অন্তর্দহন
শান্তনু ভট্টাচার্য, দুর্গাপুর
##
সুজাতার আজকাল আর মন খারাপের জন্য কোনো কারণ লাগেনা। ডিভোর্সের পর সে ভাড়া বাড়িতে একাই থাকে। বাড়ির অমতে বিয়ে করায় মা বাবার কাছে আর ফিরে যায়নি। অনেক কষ্টে এখন সে একটা চাকরি জোগাড় করেছে। অফিসে কাজের প্রচুর চাপ। সারাদিন ব্যস্ত থাকার পর সন্ধ্যা বেলায় মাঝে মাঝে বুকের এককোণে সে একটা চিনচিনে ব্যথার অনুভব খুঁজে পায়।বুকের মধ্যে তাঁর এক শূন্যতা বিরাজ করে ।
সবকিছুই আজ মুখে অরুচিকর লাগে সুজাতার। কখনও অফিস থেকে ফেরার পথে হোটেল থেকে খাবার নিয়ে আসে। মাঝে মধ্যে এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে যে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। ছুটির দিনে জানলার পাশে মন মরা হয়ে আকাশের দিকে নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সর্বদা মনের মধ্যে একটাই ভাবনা ঘোরা ফেরা করে পৃথিবীতে সে সত্যি খুব একা। মাঝে মাঝে মৃত্যুর চিন্তা করে।কিন্তু মরতে ভয় করে। মাথায় অজস্র চিন্তা ঘুরপাক খায়। মাঝে মধ্যে রাত জেগে লেখা লেখি করে। এই একটি মাত্র শখই এখনও পর্যন্ত তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে এ পৃথিবীতে। লেখার মধ্যে ডুবে গেলে সারারাত জেগে থেকে ভোররাতে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে উঠে আয়নায় তাকিয়ে মাঝেমাঝে নিজেকে চিনতে পারেনা। চোখের নিচে কালি পড়ে ধীরে ধীরে।
রাগ উঠলে সে কাকে যে কি বলে নিজেও ঠিক জানেনা। ভাল কথা বললেও রেগে ওঠে মন্দ বললেও রেগে ওঠে। একা থাকতে থাকতে আজকাল আর তাঁর কাজেও মন বসেনা। কোনো কথা মনে থাকে না। ধৈর্য হারিয়ে খুব সহজেই ভেঙ্গে পড়ে। পুরনো কথা মনে পড়লে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে অনর্গল। একটা কথা সে কিছুতেই বুঝতে পারে না ভুলটা সত্যিই তার, না অনির্বানের। এই একটি ভাবনায় তাকে একটা আজ একটা বছর তাকে শান্তি দেয়নি।
কত কথা জমে থাকে বুকে তবু, কাউকে বলতে পারে না সুজাতা। বলার মত একটাও মানুষ নেই তার পাশে। নিজের বলতে যারা ছিল সবার ওপর এখন শুধু তার অভিমান। মাঝে মাঝে তার নিজেকে ভীষণ অপরাধী বলে মনে হয়। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। আবার কখনও ভাবে সে প্রাণ দিয়ে অনির্বানকে ভালোবেসেছিলো। তার সাথেই বাকি জীবনটা সুখে কাটাতে চেয়েছিল। কিন্তু বিধাতার এ এক নিষ্ঠুর পরিহাস। তবু সে এত দুঃখের মাঝেও শুধু নিজের জন্যই বেঁচে থাকতে চায়। এখন শুধু তার প্রতীক্ষা একমুঠো সোনালী রোদ্দুরের।