পরিপূরক
ডঃ রমলা মুখোপাধ্যায়, বৈঁচী, হুগলী ##
অন্ধ অয়ন আর খোঁড়া কেয়ার সংসারে নিত্য অনটন, তা হোক ওরা কিন্তু খুব সুখী। রোগা পটকা কেয়াকে কাঁধে চাপিয়ে অন্ধ অয়ন রোজ ভিক্ষে করতে যায়। এখানে কেয়ার নির্দেশদাতার ভূমিকা, সে পথ দেখায়। গ্রামে শহরে কত জায়গায় ঘোরে তারা একাত্ম হয়ে, যেন রাধা-কৃষ্ণের যুগল মিলন।
রোদ্দুরে লেগেছে চাঁপা ফুলের রঙ, পুজোর আর বেশি দেরি নেই। অয়নকে কেয়া বেশ জনবহুল একটা জায়গা দেখে এক কোনে বসিয়ে দেয়, কাছেই একটা শিউলি গাছ। অয়ন তার অতি সক্রিয় ঘ্রাণেন্দ্রিয় দিয়ে ঠিক বুঝতে পারে মা দুর্গার আসার সময় হয়েছে। খানিক বিশ্রাম নিয়ে সে আগমনী গান ধরে। মানুষের মনেও বোধহয় পুজোর মাদকতা। তাই একটু বেশি পয়সা জুটল আজ অয়নের। কিছু পয়সা ভিক্ষের বাটি থেকে অয়ন সরিয়ে রাখে। এইভাবে দিন কয়েকের বাড়তি রোজগার দিয়ে অয়নের খুব ইচ্ছে হল কেয়ার জন্য একটা কিছু কেনে। পাশেই একটা হকারের কাছ থেকে খুব কম দামে একটা কুর্তি কিনে লুকিয়ে রেখে দিল অয়ন।
চতুর্থীর দিনে অয়ন কেয়াকে কুর্তিটা দিল; কিন্তু কেয়া গায়ে দিয়ে দেখে বেঢপ বড়, খুব রেগে যায় কেয়া। অয়ন কত বোঝায় যে কেয়ার পেটের বাচ্চাটা বড় হবার সাথে সাথে তার শরীরটাও তো বাড়বে। কিন্তু কেয়া কোন কথাই শোনে না, চিৎকার করে গালিগালাজ করতে থাকে অয়নকে।
কেয়াকে নিয়ে ভিক্ষে করতে দুদিন বেরোয়নি অভিমানী অয়ন। উপোসী কেয়া কি করবে ভেবে না পেয়ে সূচ-সুতো দিয়ে কুর্তির দুপাশে সেলাই করতেই গায়ে কুর্তিটা একেবারে ঠিকঠাক। কেয়া বুঝতে পারে নিজের ভুল, সত্যিই তো শরীরটা বাড়লে আবার সেলাইটা খুলে দিতেও তো পারবে।কুর্তিটা পরে অয়নকে জড়িয়ে ধরে কেয়া। নতুন কুর্তির গন্ধে অয়নের সব রাগ জল হয়ে যায়। ক্ষুধার্ত যুগলের হাসি ঢাকের আওয়াজে চাপা পড়ে যায়।