ওরা কথা বলে

   চিত্রা দাশগুপ্ত, হিউস্টন #

ছোট বালা থেকে আমি বেশ অনেকের মাঝে হাসি খুশি পরিবেশে বড়ো হয়েছি। বাড়িতে আমরা ছিলাম তিন বোন ও এক ভাই আর বাবা মা।আমরা আলাদা থাকলেও মামা বাড়ি,জ্যাঠা,কাকু,পিসির বাড়ি আমরা প্রায় যেতাম। আমাদের বাড়িতে ও আত্মীয় স্বজনের আসা যাওয়া ,নানা রকম অনুষ্ঠান কিছু না কিছু লেগেই থাকত। তাছাড়া ছিল বাবার অফিস কোলিগ পাড়া প্রতিবেশী ,সহ পাঠী বন্ধু মোট কথা জমজমাট পরিবেশ ।

বড়ো হওয়ার সাথে সাথে পড়ার শোনা ছাড়াও ছিল ব্যায়াম ব্রতচারী খেলাধুলা আর পাঁচটা বাঙ্গালী মেয়ের মত একটু আধটু নাচ গান, নানা ধরণের অন্যান্য একটিভিটি ।

খুব অল্প বয়েসে আমার বাবা মা আমার বিয়ে দিয়েছিলেন ।গোল্লা ছুট ,বুড়ি বাসন্তী ,কাবাডি খেলা বন্ধ হল কিন্তু বিয়ের পর ও বই খাতা বগল দাবা করে স্কুল কলেজ করেছি ,তাই আমার জীবনটা হয়ে উঠেছিল আরো ব্যস্ত আরো কাজে কর্মে ঠাসা ।রাতে ঘুমনো  ছাড়া এক মুহূর্ত আমি একা বা ফাঁকা বোধ করিনি কোন দিন। 

সময়ের থেমে থাকে না ,সময়ের সাথে তাল রেখে আমি চলেছি এগিয়ে।  তখন আমি কলেজে পাঠরতা ,আমর কোলে এলো আমাদের প্রথম কন্যা সন্তান , আমি মা হলাম ! সেই ফুটফুটে ছোট্ট পুতুলটার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি সব ভুলে যেতাম ,মনে হত ওকে নিয়ে সারা দিন খেলা করি !

সত্যি কারের রান্না বাটি খেলা,জীবন্ত পুতুল নিয়ে খেলার সাথে পড়াশোনা …

এখন গল্পের ছলে লিখতে মন্দ লাগছে না ,কিন্তু ঐ সময়টা যে কী করে কি করেছি তা এখন ভাবতে পারি না ।

তবে ঐ সময় আমার মা ও বাবার কাছে প্রচুর সাহায্য পেয়েছি ,স্কুল থেকে ফিরে আমার ছোট ছোট ভাই বোনরা ও খুব মেয়েটাকে নিয়ে সময় কাটাত, খেলা করত ।আর আমার স্বামী ভদ্র লোকটি ও আমাকে তার সাধ্য মত অনেক সাহায্য করতেন যদি ও ঘরের কাজ কর্ম কিছুই তিনি করতে পারতেন না ।

আমার সময়টা যেন দুরন্ত ঘোড়ার মত ছুটেছিল তখন।  

আমার পড়া শেষ হল ।ইতিমধ্যে আমার কোলে একে একে এল আরো দুটি সন্তান ।পদন্নতির সাথে সাথে আমাদের দুজনের দায়িত্ব ও অনেক বেড়ে গেল, ওঁর বাড়ল অফিসে আর আমার ঘরে ।

দেখতে দেখতে বাচ্চারা বড়ো হতে লাগল। তাদের লেখা পড়া নানা রকম “ক্লাস”, নানা প্রতিযোগিতা ,‍অনুষ্ঠান লেগেই থাকত …ওদের নিয়ে দৌড় ঝাপ করতে করতে কখন  যেন ওরা বড়ো হয়ে গেলো, যে যার জীবনের পথের দিকে এগিয়ে গেল ! আমরা দুজনে তখন প্রবীণ প্রবীণা । সব দায়িত্ব কর্তব্য শেষ করে ঝারা হাত পা ,আমাদের মত আরো কিছু “ঝারা হাত পা” বন্ধুরা মিলে মুক্ত বিহঙ্গের মত কিছু দিন দল বেঁধে সময়ের স্রতে ভেসে বেরালাম আনন্দের সাগরে।  কি সুখের ছিল সেই দিনগুলো,হাসি,গল্প ,গানে …

