জাতীয় আন্দোলন পাল্টে দেয় কবিতার ভাষা
আবদুস সালাম, রঘুনাথগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ ##
কৃষি বিপ্লবের ইতিহাসে তেভাগা আন্দোলন এর সাথে সাথে যে আন্দোলন মানুষের মনে বেশি প্রভাব ফেলে ছিল তা হলো নকশাল আন্দোলন। এ আন্দোলন কি জমি দখলের আন্দোলন না রাষ্ট্র যন্ত্রের ক্ষমতা দখলের আন্দোলন তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তবে সবার কাছে এটা স্পষ্ট যে কৃষক শ্রমিক মধ্যবিত্ত এলিট সকলের মনে দিন বদলের স্বপ্ন ঝিলিক মারছিল।
1967 সালে নকশাল বাড়ির আন্দোলন এর মধ্যে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তাতে বাঙলার বেশিরভাগ মানুষ তাকে সমর্থন জুগিয়ে ছিলো। মানুষ যে আদতে আ্যরিস্টটল কথিত (zoon politician) রাজনৈতিক প্রাণী। সময়ের স্বভাবে তার সাড়া দেওয়া, আন্দোলিত হওয়া স্বাভাবিক।
সামাজিক ও রাজনৈতিক উতরোলের জেরে বাংলা কবিতার ভূবন নিজেদের অবগাহিত করেছিল নিঃসন্দেহে পরিবর্তন এর প্রেরণায়। আমাদের ভুললে চলবেনা যে সময়ের সাথে সাথে জ্বর ও জোর দুটোই কমে আসে।কমে যায় আয়ু। একজন স্রষ্টা কে তাই রচনা করতে হয় সৃষ্টির আড়াল।শান্ত অথচ দৃপ্ত স্বরে তাই রচিত হয় সময়ের ভাষ্য। বিপ্লব আর কবিতা যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ।দেশে বিপ্লব হবে আর কবিতায় তার ছোঁয়া থাকবে না তাহয়। এই সময়ের বিখ্যাত কবি দ্রোণাচার্য ঘোষ সময়ের আবেগে সাড়া দিয়ে লেখেন
” মুঠিতে নিশান জ্বলে, মেহনতি মানুষের রক্তের অক্ষরে
লেখা হয় দৃপ্ত এক মুক্তি র শরীর”
কবিতা র আঙ্গিকে ও ভাবনায় স্পষ্ট পরিবর্তন আমরা লক্ষ্য করলাম।নতুন আলোর ঝলক লাগল আমাদের চোখে।আমরা হতচকিত হয়ে পড়লাম।
সমাজতন্ত্রের জোয়ারে গোটা ভারতবর্ষ যখন ভাসছে ,তখন নকশাল আন্দোলন বাংলার মাটিতে নিয়েছে কালফণীর রূপ।এই সময়ের এক কবি জেলখানায় বসে চিঠিতে মাকে লিখছেন বিপ্লবী ভাষায় (তুমি তোমার দুচোখ ভরে আগুন ধরে রাখো। হৃদয় কলস পূর্ণ করে রাখো ঘৃণা)।
গণ আন্দোলন এর আগুন ঝরানো দিনগুলিতে কবিতার ভাষা নিঃসন্দেহে বাংলা কবিতার জগৎকে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিল। তীব্র প্রতিবাদ তাদের কবিতার ছত্রে ছত্রে পরিলক্ষিত হয়েছে। কি মননশীল তাদের তীব্র ঘৃণার ভাষা।
পার্থ বন্দোপাধ্যায় এর কবিতায় দেখি
“আমি সেই চন্ডাল
প্রত্যেকটা চিতার পাশে জেগে থাকছি
প্রত্যেকটা চিতার পাশে আগুন আগলে রাখছি”—
“বিপুল চক্রবর্তী র কবিতা য় দেখি
তোমার মারের পালা শেষ হলে
আমাকে যেন ডোরাকাটা বাঘের মতো দেখায়”–
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্বপ্ন দীর্ঘ শ্বাস এর ভাসমান ধূলিকণা বাংলা কবিতার আঙ্গিক, অক্ষর ও শব্দ চয়নকে চিহ্নিত করে রেখেছে নিজস্ব্তায়।।।
খুবই সুন্দর উপস্থাপন। অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।
আপনার মন্তব্য আমায় আপ্লুত করে ছে ।প্রিয় পাঠক মহাশয়ের জন্য রইলো ধন্যবাদ ।