কায়া-সাধন, যোগের মূল কথা
আবদুস সালাম, মুর্শিদাবাদ ##
ভারতবর্ষের ধর্ম সাধনায় যোগ একটা উল্লেখযোগ্য অংশ। এটা সম্পূর্ণ হাতেকলমে শিক্ষা। সাধন বলে যে মানুষ অপরিমেয় অলৌকিক শক্তির অধিকারী হতে পারে এটা তার প্রত্যক্ষ উপায়। সুন্দর প্রাচীন কাল থেকেই এর সমাদর করে আসছে সকলে।
(তাং যোগমিতি মন্যন্তেস্হিরামিন্দ্রিয়ধারনাম)
দেহ ও দেহস্থ নাড়ী, বায়ু এই হলো যোগের সাধন ভজন।”প্রাণে সর্বং প্রতিষ্ঠিত”, জীবন দেহের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা যোগ শাস্ত্রের “ভান্ডই ব্রহ্মাণ্ড”এই কথা কে স্মরণ করিয়ে দেয়।যোগ সাধনা একটি সুপ্রাচীন ধারা যা মুনীঋষিগণ সাধনা করে এসেছেন যুগ যুগ ধরে। এই যোগ দর্শনের মূল প্রণেতা ছিলেন মহর্ষি পতঞ্জলি। যোগ দর্শনকে পৃথিবীর প্রথম শতকের রচনা বলে অনেকে মনে করেন।
কিন্তু কঠোপনিষদে যোগ প্রসঙ্গে আছে যে বুদ্ধদেব আলার কলমের নিকট যোগ শিক্ষা করেছিলেন। প্রাচীন বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থে যোগের স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়।”আকাশে যন্তি ইদ্ধিয়া”ধম্মপদ।
পাতঞ্জল যোগদর্শণ বিখ্যাত তার সম্পর্কে কারো দ্বিমত নেই। যোগ বিষয়ে যে সকল গ্রন্থ আমরা দেখতে পাই তাহলে হলো যোগী যাজ্ঞবল্ক্য, শিব সংহিতা, অষ্টাবক্র সংহিতা, গোরক্ষ সংহিতা, হটযোগপ্রদীপিকা, পবন বিজয় স্বরোদয় ইত্যাদি।
পাতঞ্জল দর্শন চারভাগে(পাদ) বিভক্ত। এক সমাধি পাদ, দুই সাধন পাদ, তিন বিভূতি পাদ, চার কৈবল্য পাদ।
সমাধি সাথে যোগ কাকে বলে, যোগের লক্ষ্য কি, এবং কি প্রকারে যোগ সংগঠিত হয়। সূত্রাকারে এগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ রয়েছে।
সাধন পাদে যোগের অষ্টাঙ্গের বিবরণ রয়েছে। এটাই হলো মূল ক্রিয়া যোগ।
বিভূতি পাদে কিভাবে অলৌকিক ঐশ্বর্য, শক্তি ও বিভূতি লাভ করা যায় তার বর্ণনা রয়েছে।
কৈবল্য পাদে সমাধির বিভিন্ন স্তর আলোচিত হয়েছে।
আমরা যোগ এর দর্শনাংশকে সাংখ্য দর্শনের অনুরূপ দেখতে পাই। যদি ওদের ভিতর তীব্র পার্থক্যও আছে। সাংখ্য নিরীশ্বর কিন্তু যোগ সেশ্বর(স+ঈশ্বর)
যোগদর্শন স্পষ্ট ভাষায় ঈশ্বরকে স্বীকার।
যোগের ঈশ্বর সূত্র_____
এক ক্লেশকর্মবিপাকাশয়ৈরপরামিষ্টং পুরুষ বিশেষ ঈশ্বর।।অবিদ্যা ক্লেশপূন্য ও পাপ রূপ কর্ম, কর্ম ফল রূপ বিপাক, বিপাকের অনুরূপ সকল বিষয়টায় এসব থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থাৎ অসংলগ্ন পুরুষ বিশেষ ঈশ্বর।।
দুই তত্র নিরতিশয়ং সর্বজ্ঞ বীজম।। এতে অতীত ,বর্তমান, ভবিষ্যৎ বিষয়ে যে অতীন্দ্রিয় জ্ঞান, সেই সর্বজ্ঞ বীজ নিরতিশয় প্রাপ্ত হয়েছে।।