জীবনে কিছুই স্থায়ী নয় আর সুখের দিনগুলো যেন বড়ো তাড়াতাড়ি চলে যায়।আচমকা আঁধার নেমে আসে।আমার জীবনে ও নেমে এলো এক কালো মেঘের ছায়া ,প্রায় অ‍র্দ্ধ শতকের জীবন সাথীকে হারালাম ….আমি একা হয়েগেলাম….কথা বলার লোক পাশে নেই, ঝগড়া করার জন্য ও কেউ নেই …কী ভাবে বাঁচব!

একটু সময় লাগল, কিন্তু বাস্তবকে মেনে নিলাম ,নিজেকে বোঝালাম “সত্যেরে লও সহজে”। মনকে শক্ত করে নিজেকে গুছিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।

‍আমার বিবশ অস্থির চঞ্চল মনটাকে আবার নিয়ন্ত্রনে ফিরিয়ে আনার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করছি ,কিছুই ভালোলাগে না, কি করি …আমাকে অনেকেই সান্ত্বনা দিতে আসত। নানা রকম পরামর্শ দিত, যেমন গান কর, গীতা পড়, চুটিয়ে টিভি দেখ, বেড়িয়ে বেড়াও, সেলাই ফোরাই কর ….চুপ করে সব শুনতাম, পরখ করে ও দেখেছি কোনটাই বেশিক্ষণ ভালো লাগত না, আর আমার  কোনটাই প্র্যাকটিকাল বলে মনে হত না। 

আমার বোনের ছেলে আমার খুবি স্নেহভাজন নিজে যন্ত্র পাতি কল কবজা নিয়ে কাজ করে মানে পাক্কা ইঞ্জিনিয়ার, ও দেখা করতে এসে আমাকে বলল বড়মা তুমি তোমার খাতা কলম নিয়ে বসো, লেখা লিখি শুরু কর, দেখবে ভাল লাগবে, সময় কেটে যাবে ।

আমি একটু হেসে বলেছিলাম কি লিখব, কিছু মনে আসেনা আজকাল। 

আমাকে বলেছিল যা মনে আসে তাই লেখ ,তোমার কথা লেখ ,তোমাদের কথা লেখ,তোমার ছোটবেলা,তোমার নানা অভিজ্ঞতা ….দেখ শুরু কর ভালোলাগবে! জড়িয়ে ধরে বলল ,”আমাকে কথা দাও তুমি মন খারাপ করে একা বসে থাকবে না ,আবার লিখবে” । আমি ‍অগত্যা কথা দিলাম। 

আমি ছোট থেকেই নানা রকম হাতের কাজ ,শিল্প কলার চর্চা করতাম ,একটু লেখা লিখি ও করতাম কিন্তু সংসার নিয়ে ছেলে মেয় স্বামী তাদের সুখ সুবিধা নিয়ে এতটাই  ডুবে ছিলাম যে আমার “খাতা কলম” সব কোথায় যে ধুলো 

চাপা পড়েছিল আমি তার খোঁজ ও রাখতাম না। কথা রাখার জন্য অনিচ্ছা সত্যেও খুঁজে বার করলাম আমার কত স্মৃতি জড়ানো সেই খাতা ।এই খতার একটা ইতিহাস আছে ।আমার ছোট কন্যা তখন নবম শ্রেণীর ছাত্রী ,নতুন বাংলা পড়তে শিখেছে। (আমরা বাংলার বাইরে থাকতাম ও ওরা ইংলিশ মিডিয়েমে পড়ত ,গরমের ছুটিতে আমার কাছে বাংলা শিক্ষা।) সে হঠাৎ আবিষ্কার করে ছড়ান ছেটান আমার কিছু লেখা। খাতার ছেড়া পাতায়, ধোপার হিসাবের খাতায় …ওর বাবাকে দিয়ে খাতা আনিয়ে আমার হাতে দিয়ে আদেশের সুরে বলে ,”এবার থেকে এই খাতায় তুমি লিখবে” ,এ সেই খাতা 

