প্রসঙ্গ বিয়ে
বন্দনা বিশ্বাস, গোবরডাঙা, উঃ ২৪ পরগনা ##
প্রিয় অর্ক,
চিঠিটা তোমার উদ্দেশ্যে লিখিত হলেও বিয়ে প্রসঙ্গে এ আমার সামগ্রিক মতামত।
আইরিশ নাট্যকার জর্জ বানার্ড শ-এর “Arms and the Man”- এ জেনেছি শ-বাবু বিবাহকে বলছেন-” Sex-war based on biological necessity”.আমি এই মতের আংশিক সমথর্ক। শুধু যৌনতার ওপর যে সম্পর্ক দাঁড়িয়ে থাকে, তা অসম্পূর্ণ আমার মতে। তার ভিত্তিভূমিও দূর্বল হয় বিশ্বাস করি। একটি পিলারের(Pillar) ওপর ছাদ উঠলে যেমন একপাশে কাত বা টাল খেতে পারে সাধের আচ্ছাদন, তেমন আর কি।
আরও দুটি Pillar সংযুক্ত করতে চাই আমি বৈবাহিক সম্পর্কে। একটি স্তম্ভের নাম ‘মন’ আর একটি সেই প্রবল-অনুভূত ‘আত্মা’।
“আত্মা”~খায় না মাথায় দেয় সে সম্পর্কে কিছু বিতর্ক থাকলেও মনের অস্তিত্ব বা ‘মন আছে’ সম্পর্কে আশা করি অধিকাংশ মানুষকে পাশে পাওয়া যাবে। বিশ্ব- মন থেকে পাওয়া একটি অংশ,যাকে মনাংশ বলা যেতে পারে,তাঁর পরিধি-বিস্তার- অনুভুত অস্তিত্বের মাপকাঠিতে যারা কাছাকাছি থাকেন,তাঁরা বৈবাহিক সম্পর্কে আদর্শ জুটি হতে পারেন হয়তো।
বিপুল বিশ্বে ‘আত্মা’র অস্তিত্ব এবং অনস্তিত্বে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আত্মার অস্তিত্বে যারা বিশ্বাস করেন~তারা যেমন স্বাগত,অনস্তিত্বে বিশ্বাসীরাও স্বাগত আমার লেখায়, আমার আশ্রয়ে~অবশ্য যারা চান।
‘মন’ থেকে যেমন ‘ মানসিক’ শব্দটি চর্চায় এসেছে তেমনি শরীর থেকে যদি শারীরিক কথাটি আসতে পারে, তাহলে আত্মা থেকে আত্মিক বা আধ্যাত্মিক শব্দবন্ধও স্বাগত হবে আশা রাখি।
বিশ্বশরীর থেকে আমার শরীরের অংশ নিয়ে ‘আমি’ একাত্ম হয়েছি আমার সঙ্গে। বিশ্বমন থেকে পাওয়া আমার ভাগের মন-অংশ বা মনাংশটুকু আমি নিজের করে নিয়েছি তাও সন্তুুষ্ট হতে পারছি কই? মনের মতো মা- বাবা- আত্মীয়-পরিজন-বন্ধুবান্ধব-প্রেমিক-প্রেমিকা খুঁজে চলেছি অনুক্ষণ।
শরীরকে নিখুঁত করার কাজে যেমন স্নো-পাউডার-লিপস্টিক আরও আরও উপাদান জন্মের আগে থেকেই প্রবহমান হতে দেখেছি,
তেমনি ভাগে-পাওয়া মন বা মনাংশ টুকু নিয়ে বিশ্বমনের দরজায় খুঁজে ফিরি সমমনস্ক অন্য মনের অন্বেষণে,আরও পূর্ণতর হয়ে ওঠার অপেক্ষায়….
