ভোরের স্বপ্ন
চন্দন মিত্র, ডায়মন্ড হারবার
##
অনুমামা মাথার কাছে দাঁড়িয়ে বললেন — “মনু ওঠ। আমি চল্লাম। মামিমাকে, পুঁটিকে আর পটলাকে দেখিস।” মনোজের ঘুম ভেঙে গেল। ফুল ভল্যুমে ফ্যান চলছে। অথচ বিছানা ঘামে ভিজে সপসপে। আলো জ্বেলে ঘড়িতে দেখল চারটে দশ। ভোর। ভোরের স্বপ্ন। আলো জ্বালতেই সুমতিও উঠে পড়ে। দুবছরের মেয়েটাও কেঁদে ওঠে। সুমতি ঘুমজাড়ানো গলায় বলে — “কী হল গো! উঠে বসলে কেন?”
মনোজ ভাঙাগলায় ফিসফিস করে বলে — “অনুমামা নেই! এইমাত্র স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলে গেলেন। জানো তো ভোরের স্বপ্ন!” সুমতি সম্মতিসূচক মাথা নাড়ে।
— ” সুমতি! মাকে কি খবরটা দেব?”
মাকে খবরটা দেওয়া হল সকাল ছটায়। অনেকদিন পর এবাড়িতে রোদনধ্বনি শোনা গেল। বাবা বছর সাতেক আগে গোয়েন্দা দফতর থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু শরীর-মনে এখনও বাঘের মতো ক্ষিপ্র। তিনি বললেন — “থামো সুশীলা! আমি একবার ফোন করে দেখি।”
—“আমি তো ভোর থেকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছি। সুইচ অফ। আর মামিমার ফোনটা তো আমি এনেছি সারানোর জন্য।” মনোজ আর কথা বলতে পারে না। কান্নায় ভেঙে পড়ে।
—- ” না। সুইচ সত্যিই অফ।”
কান্নার তরঙ্গ আর রোধ করা গেল না ।
মা সুর করে বলতে লাগলেন — “এমনই হয়! যাওয়ার সময় এভাবেই প্রিয়জনকে জানিয়ে যায় মানুষ। আর মনুকে কী অনু কম ভালোবাসত! ভাগ্না অন্ত প্রাণ ছিল অনুর! আহারে! ভোরের স্বপ্ন কখনো মিথ্যা হয় না।”
বেরনোর তোড়জোড় শুরু হয়। মনোজ বাইক নিয়ে একা এখনি বেরিয়ে যাবে। বাকিরা যাবে পাশের বাড়ির তপনের অটো রিজার্ভ করে। বেশি দূর নয় পনেরো-ষোল কিলোমিটার। বাবা হঠাৎ চিৎকার সবাইকে থামিয়ে দেন —- “থামো থামো! রিং হচ্ছে!
হ্যাঁ কে অনু! পলাশদা বলছি। ফোনের সুইচ অফ ছিল কেন ? ও বন্ধ করে রাত্রে চার্জে দিয়েছিলি। না, না, কিছু হয়নি। ভাবলাম আজ রোববার সপরিবারে তোদের ওখানে গেলে কেমন হয়!