নৈতিকতা
মাসুম বিল্লাহ, যশোর, বাংলাদেশ
আজকের পৃথিবীতে কেন মানুষের এত অধঃপতন। কেন এত যুদ্ধ সংঘাত, আমাদের তথা মানুষের কিসের এত অভাব? শিক্ষার নাকি নৈতিকতার?
আসলে আমরা সামাজিক মূল্য বোধ হারিয়ে ফেলেছি। আসলে আমরা একে অপারের ভালো দিকটা দেখতে চাই না। মানুষের বিপদের সময় এগুিয়ে আসতে চাই না। সামাজিক স্বার্থের কাছে আমরা মানসিকতা বা মনুষ্যত্বকে বিকৃত করি।
আমরা এখন হয়ে গেছি রাজনীতি কেন্দ্রিক। রাজনীতি ছাড়া কথা বলতে চাই না। রাজনীতির কারনে সত্যকে অসত্য করে ফেলি।আমরা কি পারি না রাজনীতির বাইরে থেকে দেশকে সেবা করতে। দেশের মানুষের সেবা করতে। আমি কিন্তু রাজনীতি করতে নিষেধ করছি না, বলতে চাইছি রাজনীতির চেতনার বাইরে থেকে, রাজনীতির কূট কৌশল ছাড়াও দেশ ও দশের সেবা করা যায়।
আমরা বক্তৃতা ভালোভাবে দিই! নীতি বাক্য শোনাই। আমরা একটু ভেবে দেখি কবি বলেছেন (আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যে বা আমি বাঁধি তার ঘর……) শুধু কবিদের কথা দিয়ে মাইক কাঁপিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করেন অনেক নেতারা। নিজেরা পালন করেন না নীতি বাক্য।আসলে মানুষকে ভালোবাসতে হলে, মানুষের সেবা করতে হলে ত্যাগকে স্বীকার করতে হবে, ভোগকে নয়।
আর ত্যাগকে শিকার করতে হলে আমাদের প্রতিহিংসা ছাড়তে হবে।
আসল কথা হলো শিক্ষিত হতে হবে। শুধু পুথিগত জ্ঞান নিয়ে খুশি থাকলে চলবে না।
একটি গল্প বলি, একজন সুশিক্ষিত লোক তার নিজের চেষ্টায় বাড়ির আশে পাশে যে পতিত জায়গা পড়ে আছে সেখানে সবজির চাষ করে। বাড়ির ছাইয়ের ডোবাটাকে কেটে মাছ চাষ করেন এবং তা দিয়ে তার পরিবারের চাহিদা মেটান।দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখেন। এবং তার কাঁচা বাজারের জন্য, মাছের জন্য বাড়তি অর্থ ব্যায় করা লাগে না।
এখন যদি পাশের অকর্মণ্য চাটুকার ব্যক্তিরা উক্ত লোককে কৃপণ বলে। তখন কেমন শোনায়।
আসলে সমাজে এক ধরনের মানুষ আছে যারা শুধু অন্যের কুৎসা রটনা করে বেড়ায়। এই ধরনের কুচক্র মন-মানসিকতা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে।
কবি বলেছেন, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে,,,,, আমরা একে অপরের প্রতি প্রতিহিংসা করব না। সব সময় নেতিবাচক দিক না দেখে ইতিবাচক দিক দেখতে হবে।
ভালো কাজকে ভালো বলতে হবে সে যে দলের হোক না কেন। ভালোকে স্বাগত জানাতে হবে।
ভালোকে অনুসরণ করতে হবে ভালোকে ভালোবাসতে হবে।
আমাদের সামাজিক মূল্যবোধটা আমরাই হারিয়ে ফেলেছি।আমরা কি পারি না নিজ উদ্যগে ভাঙ্গা সমাজটাকে জোড়া লাগাতে? আমরা কি পারি না আমাদের অবস্থান থেকে বিপন্ন মানুষের সাহায্য করতে। অসহায়ের পাশে দুই হাত বাড়িয়ে দিতে।
মানুষকে ভালোবাসতে হলে টাকা পয়সা লাগে না।লাগে শুধু মানুষকে ভালোবাসার মত একটু ভালো মন। শুধু অর্থ দিলেই যে মানুষের সাহায্য করা হয় এমন ধারনা আমাদের সমাজে রয়েছে! পুরাতন কুসংস্কার, আর ধর্মিয় গোড়ামির কারনে আমাদের এত অধঃপতন। আমাদের সমাজে যদি পুর্ণ বয়স্ক ব্যক্তি কেউ বিবাহ না করেন তাহলে আমরা তাকে কী বলি? ব্যর্থ প্রেমিক অথবা ছেঁকা খেয়েছে! আসলে আমরা তার পারিবারিক অবস্থা না সমস্যা জানতে চাই না। আমরা তার মানসিক অবস্থা জানতে চাই না। শুধু তাকে উপহাস করার জন্য ব্যস্ত হয়ে যাই।
একজন ছাত্র যদি তার কাঙ্খিত পরীক্ষার ফলাফল একটু খারাপ করে ফেলে। আমরা তাকে গবেট বলি।
আমরা কখনো ভাববার চেষ্টা করি না সেই ছাত্রের বাড়িতে পাঠের পরিবেশ কেমন ছিল। তাকাই না তার ভিতরে থাকা কোনও না কোনও সৃজনশীল প্রতিভার দিকে। কি প্রতিভা আছে সেটাও জানতে চাই না। শুধু তার পরীক্ষার ফলাফল নিয় চাপাচাপি করে থাকি। আমরা কি পারিনা তার চাপা পড়া প্রতিভাকে একটু স্বাগত জানাতে। আসলে শিক্ষিত হলেই যে জ্ঞানী হবে সে কথা বলা মুশকিল। আমাদের জাতীয় কবি, বিশ্বকবি এরা কিন্তু একাডেমিক ভাবে উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন না। মরমি কবি লালন শাহ কোন স্কুলেই পড়েনি অথচ তাদের জ্ঞান কত উর্বর। এখান থেকে আমাদের নিন্দুকদের শিক্ষা নিতে হবে যে আমরা নিন্দা করব ইতিবাচক, নেতিবাচক নয়। আমরা যদি যার যার অবস্থান থেকে একে অন্যের দিকে কাদা ছোড়াছুড়ি না করে একে অন্যকে শ্রদ্ধা করি; রাজনীতিকে দর্শন হিসাবে মানি, একে অন্যের প্রতিভাকে উৎসাহিত করি তাহলে আমাদের সামাজিক অবক্ষয় ঘটত না। আমাদের মাঝে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের সূর্য উদিত হলেই একটি সুখী ও সমৃদ্ধি সমাজ নির্মান করা সম্ভব।