বন্ধ হোক জল অপচয়
বটু কৃষ্ণ হালদার , কবর ডাঙ্গা, কলকাতা ##
পৃথিবীর সমগ্র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপযুক্ত ও মস্তিষ্কের ব্যক্তির মানুষের জন্ম এই ভারতবর্ষে। যোগ্যতার বিচারে উপযুক্ত সম্মান না পাওয়াতে তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ভারতবর্ষ থেকে। ২০১৯ সাল, এই অত্যাধুনিক সুসভ্যতার যুগেও ভারতবর্ষে বেড়ে চলেছে জলের জন্য হাহাকার। কার্যত আগামী দিনে এক বিন্দু উপযুক্ত পানীয় জলের জন্য ভারত বর্ষ শ্মশানে পরিণত হবে তার ইঙ্গিত বা পূর্বাভাস আমরা পেয়ে চলেছি অবিরত। আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসছে ভারতবর্ষের কঙ্কালসার চেহারা। একদিন হয়তো ভারতবর্ষের বিকল্প হিসেবে উপযুক্ত উন্নত উন্মুক্ত পরিবেশের খোঁজে বেরিয়ে পড়বো আমরা সবাই। তাতেও কি হবে সমস্যা সমাধান? তার উপরে চোখের সামনে ভারতবর্ষের অন্যতম নদী গঙ্গা দূষিত হচ্ছে পদে পদে, নীরবে সইতে অপমান। আজ ভারতবর্ষের পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ সমস্ত প্রান্তে নিরন্তর জলের জন্য হাহাকার বেড়ে চলেছে। চোখের সামনে দেখে যেতে হবে ভারতের উলঙ্গ চেহারা। ভারত বর্ষ ও সচেতন মূলক ব্যক্তির প্রাধান্য বেশি এ কথাটা কি আদম মিথ্যা বলে প্রমাণ করা যাবে? এর জন্য দায়ী কে? সচেতন মূলক ও কর্তব্য পরায়ন নাগরিক হিসেবে আমাদের কি কোন দায় দায়িত্ব নেই? তাই অপরকে প্রশ্ন না করে নিজেকেই প্রশ্ন করুন, এর উত্তর হয়তো পেয়ে যাবেন এক সময়। তার ওপর ভারতবর্ষে নির্বাচনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় করা হচ্ছে ,সঙ্গে বেশ কিছু মৃত্যু বাড়তি পাওনা রয়েছে। এরপরেও যদি প্রশ্ন করা হয়, ভারতবর্ষে নির্বাচন টা কি খুব জরুরি? কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? কারণ এই ভারতবর্ষে সত্য কথা বলা মহা অপরাধ। সম্প্রতি একটা খবর সংবাদ মাধ্যম এর শিরোনামে তা হলো উত্তর প্রদেশের হাথরাস নামক গ্রামের এক চাষি পরিবার, প্রধান মন্ত্রীকে চিঠি লেখেন সপরিবারে আত্মহত্যা করার জন্য। কিন্তু কেন?
তিনি বলেন, এই গ্রামে জল তো পাওয়াই যায় না আর যেটুকু পাওয়া যায় তার নোনা উপযুক্ত নয় পান করার জন্য। ব্যবহার করা জানে চাষের কাজে। গ্রামের বাচ্চা ও মহিলাদের পক্ষে তিন চার কিলোমিটার গিয়ে জল আনা সম্ভব নয় রোজ রোজ এই গরমে। তিনি জানান সেখানে সরকার অধিকারিক দপ্তরে এ সমস্ত ঘটনা জানিয়ে মেলেনি সদুত্তর। তাই তিনি প্রধানমন্ত্রী কাছে চিঠি লেখেন এর একটা বিহিত ব্যবস্থা না হলে সপরিবারে আত্মহত্যা করবেন এবং এই খবর আসে সংবাদ শিরোনাম।
সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড বোর্ড এর রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবছর যে পরিমাণ ভূগর্ভস্থ থেকে জল উত্তোলন করা হয় তার মাত্র ৮ শতাংশ ব্যবহার করা হয় গৃহস্থালির জন্য, ৮৯ শতাংশ কৃষি কাজে, ৩ শতাংশ ইন্ডাস্ট্রিতে। বাকি ৮ শতাংশ জল পেতে কাল ঘাম ছুটে যাচ্ছে ।চেন্নাই দিল্লির পর কলকাতার খবর আছে নাকি? তারপর যে প্রশ্নগুলো সামনে আসে তা হল প্রতিবছর যে পরিমাণ জল ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয় তা চীন ও আমেরিকার সম্মিলিত জলের চেয়েও বেশি। তারপরও কেন এত জলের সমস্যা? এতো মৃত্যু কেন?
