বড়দিনের উপহার
দীপ্তি মৈত্র, রামরাজাতলা, হাওড়া
মায়ের সঙ্গে নাড়ির বাঁধন থাকলেও জন্মের পর মায়ের স্নেহের পরশহারা ছোট্ট পাঁচ বছরের কন্যা তিতলি। বাবার স্নেহ ভালোবাসাই তার সম্বল মাত্র। নতুন করে আবার বিয়ে করার সাহস পাননি পরমেশ্বর বাবু। একরাশ ভয় মনে এসে জমাট বাঁধে, যদি তিতলির ‘নতুন মা’ তিতলিকে না ভালোবাসে! না! না! তিতলিকে কেউ অবহেলা করবে এ কথা ভাবলেই গা শিউরে ওঠে পরমেশ্বর বাবুর। শুধু অফিস যাবার সময় পাশের বাড়ির ঐন্দ্রিলা দেবীর কাছে তিতলিকে রেখে যান তিনি। ঐন্দ্রিলা দেবীরও ওই কয়েক ঘন্টা সময় তিতলিকে নিয়ে খুব ভালোই কাটে। অপূর্বকে ভালোবেসে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন ঐন্দ্রিলা দেবী। কিন্তু বিধাতার সুতোর টানে অপূর্বের ফ্রেমবন্দী ছবি ফুলের মালা, ধূপের ধোঁয়ায় সেজে থাকে আজ। কোন সন্তানও লাভ করেন নি তিনি। তাই এক রকমের অপেক্ষাই করে থাকেন তিতলিকে কাছে পাওয়ার। ইতিমধ্যে এগিয়ে আসে পরমেশ্বর বাবুর সান্তাক্লজ সাজার দিন। আগামীকাল ২৫শে ডিসেম্বর। তিতলিকে ঘুম পাড়ানোর পর তার মাথার কাছে ভোর রাতের দিকে রাখলেন চকলেট, চিপ্স ভর্তি গিফ্টের প্যাকেট। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর তিতলির চোখে পড়ে সেই প্যাকেটটা। মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে বলল-“বাবা, সান্তা দাদুর দেওয়া উপহার, এই দেখো।” পরমেশ্বর বাবু কিছু না জানার ভান করে সোহাগ স্নেহে বললেন-“ও মা, কই দেখি, সান্তা আমার মাকে কি দিয়েছে?” তিতলি হঠাৎ বলে উঠল-“আচ্ছা বাবা, সান্তা দাদু কাউকে মা গিফট করে না বাবা?” পরমেশ্বর বাবু চুপ করে গেলেন। চোখের কোণ থেকে গড়িয়ে আসা এক ফোঁটা জল নিপুণ ভাবে মুছে নেন। মনে মনে ভাবেন “মা গিফট দেওয়া তো সোজা কাজ নয় রে মা” তবুও আশার আলো ঐন্দ্রিলা দেবী। ভাবলেন, কথাটা একবার বলেই দেখবেন তাঁকে।