উপকারী বাঁধাকপি
দোরগোড়ায় শীত। শীত কাল শাক সবজির ভরা মরসুম। এই সময়ে সব চেয়ে বেশী জাতের শাক সবজি পাওয়া যায়। শাক সবজি আমাদের দেহ গঠনে ও দেহের ক্ষতি পূরণে সবচেয়ে বেশী উপকারী। শীতে যে সবজিগুলি প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায় তার মধ্যে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য হল বাঁধাকপি। কম বেশী সকলেই বাঁধা কপি খেতে পছন্দ করেন। নানা ভাবে খাওয়া যায় এই সবজিটি।
প্রতি ১০০ গ্রাম বাঁধাকপিতে শক্তি ২৪ কিলো ক্যালরি, লিপিড ০.১০ গ্রাম, সোডিয়াম ১৮ মিঃ গ্রাম, পটাশিয়াম ১৭০ মিঃ গ্রাম, শর্করা ৬ গ্রাম, ফাইবার ২.৫০ গ্রাম, চিনি ৩.২০ গ্রাম, প্রোটিন ১.৩০ গ্রাম, ভিটামিন এ ৯৮ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন সি ৩৬.৬০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪০ মিঃ গ্রাম, লোহা ০.৫০ মিঃ গ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১২ মিঃ গ্রাম রয়েছে।
১. ওজন কমাতে: বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য আঁশ রয়েছে যা কোন ক্যালরি ছাড়াই পেট ভরাতে সাহায্য করে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
২. ত্বকের সুরক্ষায়: বাঁধাকপির প্রতিটি স্তর যেন আমাদের চামড়ার মত শরীরকে ঢেকে রাখে। বাঁধা কপিতে থাকা উপাদান আমাদের শরীর ও ত্বককে প্রদাহের হাত থেকে রক্ষা করে। আমাদের ত্বককে কোমল ও মসৃন করে। বেগুনি ও সবুজ দুই ধরনের বাঁধা কপি সালফার সমৃদ্ধ। এই সবজিতে থাকা সালফার ত্বকের কোষে জমে থাকা বর্জ্যগুলো বের করে দেয়।
৩. স্তনের সুরক্ষায়: বাঁধাকপিতে থাকা বিভিন্ন উপাদান মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে এবং স্তন টিউমার প্রতিরোধ করে। বাঁধা কপি দুগ্ধদানরত মহিলাদের স্তন শক্ত হয়ে যাওয়া বা দলা হয়ে যাওয়া ও স্তনের ব্যথা দুর করে।
৪. চোখ ভাল রাখতে: বাঁধা কপিতে থাকা ভিটামিন এ চোখ ভাল রাখতে অত্যন্ত কার্যকর।
৫. ক্যান্সার প্রতিরোধ: বাঁধাকপিতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীর থেকে ফ্রি র্যাডিকেল দুর করে শরীরকে ক্যান্সার মুক্ত রাখে।
৬. শরীরে জমে থাকা বিষ অপসারনে: বাঁধাকপিতে থাকা উপাদান লিভারকে সুরক্ষা দান করে। শরীরে জমে থাকা টক্সিন বের করে দেয়। পাতা কপিতে ৬৭ প্রকার গ্লুকোসিনলেট রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৭. শক্তি বৃদ্ধি: বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমান আয়রন আছে। যা শরীরের রক্ত তৈরীতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রন এই বাঁধা কপিতেই পাওয়া যায়। শরীরে পরিমাণ মত আয়রন না থাকলে ক্লান্তি অবসাদ, রক্তাল্পতা ও মস্তিস্কের সমস্যা দেখা দেয়।
৮. হাড় ভাল রাখতে: বাঁধাকপিতে থাকা উপাদান হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দুর করে। বাঁধাকপিতে থাকা ভিটামিন হাড়কে মজবুত করে। ফলে বার্ধক্য জনিত হাড়ের সমস্যার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
৯. বুদ্ধি: বাঁধাকপিতে থাকা ভিটামিন মস্তিস্কের শক্তি বৃদ্ধি ঘটায়। একই সাথে নার্ভের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। নিয়মিত বাঁধা কপি খেলে বৃদ্ধ বয়সে অ্যালজেইমারস সহ বিভিন্ন মস্তিস্কের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
১০. ডায়াবেটিস: বাঁধাকপি খেলে আস্তে আস্তে রক্তের শর্করার মাত্র স্বাভাবিক লেভেলে চলে আসে। এর উপাদান সমূহ ডায়াবেটিস রোগকে নিয়স্ত্রণে রাখতে ভূমিকা পালন করে। পেটের বিভিন্ন রোগেও বাঁধাকপি কাজ করে।
১১. হজম শক্তি বাড়াতে: বাঁধাকপিতে থাকা খাদ্য আঁশ হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে। বাঁধা কপির রস পেপটিক আলসার ভাল করে। বুক জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা দুর করে।
১২. চুল পড়া রোধ: উজ্জল চুলের জন্য বাঁধাকপি খুব ভাল সবজি। বাঁধাকপি খেলে চুল পড়া বন্ধ হয়। নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
১৩. আলসার নিরাময়: বাঁধাকপি আলসার নিরাময়ে সাহায্য করে। গবেষকদের মতে, বাঁধাকপির রস আলসার নিরাময়ে সবচেয়ে উত্তম ভেষজ।
১৪. মাথার যন্ত্রণা: বাঁধা কপির পাতা পাতা ছিঁড়ে নিয়ে কাপড়ে রেখে কপালে বেঁধে দিলে কিছু সময় পরই মাথার যন্ত্রণা চলে যায়। এমনটা না করতে চাইলে বাঁধা কপি নিয়ে ২৫-৫০ মিঃলিঃ জুস তৈরী করে পান করতে পারেন।
১৫. কিডনী: কিডনীর সমস্যা প্রতিরোধে বাঁধাকপি উপকারী। যাদের কিডনীর সমস্যার কারনে ডায়ালাইসিস করিয়ে থাকেন তাদের জন্য কাঁচা বাঁধা কপি খাওয়া উত্তম।
বুঝতেই পারছেন বাঁধাকপি আমাদের কতখানি উপকারী। যারা এখনও বাঁধাকপি খেতে ভালবাসেন না বা খেতে চান না, তারাও এবার থেকে এই সবজি খাওয়াটা অভ্যাস করে ফেলুন।