নীতি আয়োগের ডেটা অনুযায়ী এত ভয়ানক ক্রাইসিস আগে কখনো হয়নি, হঠাৎএখন কেন?উত্তর খুঁজে পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে ইন্ডাস্ট্রি গুলোতে, যে কি পরিমাণ পানীয় জলের ব্যবহার হয় তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।পেপসি কোলা জাতীয় পানীয়, স্পঞ্জ আয়রন সহ বিভিন্ন স্টিল কোম্পানি গুলোতে সবচেয়ে বেশি জল ব্যবহার করা হয় ।সারা বছর হিসাব করলে আপনার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যাবে। দেখা যাচ্ছে প্রতি লিটার কোকাকোলা তৈরি করতে ৯ লিটার জলের প্রয়োজন হয়( 2000 সালে তথ্য অনুযায়ী) অবশ্য তাদের দাবি তারা ১।৪৬ লিটার নামিয়ে এনেছেন। প্রতিবছর কত লিটার কোক উৎপাদিত হচ্ছে তার সঙ্গে 450 গুন করলে একটা যথাসম্ভব ধারণা পাওয়া যায়। প্রতিটি কোক ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট এ ৫ লক্ষ লিটার জলের প্রয়োজন হয়। সারা ভারতবর্ষে জুড়ে ৫৮ টির বেশী প্লান্ট রয়েছে। অর্থাৎ সারা বছর জল ব্যবহার করা হচ্ছে তা হলো প্রায় ১০।৫৮৫ মিলিয়ন লিটার। শুধুমাত্র সমস্যা এখানেই শেষ নয় অপরিমিত জল ব্যবহারের পাশাপাশি এই কোম্পানিগুলো যে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয় তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধের সকল জলের উৎস কে দূষিত করছে। যা পানীয় এর অযোগ্য, কৃষিকাজের ব্যবহার সম্ভব নয় অর্থাৎ স্লো ডেইথ একমাত্র ভবিতব্য। বজ্র পদার্থ তে লেড শিশুদের জন্য মারাত্মক বিপদজনক এবং নানা রকম মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে ক্যাডমিয়ামের মাত্রা অতিরিক্ত থাকায় কিডনি ফেইলিওর অন্যতম একমাত্র কারণ।অর্থাৎ এই সমস্ত কোম্পানিগুলি বিপুল পরিমাণ জলের অপচয়ের সাথে সাথে জলের উৎস দূষিত করে যে জটিল সমস্যার সৃষ্টি করছে তা কি শুধুমাত্র দৈনিন্দিন জলের ব্যবহার কোমায় রাখা সম্ভব?অথচ আমাদের দেশের সরকার এই সমস্ত তথ্য গুলো জেনে শুনেও তাদের লাইসেন্স দিয়েছে আমার দেশে ব্যবসা করার জন্য। তাহলে প্রশ্ন করি দোষটা কাদের?