তিন পূর্বে নামটি গুরুঃ কালেনানবচ্ছেদাৎ।। তিনি কপিলপূর্ব পূর্ব গুরু গণের গুরু। তার ঐশ্বর্য প্রাপ্তি কালবিচ্ছিন্ন নহে। অর্থাৎ তিনি অনাদি কালের।
যোগদর্শনে পুরুষের ভিন্ন ভিন্ন রূপ আমরা দেখতে পাই। এখানে ঈশ্বর ও পুরুষ বিশেষ। তিনি নিত্য,শুদ্ধ বুদ্ধ, মুক্ত ও অনাদি অনন্ত।
আরো এক পুরুষ আছেন তিনি বহুধা বিভক্ত।
প্রত্যেক লিঙ্গের শরীরে বা স্থূল শরীরে বুদ্ধি প্রতিবিম্বিত পুরুষ।ইনি আমাদের কাজের মানুষ।ব্যাবহারিক পুরুষ। এদেরকে আমরা অধ্যাস পুরুষ বলি।
বহু পুরুষের এই ধারণা সাংখ্য ও যোগে প্রায় একই রকম। প্রকৃতি তত্ত্ব, সৃষ্টি তত্ত্ব, জীবতত্ত্ব,বন্ধন ও মুক্তিতত্ত্ব সবই এক। “YOGA IS APPLIED SAMKHYA “
যোগের প্রধান উদ্দেশ্য ঈশ্বর কে পাওয়া নয়, ঈশ্বর বয় হোয়াট।জীবের অনন্ত সম্ভাবনা কে জাগিয়ে তোলা ।পাতঞ্জল দর্শনের দ্বিতীয় সূত্র টি সাধনপাদ এখানে তার উত্তর আমরা খূঁজে পাই।
যোগ তাহলে কি?যোগ হলো যোগশ্চিত্তবৃত্তিনিরোধঃ___অর্থাৎ চিত্তবৃত্তি নিরোধের নাম “যোগ”।হয়ে যাওয়ার উপায় হলো যোগ।আর হয়ে যাওয়া অতো সহজ নয়। চিত্ত বৃত্তি কে নিরোধ করা অতীব কঠিন কাজ। প্রতি পদক্ষেপে শুধু বাধা আর বাধা। তাই যোগ দর্শনে সাধনার পথ শুরু একেবারে নিম্ন ভূমি থেকে, অর্থাৎ অভ্যাস ও বৈরাগ্য দ্বারা চিত্ত নিবৃত্ত হতে পারে। ঈশ্বরপ্রণিধান,”তজ্জপস্তদর্থভাবনম” অর্থাৎ তপস্যা স্বাধ্যায় এগুলো চিত্ত নিরোধের উদ্যোগ পর্ব।
যোগের আসল উদ্দেশ্য “দ্রুষ্টুঃ স্বরূপে অবস্হানম”অর্থাৎ এই অবস্থায় পৌঁছাতে হলে হেয়_(দুঃখ),হেয়হেতু_(দুঃখের কারণ),হান_(কারণ দূর হল দুঃখের অবসান) এবং হানোপায়_ (বিবেকের খ্যাতি)জেনে অগ্রসর হতে হয় ।যোগদর্শন বলে বা “যোগাঙ্গ”অনুষ্ঠান দ্বারা অশুদ্ধি ক্ষয় হয় জ্ঞান দীপ্তির প্রকাশ ঘটে এবং বিবেকের খ্যাতি হয়। এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সাধক ক্রমশ ঐশ্বর্যের ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়।
যোগের আটটি অঙ্গ ঃযম, নিয়ম,আসন, প্রাণায়াম,প্রত্যাহার, ধারণা , ধ্যান,সমাধয়োহষ্টা ।এর প্রথম চারটি যোগের প্রথম পর্যায় , অর্থাৎ বহিরঙ্গ ক্রিয়া,পরের চারটি দ্বিতীয় পর্যায় অর্থাৎ অন্তরঙ্গ ক্রিয়া।
যম __বলতে বুঝায় অহিংসা ,সত্য, অচৌর্য, ব্রহ্মচর্যের অনুশীলন। যমে মনুষ্যত্বের প্রতিষ্ঠা ।
নিয়ম___বলতে বোঝায় বহিরঙ্গ সাধন। শৌচ , সন্তোষ,,তপঃ,স্বাধ্যায়, ঈশ্বর প্রণিধান প্রভৃতি নিয়ম পালনে ক্লেশ ক্ষয় হয়।
শেষ দুই অঙ্গ +(আসন ও প্রাণায়াম) ক্রিয়া যোগে এদের গুরুত্ব অপরিসীম। স্থির ভাবে সুখে উপবিষ্ট হওয়ায় এর প্রধান উদ্দেশ্য।(স্থিরসুখমাসনম)।
মহর্ষি পতঞ্জলি সুখাসনকেই প্রকৃত আসন বলেছেন।এই আসনে কায়ক্লেশ বিনষ্ট হয়, অঙ্গ হয় অচঞ্চল, চিত্ত হয় ধীর।