একা ঘরে চোখের জলে ভেসে শুরু হল আমার “লেখা লেখা” খেলার যাত্রা। প্রথম দিকে পদে পদে হোঁচট খেতাম ,মনে হত পথটা বড়োই বন্ধুর ,সামনে এগোবার পথ খুঁজে পেতাম না ,শুরু আর শেষ দুটোই মনে হত বড়ো কঠিন। শেষ হল ত পাঠক নেই ,হাতি ঘোড়া ,আগডুম বাগডুম যাই লিখে না কেন পড়ে কেউ ভালো মন্দ না বললো কি উৎসাহ আসে! তখন ফেঃবুঃ  ছিল না । লজ্জার মাথা খেয়ে একে ওকে ডেকে পড়ে শুনাতাম ,প্রসংশা ও পেতাম। ধীরে ধীরে বেশ উপভোগ করতে লাগলাম এই লেখা লেখা খেলাটা। 

আমি তখন আমার বিদেশবাশী বড়ো মেয়ে বাড়িতে। সামনে পূজো ,ওরা খুব নাটক টাটক করে,এক দিন গল্পের ছলে ও আমাকে বলল একটা ভালো ইংলিশ়্ নাটক ছিল যদি কেউ বাংলায়  রূপান্তর করে দিত খুব ভালো হত ,  হাতে কোন বাংলা নাটক নেই আর এখন দেশ থেকে আনাবার ও সময় নেই। 

 মনে হয় এবার নাটকটা বাদ দিতে হবে। আমার কি মনে হল বললাম বইটা দিসত পড়ব। রাতা রাতি পড়ে ফেললাম নাটকটা, খুব মজার। আমার মাথায় ঘুরতে লাগল বাংলা রূপান্তরের মজাদার সব সংলাপ…

পর দিন সকালে মেয়েকে সংকচের সাথে প্রস্তাব দিলাম। ও আমাক এক গোছা কাগজ দিয়ে অ‍ফিস চলে গেল ,বলে গেল শুরু করে দাও আমি বাড়ি ফিরে শুনব !

সন্ধেবালা বাড়ি ফিরে চায়ের কাপ নিয়ে মহা উত্সাহে বসে পড়ল আমার স্ক্রিপ্ট শুনতে ।আমি শুরু করলাম একটু এগোতেই আমাকে থামতে বলে চেঁচিয়ে আমার জামাইকে ডাকল,আমি একটু লজ্জাই পাচ্ছিলাম তখন ।যাই হক ও বলল আবার প্রথম থেকে শুরু করতে। কাঁপা গলায় শুরুকরলাম,

যেটুকু লিখেছি পড়লাম,ওরা দুজনে বসে খুব হাসল। চোখে মুখে উচ্ছাস নিয়ে মেয়ে বলল,মা খুব ভালো হচ্ছে ,দুদিনের মধ্যে শেষ করতে পারবে ,তাহলে উইক এন্ডে সবাইকে ডাকব ,পুরো স্ক্রিপ্টা তুমি পড়বে! হলও তাই  স্ক্রিপ্ট শুনে সবার খুব পছন্দ হল ।

পূজোতে ওরা ঐ নাটকটাই মঞ্চস্থ করল আর নাটক শেষে আমাকে মঁঞ্চে ডেকে পরিচয় করাল ।সুদূর আ্যামেরিকায় বসে সবার কাছে অ‍নেক প্রসংশা ও সম্বর্ধনা পেয়ে নিজের মধ্যে যেন একটা আত্ম বিশ্বাস আনুভব করলাম। মেয়েটা আরো একটা নাটক বার করে দিল বাংলায় রূপান্তর করে দেবার জন্য,  সেটাও খুব হিট হল। 