আজ সারা বিশ্ব জুড়ে একটু দূষণ মুক্ত জলের হা হা কার বেড়ে চলেছে দিন দিন, এক বিন্দু শুদ্ধ জলের মধ্যে লুকিয়ে আছে জীবন বাঁচার রসদ। সংবাদ মাধ্যম, খবরের কাগজের শিরোনামে চোখ রাখলে একটা খবর সংবাদের শিরোনামে প্রতি মুহূর্তে অবস্থান করছে তা হলো দূষণ। ভেজাল খাদ্য আর ধর্ষণ যেমন সামাজিক ও মানসিক দূষণের মূল স্তম্ভ, তেমনই জীবন বাঁচার অন্যতম অবলম্বন জল দূষণ এর মাত্রা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এগুলি বন্ধ না হলে কিভাবে গড়ে উঠবে উন্মুক্ত দূষণ মুক্ত সমাজ, এইভাবে একদিন হয় তো এই সুন্দর পৃথিবী একদিন বন্ধ্যা তে পরিনত হবে আমরা আজ তা বেশ বুঝতে পারছি। থমকে যাবে উন্নত বিকাশের ধারা, আসুন আমরা সবাই মিলে গাড়ি এক দূষণ মুক্ত পৃথিবী। যার ছত্র ছায়ায় বাঁচবে আগামীর ভবিষ্যত। এ সব দেখে শুনে প্রশাসন নির্বিকার, তাই এই সুন্দর পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকারবদ্ধ নিজেদের হতে হবে, চাই সচেতন মানসিকতা। তাহলে আবার এই পৃথিবীর হাস্যজ্জ্বল রূপ, শিশুর হাসির ন্যায় ভোরে যাবে বিশ্ব জননীর আঁচল।
জল মানব জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। আজ এ সময়ে দাঁড়িয়ে জলের গুরুত্ব বিশেষ বোঝানোর দরকার হয় তো নেই, কারণ জল সামাজিক জীবনের এক এবং অন্যতম চাহিদা। সেই জল আজ দূষিত হচ্ছে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে, আর তার মূল কারণ হলো আমরা নিজেরাই এর থেকে বড় লজ্জার আর কি হতে পারে। আজ আমাদের কারণে পবিত্র গঙ্গায় বইছে দূষণের মহা প্লাবন।
শস্য, শ্যামলা, ফল ফুলে সোভিত আমাদের পূর্ন ভূমি ভারতবর্ষ। গঙ্গোত্রী হিমবাহের পাদদেশে থেকে গঙ্গার উৎপত্তি। পৌরানিক কাহিনীতে শোনা যায় নীলকণ্ঠর জটা হতে উৎপত্তি হয়ে বয়ে চলেছে সমগ্র জায়গায় নীরবে, বন্ধ্যা ভূমি কে করে তুলেছে উর্বর ও পবিত্র। সেই গঙ্গা আজ নিজের সন্তানদের রক্তে সিক্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত সইছে অপমান। গঙ্গা স্বয়ং ইশ্বরের বরদান, সেই গঙ্গা আজ দূষিত ও কলুষিত। এর জন্যে দায়ী কারা? যদি প্রশ্ন করা হয় কয়েকজন ব্রিটিশ ভারত বর্ষে এসে কিভাবে প্রায় দুই শত বছর রাজত্ব করেছিলেন? তাই মনে হয় অন্যের দিকে আঙুল না তুলে প্রশ্ন টা নিজের বিবেকের কাছে করা টা শ্রেয় বলে মনে হয়। এক নারী যেমন নিজের পরিবার ছেড়ে অন্যের সংসার আলোকিত করার জন্যে নিজেকে উজাড় করে দেন, ঠিক তেমনি গঙ্গার অবদান। ঠিক গঙ্গা যুগের পর যুগ তার অবারিত ধারা বয়ে নিয়ে ভারত তথা বিশ্বের দরবারে নিজেকে বারংবার স্বচ্ছ তথার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আদি পূর্নবতি তে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের নদী মাতৃক দেশ হিসাবে ভারতের মানচিত্র কে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।