এরপর প্রাণায়াম । দেহ তো বায়ু প্রবাহের ক্রিয়া বিশেষ। বায়ুর স্তন্ভনে মনের চাঞ্চল্য দূর হয় । এতে অন্তরঙ্গ সাধনার দ্বার খুলে যায়।
যোগের লক্ষ্য বুদ্ধি প্রতিবিম্বিত আত্মায় মিথ্যা বোধের অপসারণ হয় ওজীবের স্বস্বরূপ প্রতিষ্ঠা হয়। যম, নিয়ম আসন ও প্রাণায়াম দ্বারা এর ভূমিকা রচিত হয়।
অন্তরঙ্গ সাধনে লক্ষ্য ভেদ হয় অর্থাৎ সমাধি লাভ হয়। অন্তরঙ্গ যোগের প্রথম স্তর “প্রত্যাহার”। যারা কেবল বিষয় চিন্তা করে, শব্দ রস রূপ গন্ধে আকৃষ্ট হয় তাদের ইন্দ্রিয়ের প্রবৃত্তি প্রতাহৃত হয়। ইন্দ্রিয় তখন শুদ্ধ চিত্তের বশীভূত হয়।
কর্ণ তখন শব্দ গ্রহণ করে না, নাসিকা কোন গন্ধ গ্রহণ করে না, চক্ষু তখন কোন রূপে আকৃষ্ট হয় না, জিহ্বা তখন কোন রসের জন্য লালায়িত হয়না, ত্বক তখন কোন স্পর্শে র জন্য উদগ্রীব হয়না। অতিরিন্দ্রিয় মন তখন সংকল্পে অস্হির না হয়ে ত্যাগ, বৈরাগ্য ঐশ্বর্য জ্ঞান মন্ডিত চিত্তের বশীভূত হয়। যাবতীয় ভেদজ্ঞান রহিত হয়ে যায়। সুখ-দুঃখ, শীত উষ্ণ, আরাম ব্যারাম সব একাকার হয়ে যায়। ইন্দ্রিয় বৃত্তির এই নিরোধ চিত্ত বৃত্তি নিরোধের ভূমিকা।
ধারণা___বিভূতি পাদের প্রথম সূত্র।দেশবন্ধ (চিত্তস্য ধারণা )। দেহের কোন কেন্দ্রে চিত্তের বন্ধই ধারণা ।ধারণায় চিত্ত বৃত্তি বিক্ষিপ্ত না হয়ে এক জায়গায় সন্নিহিত হয়।
ধ্যান__ধারণার পরে আসে ধ্যান।(তত্রপ্রত্যয়ৈকতানতা ধ্যানম) অর্থাৎ চিত্ত বন্ধ হওয়ার চিন্তায় বিভোর হওয়ার নাম ধ্যান।ধ্যানে চিন্তা ধারা অবিচ্ছিন্ন। ধ্যানের পরবর্তী অবস্থা সমাধি। সমাধি ধ্যানের প্রগাঢ় অবস্থা।ধ্যানে যে তত্ত্ব প্রকাশ পায় তাই হলো স্থিরতা বা সমাধি। জীবের পূর্ণতা প্রকাশ পায় সমাধিতে।
সংযম___ধ্যান, ধারণা, সমাধি এই তিন অবস্থার একইভবনের নাম সংযম। সংযম ভূমিতে বিভূতির প্রকাশ। সমাহিত সাধক প্রজ্ঞা লোক জয় করেন।তখন তিনি জাতিস্মর হন। ইচ্ছা মাত্র তিনি অদৃশ্য হতে পারেন। সমাহিত সাধক কষ্ট ঐশ্বর্যের অধিকারী হন।অষ্ট ঐশ্বর্য হলো( অণিমা ,লঘিমা, প্রাপ্তি,প্রাকাম্য , মহিমা,ঈশিত্ব,বশিত্ব ও কামাবশায়িতা)।যোগীর লক্ষ্য ঐশ্বর্য প্রাপ্তি নয়, বরং পূর্ণের যে আদর্শ সমাধি ,তাই তার লক্ষ্য হওয়া উচিত।
সমাধি আবার দুরকম। সম্প্রজ্ঞাত সমাধি ও অসম্প্রজ্ঞাত সমাধি।
সম্প্রজ্ঞাত সমাধি তে সাধক বস্তু চেতনার ঊর্ধ্বে উঠে যেতে পারে। কিন্তু আবার অন্তর্জগতের সাথে তখন ও যুক্ত থাকে।
অসম্প্রজ্ঞাত সমাধিতে কিন্তু পরিপূর্ণ নিরোধ ঘটে, আর অন্তর্জগতও লুপ্ত হয়ে যায়। তখন সাধকের চিত্রও থাকেনা আবার চিত্ত বৃত্তি ও থাকেনা তখন সাধক পুরুষ স্বস্বরূপ অর্থাৎ পুরুষ সদৃশ্য থাকেন।এই অবস্থা হলো পরমার্থ সিদ্ধি বা দুঃখের নিবৃত্তি।