যখন যেমন সময় পাই মনে যা আসে লিখি ।শুধু এটাই দুঃখ পাঠক নেই, লিখি আর জমিয়ে রাখি। এই ভাবে ঢিমে তালে চলছিল ।হঠাৎ ছেলে একটা আইপ্যাড উপহার দিল আমাকে।ব্যবহার প্রণালীটা চট়্পট়্ শিখে নিলাম । ইতিমধ্যে সোশ‍্যাল মিডিয়া খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সবার কাছে ।আমি ও সোশ্যাল মিডিয়াতে লেখা প্রকাশ করা শুরু করলাম।অনেক পাঠক পেলাম। তাদের নানা রকম মন্তব্য ,বক্তব্য ,প্রসংশা ,আমাকে উৎসাহ আর প্রেরণা যোগায়। 

আমাকে এগিয়ে যাবার সাহস দেয়।তাদের চাহিদা ও নিজের একাকিত্ব ও মনের ফাঁকা জায়গাটা ভরার জন্য আরো বেশী সময় আমি লেখা নিয়ে মেতে উঠলাম ।যেন এক নেশা এক ঘোরের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছি ।

পরবাসে এসে আশে পাশে কথা বলার কেউ নেই ,বাংলা টিভি পাইনা, কোন বন্ধু নেই, নেই কাজের লোকের সাথে বকবক্ করা,নেই পাড়া প্রতিবেশী ,শুধু আমি আর আমার একাকিত্ব …সারা দিন হয় অন্যের লেখা পড়ি না হয় লিখি আর ইউটিউবে গান শুনি বা কিছু বাংলা ছবি দেখি।কখন কি ভাবে জানি না আমি নিজের অজান্তে আমার লেখার দুনিয়াটাতে ঢুকে পড়েছি বা আমার লেখার দুনিয়াটা আমার ভেতর …. এখন আর একা লাগে না। যখন যে গল্পটা লিখি আমি যেন তাদের আপন হয়ে যাই।  কখন বা গল্পের চরিত্রর মধ্যে ঢুকে পড়ি ,আমার মনের কথা ,না বলা কথা  ওদের মুখ দিয়ে বলাই ।কখনো বা কোন চরিত্র আমার কাছে মিনতি করে বলে আমাকে বাঁচতে দাও ,বাঁচাও ,আমি বাঁচতে চাই। 

হঠাৎ রাতে ঘুম ভেঙে যায়, আমি ওদের ফিস়্ফিস়্ কথা শুনতে পাই ,ওদের কান্নার শব্দ শুনতে পাই।এই তো সেদিন স্বপ্ন দেখলাম …এক ত্রিভুজ প্রেমের গল্প ,দুজনে প্রেমিক যেন আমার কাছে তাদের আর্জি নিয়ে ডাকা ডাকি করছে বলছে বল “ ডুংরি “কার? তাদের সেই ব্যাকুল চাউনি দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল ,আমি ছট়্ফট়্ করে উঠলাম ,আমি জানি ওরা দুজনেই ভালোবাসে ডুংরিকে …. উফ্ঃ কবড়ো কঠিন ছিল একজনকে বেছে নেয়া।

নিউ ইয়র্ক শহরে বেরাতে বেরিয়ে বিদিশা যখন আতঙ্ক বাদী হামলায়…

তখন যেন আমারি হাত পা ঠান্ডা হয়ে দমটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।অসময় বাড়ি ফিরে বিমান চালক তার আদরের বউকে অমন ভাবে দেখে চমকে উঠল। এমন পরিনতির জন্য সে প্রস্তুত ছিলনা ,তার পায়ের তলার মাটি যেন কেড়ে নিয়েছে কে….এই পরিণতি দেবার জন্য সে আমার দিকে এমন এক জ্বলন্ত দৃস্টী নিয়ে তাকাল তারপর দুদিন আমি গালে হাত দিয়ে ভাবলাম,

আমি কি খুব ভুল করলাম ? কিন্তু বাস্তবে ত এমন আঁখচাড় হচ্ছে ! 