জল হল জীবন, তা বোধ হয় বোঝানোর অপেক্ষা রাখে না। জল সমগ্র জীব বৈচিত্র কে প্রভাবিত করেন। প্রতিনিয়ত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানব জীবন চক্র জলের দ্বারাই অতিবাহিত হয়। বিশেষ করে খাদ্য তে শুদ্ধ জল অপরিহার্য। উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়ের ক্ষেত্রে জল অপরিহার্য উপাদান। জীব কুল এর জলের প্রয়োজন তথা ছোট্ট শিশু দের জন্য অপরিহার্য বিশুদ্ধ জল। কারণ তারাই দেশের ভবিষ্যত। উন্নত বিকাশের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ জল অমৃত সম।
কথায় বলে পেট ভালো যার সব ভালো তার, পেটের একমাত্র অপরিহার্য হল বিশুদ্ধ জল। সেই জল দূষিত হচ্ছে নোংরা আবর্জনার কারণে, তার উপর প্লাস্টিকের ব্যবহার জলের জীবন কে বিনষ্ট করে চলেছে দিন দিন আর এই গুলি আমরা জেনেশুনে ব্যবহার করি। এ সময়ে জল দূষণ হচ্ছে আর্সেনিক এর কারণে দূষণ হচ্ছে তা দিন দিন বেড়ে চলেছে। হয়ে পড়েছি রোগগ্রস্ত। মানব দেহে লিভার হোল গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, সেই লিভার ও কিডনির পথ্য হল জল। তার সঙ্গে বেড়ে চলেছে মানসিক রোগ, হার্ট এর সমস্যা, অল্প বয়সে চুল সাদা হচ্ছে, বাড়ছে চর্ম রোগ। শিশুদের বুদ্ধি নষ্ট হচ্ছে, নারীর সন্তান ধারণের ক্ষমতা কমে আসছে, বুঝতে পারছেন তো এই বিশ্ব আস্তে আস্তে বন্ধ্যা তে পরিনত হতে চলেছে। “একটা গাছ একটা প্রাণ” সেই জীব কূল এর প্রাণ ধারণের রসদ লুকিয়ে আছে গাছের মধ্যে। গাছ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাবার তৈরি করে, মূল দিয়ে শোষিত জল, পাতায় উপস্থিত ক্লোরোফিল এর দ্বারা সূর্যর রশ্মি ও বাতাস সহযোগে। খাবার তৈরির পর গাছ অক্সিজেন দেয় পরিবেশকে, এবং নিজে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে নেয়। আর প্রাণী কুল অক্সিজেন গ্রহণ করেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে ত্যাগ করে। জীবের সঙ্গে উদ্ভিদ এর সম্পর্ক নিগুড়। সেই বাঁচার রসদ জল, আলো, বাতাস, মাটি আজ দূষিত। এই ভাবে চলতে থাকলে বন্ধ হয়ে যাবে ক্রিয়া, বিক্রিয়া উদ্ভিদ ও প্রাণী কুলের। পরিবেশ যতো দূষণ হবে ততই বাড়বে রোগব্যাধি। জন্ম নেবে বিকলাঙ্গ সন্তান সন্ততি। চোখের সামনে নিজ সন্তানদের এমন পরিনতি দেখে নীরবে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
আসুন আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলি দূষণ মুক্ত সমাজ। আসুন এই পৃথিবীকে আমরা শিশুদের বাস যোগ্য করে তোলার অঙ্গীকার এ আবদ্ধ হই সবাই মিলে। কোনো দূষণ জাতীয় কোনো দ্রব্য পরিবেশে ছাড়িয়ে দেয়ার আগে আমরা ভাববো আমাদের পরর্বতী প্রজন্মের কথা। বিশেষ করে প্লাস্টিক এর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। আসুন আমরা এই মুহূর্তে প্রতিজ্ঞা করি প্লাস্টিক এর ব্যবহার বন্ধ করব। হাতে হাত রেখে আমরা এগিয়ে আসব আমরা এই সুন্দর পৃথিবীকে আরো সুন্দর থেকে সুন্দরতর করে তুলতে।