দয়া কর ওগো সরকার, আমাদের কোনও উপকারের নেই দরকার
পলাশ মুখোপাধ্যায় ##
শান্তিপুরের কারিগর পাড়ার বুঁচকি পিসির টিভির সঙ্গে বেজায় দোস্তি। এদিক ওদিক ঘুরিয়ে গন্ডা খানেক সিরিয়াল তো আছেই, সেই সঙ্গে উত্তম সুচিত্রার বই হলে তো কথাই নেই। কেবল্ লাইনের পল্টু এসে মাসে মাসে সত্তর টাকা করে নিয়ে যায়। বিধবা ভাতা থেকে বাঁচিয়ে বুঁচকি পিসি সত্তর টাকা তাই আগে ভাগেই তুলে রাখে। সেদিন হঠাৎ অসময়ে পল্টু এসে হাজির। কি একটা কাগজ হাতে এসে বলল “বল পিসি, কি কি দেখপা?” সে আবার কি? বুঁচকি পিসি তো বেশ চাপে। এটা দেখি, ওটা দ্যাখপো, ওটা ভাল লাগে, এইটা তো চাইই, এইসব করে শেষমেশ একটা লিস্টি খাড়া করা হল। এবার পল্টু মাথা টাথা চুলকে, হেব্বি টিসেব টিসেব করে জানাল তোমার হয়েছে তিনশো পাঁচ টাকা। বুঁচকি পিসি হাঁ, পল্টু বোঝালো “সরকার বলেছে যে টুকু দেখপা সেটুকুরই দাম দেবা।” তাই এখন যেটা সত্তর, কেন্দ্রীয় সরকারী বিচক্ষণতা এবং জনদরদি চিন্তায় সেটাই দাঁড়িয়েছে তিনশো টাকায়। এর কমেও হবে, দু একটা অচল পয়সার মত চ্যানেল পাওয়া যাবে তাও দেড়শোরও বেশি টাকায়। সত্তর টাকার গল্প শেষ। এই একই গল্পে মিলেমিশে একাকার শান্তিপুরের বুঁচকি পিসির সঙ্গে গঙ্গারামপুরের নিত্যানন্দ মেসো বা শালতোড়ার সুহাসিনী হাঁসদা।
শহর ছাড়িয়ে সেই কবেই গ্রামে গঞ্জে পৌঁছে গেছে কেবল টিভি। ধনি গরিব নির্বিশেষে এখন ঘরে ঘরে কেবল টিভির একছত্র বিস্তার। খুব বড় শহর বাদ দিলে ছোট শহর, মফঃস্বল, গ্রাম গঞ্জ প্রায় সব জায়গাতেই কেবল লাইনের জন্য কম বেশি একশো থেকে দেড়শো টাকা দিতে হত পরিবার পিছু। বিনিময়ে মিলত প্রায় ছশো থেকে সাতশো চ্যানেল। না, সব কটা ভাষার সব কটা চ্যানেল কেউ দেখতেন এ দাবী এখনও কেউ করেননি। কিন্তু ওই টাকায় পাওয়া যেত সবই। জনদরদি সরকার, এবং আরও দরদি এবং জনহিতকারী সরকারী সংস্থা ট্রাই হিসেব কষল মানুষের এতে নাকি দারুণ ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তাই তারা বলল এত চ্যানেল কেউ দেখেন না তাই দাম দেওয়ার দরকার নেই। এ গল্প সকলেরই জানা। ট্রাই সাধারণ মানুষের কথা ভেবে দর বেঁধে দিল ১৩০ টাকা। সঙ্গে ১৮ শতাংশ জিএসটি দিয়ে প্রায় ১৫৪ টাকা। সর্বনিম্ন দর। অর্থাৎ আগের দর অধিকাংশ জায়গাতেই ট্রাইয়ের ন্যুনতম দরের চেয়ে কম ছিল। এবারে ট্রাই জানাল ১৫৪ টাকায় মিলবে ফ্রি চ্যানেল। অর্থাৎ আমরা সাধারণত যে চ্যানেলগুলি দেখে থাকি তার সিংহ ভাগই ওই টাকায় মিলবে না। বাংলা বা হিন্দি সিরিয়াল, সিনেমা, খেলা ইত্যাদির চ্যানেল দেখতে গেলে কম পক্ষে দুশো টাকা থেকে তিনশো টাকা দিতেই হবে।
সহজেই অনুমেয়, ট্রাই বা সরকার আমাদের(পড়ুন গরিব মানুষের) কথা কতটা ভাবেন। আমাদের উপকারের কথা ভেবে ঘুম হচ্ছে না সরকারের। রাতের পর রাত জেগে জনহিতকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে বুঁচকি পিসির সত্তর টাকার চ্যানেল তিনশো টাকায় পৌঁছে দিয়েছে সরকার। না আমি কোনও রঙের কথা বলছি না। একজন সাংবাদিক অথবা সাধারণ মানুষ হিসেবে দেখেছি সরকারে গেলে সকলেই সমান। তাই বুঁচকি পিসিদের হয়ে গলা ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছে করে দয়া কর ওগো সরকার, আমাদের কোনও উপকারের নেই দরকার।