অষ্টম মহাদেশ জিলান্ডিয়া আসলে কি?
জিল্যান্ডিয়া একটি নিমজ্জিত মহাদেশীয় ভূখণ্ড। দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে এর অবস্থান। ১৯৬০ সালে তেলের খনি অনুসন্ধানের সময় ‘জিল্যান্ডিয়া’র মহাদেশীয় অস্তিত্ব বিষয়ে প্রথমবারের মতো নিশ্চিত হন বিজ্ঞানীরা। নিউজিল্যান্ড রাষ্ট্র এই মহাদেশের একমাত্র দৃশ্যমান পর্বত চূড়া। বর্তমানে সাতটি মহাদেশের বাইরে জিল্যান্ডিয়াকে অষ্টম মহাদেশ হিসেবে ঘোষণার জোরালো দাবি জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। স্বীকৃতি পেলে জিল্যান্ডিয়া হবে পৃথিবীর অষ্টম এবং সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম মহাদেশ।
নতুন এই বিস্তৃত স্থলভাগটি ডুবন্ত অবস্থায় আছে দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের উপরিভাগ থেকে সর্বোচ্চ দুই কিলোমিটার গভীরে। মহাসাগরের গড় গভীরতা ছয় কিলোমিটার। নিউজিল্যান্ডসহ কয়েকটি দ্বীপ এই মহাদেশের ছোট্ট কয়েকটি ভূখণ্ড যা কেবলমাত্র জলের ওপরে রয়েছে। ওই মহাদেশের মাত্র পাঁচ শতাংশ অংশ জলের উপরে দৃশ্যমান। বাকি ৯৫ শতাংশই ডুবন্ত অবস্থায় রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই ‘মহাদেশ’টির নাম দিয়েছেন জিল্যান্ডিয়া। আকারে এটি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সমান।
বিজ্ঞানীদের ভাষ্যমতে, নিউজিল্যান্ড আসলে এই মহাদেশেরই জলের উপরে জেগে থাকা অংশ। বলা যায় এই ডুবন্ত মহাদেশের পর্বতচূড়া। জিওলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকায় প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা বলেন, জিল্যান্ডিয়ার আয়তন ৫০ লাখ বর্গকিলোমিটার, যা পার্শ্ববর্তী অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের সমান। মহাদেশের স্বীকৃতি পেতে যা যা দরকার, জিল্যান্ডিয়া তার সব কটিই পূরণ করেছে বলেও দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। এখন তারা চেষ্টা করছেন নব আবিষ্কৃত তলিয়ে যাওয়া ভূখণ্ডের জন্য মহাদেশের স্বীকৃতি আদায়ের।
প্রায় ৩৭৫ বছর ধরে এই মহাদেশ ডুবন্ত অবস্থায় রয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ২০১৭ সালে ভূতত্ত্ববিদেরা জিল্যান্ডিয়া আবিষ্কার করেন। তারপর আরও ছ’বছর কেটে গেছে। অবশেষে তলিয়ে থাকা জিল্যান্ডিয়ার মানচিত্রও আঁকতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৮ কোটি ৩০ লক্ষ বছর আগে এই মহাদেশ গঠিত হয়েছিল। তবে এই গঠন প্রক্রিয়া আরও প্রায় ১০ কোটি বছর আগে শুরু হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রায় আড়াই কোটি বছর আগে এই মহাদেশ জলের উপরে দৃশ্যমান ছিল। এর পর এটি তলিয়ে যায়। এই মহাদেশের অস্তিত্ব প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় ২০০২ সালে। আর এর পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে।