শ্রাবণের দেশে

রাজীব সরকার ##

…তারপর একদিন শ্রাবণ এলো, শুকনো ডোবাটাও ভরল। 
কাজল কালো মেয়েটা নদীতে জল আনতে গিয়ে ভিজল।
 নদী পাড়ে রাখাল ছেলেটা বৃষ্টির জল ছিটিয়ে ভেজাল তাঁকে।
তাঁর আঁচল ভরিয়ে দিল শাপলা,শালুক, কেয়া আর দোপাটিতে।
বৃষ্টিভেজা শরীরে কাদাজল পেরিয়ে ছেলেটা আর মেয়েটা ঘরে ফিরল।
পুকুরের জল উপচে আলপথ বেয়ে তখন মাছেরাও ঢুকে পড়েছে ধানজমিতে।
মাঠের ধান আর পুকুরের মাছকে এভাবে যে কতবার মিলিয়ে দিয়েছে শ্রাবণ।
বৃষ্টিভেজা দুপুরে স্কুল ছুটির আনন্দে কচুপাতা মাথায় নিয়ে ছুটে চলেছে ছেলেটা।
ভেজা শৈশবের পথজুড়ে তখন অনাবিল মুক্তির স্বাদ।
বাঁশবনে লুকিয়ে থাকা বুড়ো ব্যাঙটাও সেই স্বাদ পেয়েছে।
একটানা তাই হয়তো ডেকেই চলেছে
জামবনে দস্যি ছেলেটা পাখির বাসা আগলে বসে রয়েছে
শুধু পাখির বাচ্চাদের ভিজতে দেবে না বলে।
 সন্ধে নামতেই কেরোসিনের আলোয় নামতা পড়ার শব্দ।
খড়ের চালা ভেদ করে তখনও গায়ে আসছে দু’এক ফোঁটা
বাইরে আলো জ্বালিয়ে জোনাকিরাও কিছু খুঁজেছিল সারারাত…..
খুঁজে পায়নি হয়তো….
সেই বার শ্রাবণ চলে যাওয়ার পর তাকেও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি
ঠিক যেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি রাখাল ছেলে আর কাজল কালো মেয়েটিকে।
হারিয়ে গিয়েছে শাপলা,শালুক, কচুবন, আর কুনো ব্যাঙের গল্পটাও…
আমরা যেখানে থাকি 
তার চেয়ে শ্রাবণের দেশ অনেক দূরে
সে দেশে মনখারাপ মেঘ হয়ে আসে
সেখানে হাসনুহানা আর কদমফুল ফোটে আজও..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − 6 =