যোগ হলো ব্যাবহারিক সাধনা । তাই ধর্মের সাথে এর যোগ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
যোগ সাধনায় আবার দুটি ধারা দেখতে পাওয়া যায়। একটি ধারার পরিচয় পাই পতঞ্জলি দর্শনে আর অন্য টি লোক প্রচলিত শৈব, শাক্ত, বৌদ্ধ, নাথধর্ম ও হটযোগে। এই ধারাটি অতীব প্রাচীন ও লৌকিক।
যোগের অধীশ্বর যে শিব এটা সাধারণত সব ভারতীয়দের বিশ্বাস। মহেঞ্জোদারো তে আমরা যে পশুপতির মূর্তি পাই এটাই তার প্রমাণ। ভারতবর্ষের লোকায়ত ধর্মে শিবির যোগের ঈশ্বর। আদিম সমাজে শিব ছিলেন প্রধান দেবতা ।শৈব ও শাক্ত ধর্ম ছিল একে অপরকে জড়িয়ে চুমু খাওয়ার মতো সঙ্পৃক্ত।শৈব ও শাক্ত ধর্মে যোগ তন্ত্রস্পৃষ্ট ও শৈব মত প্রভাবান্বিত। শৈব যোগে আসন প্রাণায়াম, দেহতত্ত্ব,ধ্যানতন্ত্রেপরিগৃহীত। তেমনি আবার যোগ সাধনায় ষটচক্রের কল্পনা,শিবের সহিত শক্তির মিলন বা কুন্ডলিনীযোগ, নর-নারীর মিলন প্রক্রিয়ায় পরম সামরস্যের উৎপত্তি প্রভৃতি তন্ত্র থেকে আগত। যোগ সাধনায় শিব ও শক্তির যুগল ধারা মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে লোকায়ত ধর্ম গুলোতে। লোকায়ত যোগের মূল কথা হলো কায়া সাধন। এজন্য লোকায়ত ধর্ম অতিশয় গুহ্যও রহস্যাবৃত্ত।
পাতঞ্জল যোগ দর্শনে যে যোগের রূপ পাওয়া যায় তার হলো যোগের সংস্কৃত রূপ।এই যোগ বেদান্ত মত দ্বারা প্রভাবিত।(সমাধি, সুষুপ্তি মোক্ষেষু ব্রহ্মরূপতা) অর্থাৎ সমাধি,সুষুপ্তি ও মোক্ষে ব্রহ্মরূপতা লাভ হয়। বেদান্ত প্রভাবে “সোহহম”তত্ত্ব প্রতিষ্ঠাই যোগের মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে। পুরানের এর উপর জোর দেওয়া হয়েছে খুব বেশি। এটাই প্রধান লক্ষ্য, অর্থাৎ যোগী সেখানে পরমাত্মায় লীন হয়ে যায়।” পরমাত্মনি লীয়তে”।
এখানে যোগের অর্থ “মেলন”, ব্রহ্মে-মনে মিলন, বা জীবাত্মা -পরমাত্মার মিলন। এখানে তন্ত্র ও বেদান্ত মিলে মিশে একাকার। লোকায়ত ধর্ম গুলিতে যোগের এই মিশ্র রূপ আমরা দেখতে পাই।
- তথ্যসূত্র ঃ পাতঞ্জল দর্শন অনুবাদ ___শ্রীমন্ হরিহরানন্দ আরণ্য
- সাংখ্য যোগ ____ডঃ সাতকড়ি মুখার্জি
- পাতঞ্জল যোগ সূত্র____স্বামীবিবেকানন্দ
- যোগদর্শন০১ঃভূমিকা___রণ দীপম বসু
অবেক্ষণ পত্রিকার সম্পাদক সহ সকল কর্মকূশলীবৃন্দকে হার্দিক শুভেচ্ছা আমার প্রবন্ধ টি এই সংখ্যা তে রাখার জন্য।
আশাকরি পাঠক মহল যোগ সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে পারবেন।
পাঠক মহলে সামান্যতম হলেও একটু উপকার হলে শ্রম সার্থক হবে। শুভেচ্ছান্তে আবদুস সালাম
অবেক্ষণের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ আপনাকেও। ভাল থাকবেন।