মর্গে মৃত স্বামীর সামনে দাঁড়িয়ে চামেলি বহু কষ্টে নিজেকে সামলাচ্ছে …ওর হৃদ স্পন্দন যেন আমার বুকে বাজছে ! আমার চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে …

কত বলব প্রতিটা গল্পের পিছনে আছে আমার একটা রিআ্যাকসনের গল্প। 

আবার শেফালি যখন মরনত্তর দেহ দানের চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে এন জি ও র কাগজে সই করবে তখন আমি এক অদ্ভুত অনুভূতি এক দো টানার মধ্যে ছিলাম। নদীর অতীত জেনে নক্ষত্রর মা যখন নদীকে আপন করে নিল তখন আমি পেলাম এক অদ্ভুত শান্তি। ষাট উর্দ্ধ বিধবা বনানী যখন পুরোনো পারিবারিক বন্ধু বিপত্নীক সাগরের ডাকে দৃড় পদ ক্ষেপে এগিয়ে চলল তার খুশির ঢেউয়ের দোলা যেন আমার মনে দোলা দিল! কলম রেখে গুনগুনিয়ে উঠলাম “মন রয় না রয় না রয় না ঘরে মন রয় না ,চঞ্চল প্রাণ …..”

কেন, কেন এমন হয় ? একাকীত্ব ঘোচাতে ফাঁকা ভাবটা কাটাবার জন্য খাতা কলম নিয়ে বসেছিলাম, যাতে মন কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকে ,মনমরা  না হয়ে যাই। কিন্তু এ কি বিপদ,এখন আমার মনটা ওরা পুরো দখল করে নিয়াছে।  আমি একা থাকলেই ওরা আসে কথা বলে ,হাসে,কাঁদে ,আমাকে প্রশ্ন করে, কেউ বলে আমাকে কেন এত ছোট করলে? কেউ বলে আমার সমস্যার কোন সমাধান তুমি কেন করলে না?

ওদের নীরব চাউনি আমাকে অনুসরণ করে ,ওদের বিরহে আমার কান্না পায় ওদের মিলন আমার রক্তে শিহরণ জাগায়! 

এখন আমি একটু  একলা থাকতে চাই ,চাই মাথাটা ফাঁকা করতে, যেমন লেখা মনমত না হলে “ডিলিট “ করি ঠিক সেই ভাবে সব “ডিলিট” করে মুছে ফেলতে চাই।  ভাবি আর লিখব না ,কিন্তু এ যেন এক নেশা ,দুদিন লেখা নিয়ে না বসলে মনটা বড়ো ছট়্ফট়্ কর,আবার টেনে নি আমার অস্ত্রটা (আই প্যাড) । মনের আগল খুলে বেরিয়ে আসে সব ভাবনার রাশি , আঙুলগুলো শুরু করে টাইপিং….

এখন আমি লিখছি এক আ্যালজাইমার (Alzheimer’s) মানসিক ভার সাম্য হীন মায়ের কথা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে আর বাড়ি ফিরতে পারছেনা। তার চোখের শীতল চাউনিতে যেন হিম প্রবাহের স্রত বইছে ,আমি যেন অনুভব করছি এক মৃত্যুর শীতলতা। তার নীরবতা যেন ঘরের বাতাস ভারি করে তুলেছে।ও জানতে চায় কেন আমি তাকে দিচ্ছি না ঠিক পথের সন্ধান? নিজের লেখার বাস্তব রূপ দেবার জন্য,প্রসংশা কুড়বার জন্য কেন আমি তাকে তার আপন জন থেকে দূরে সরিয়ে দালাম !কেন কেন কেন …?

ধীরে ধীরে এক অপরাধ বোধ আমাকে ঘিরে ধরছে,বার বার গল্পের খেই হারিয়ে যাচ্ছে। টাইপিং বন্ধ করে চোখ বুজে রকিং চেয়ারটা দুলিয়ে  গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠি “আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায় …”

2 thoughts on “ওরা কথা বলে

  • July 2, 2020 at 2:37 pm
    Permalink

    গল্পের মধ্যে গল্প, দারুণ লাগল।

    Reply
  • July 3, 2020 at 4:51 pm
    Permalink

    খুব ভালো লাগলো গল্পটা।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − twelve =