‘আত্মা’র বিশেষণ ‘আত্মিক’ বা ‘আধ্যাত্মিক’। শরীরের চাওয়া পাওয়া যেখানে এন্ডিং লাইন চায়, মন-এর দৌঁড় বোধ করি সে জায়গা থেকে শুরু হয়, মন যেখানে বিশালতার উপলব্ধিতে খেই হারায়, সেই ক্রিজেই কি ব্যাট হাতে নেমে পড়ে আত্মা??উপলব্ধির ব্যাপকতায় চৌকো- ছক্কা হাঁকিয়ে চলে? বুঝতে পারি না। সুস্পষ্ট অনুভব ঘেটে যায় যেন।
এখন তুমি প্রশ্ন করতে পারো~এত কথার ভেতর বিয়ের প্রসঙ্গ কই?
নিশ্চয়ই আছে ৷ প্রচ্ছন্ন, প্রবলভাবেই আছে।কেউ যদি একটি পিলার
(Pillar)হাতে বিয়ের পিঁড়িতে বিয়ে করতে হাজির হন, আর একজনকে ধরে আনা হল যিনি তিন এবং তিনোধিক (যদি থাকে) Pillar পুঁতে ঘর বানিয়ে বসে আছেন, উপরোক্ত দুজনকে যদি পুরুতমশাই চারহাত এক করেন তো সমস্যা কিছু যে হবে — সে বিষয়ে প্রায় সকলেই একমত হবেন যদি না ইতিমধ্যে বানিয়ে ফেলা ঘরের মালিক,তার অপরপক্ষ (সাকুল্যে একটি Pillar-এর আধিকারী)কে করুণা না করেন।
বৈবাহিক সম্পর্ক করুণা-বেসড হওয়া সমীচীন কিনা এবিষয়েও
নিশ্চিতভাবে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলবেন।
অর্থাৎ বিবাহ-প্রসঙ্গে আলোচনা যেদিকেই গড়াক না কেন ~ কেউ
না কেউ “প্রশ্ন আছে” বলে হাত তুলবেন। তুমিও তো বুঝতে পারছ অর্ক, পাঠকের হাতে লেখকের গর্দান যাবার সম্ভাবনা থেকে নিস্তার পাওয়া মুশকিল।
তাই, তোমাকে বলছি, এসো আমরা সকলেই সকলকে(শরীর-মন-আত্মা) জানি। কি নিজের- কি অপরের। তাহলে বিয়ে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তুমি যথেষ্ট অভিজ্ঞ হয়ে উঠবে। নিতান্ত খুঁজে-পেতে অপারঙ্গম এবং দিশাহারা হলে একা থাকো, সেও ভালো, ঘাবড়ে গিয়ে দোকা হতে যাবে না। ঠেকে নয়, দেখে শেখো। শিখতে শিখতে বয়স পার হয়ে গেলেও, হাল ছাড়বে না বলে দিচ্ছি। কারন বয়স পার হয়ে গেলেও ওপারেও কেউ না কেউ আছে। একা থাকাকে সম্মানের সঙ্গে উপভোগ করো যুগপৎ সমমনস্ক জীবনযোদ্ধাকে/জীবনশান্তিকে খুঁজতে থাকো। না পেলে রবি ঠাকুর তো কবেই অনুভব করে গেছেন~~~
” কোথাও আমার হারিয়ে যাবার
নেই মানা—-
মনে মনে “।
পুনশ্চঃ
আত্মার অনস্তিত্বে বিশ্বাসীরা মহাজাগতিক শক্তিতে বিশ্বস্ত হতে পারেন।
সেক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হলো —-
যারে বলে মহাজাগতিক,
সে কি অন্য
নামে হতে পারে
না আত্মিক?
যারা কোনও শক্তির কাছেই মাথা নোয়াবেন না, নিজের বুদ্ধি বিবেচনার ওপর আস্থা রাখতে সচেষ্ট হোন —- সেই মতো সঙ্গী খুঁজুন নইলে একা থাকাকে সম্মানীয় এবং উপভোগ্য করে তুলুন।
উপর্যোক্ত নাস্তিক্যধারার কথাগুলো সরাসরি তোমার উদ্দেশ্যে না হলেও তুমিও অন্যতম লক্ষ্য, অর্ক।
ভালো থেকো।