বিপদজনক ফ্রায়েড চিকেন
শহরে তো বটেই শহরতলি বা মফঃস্বলেও এখন ফ্রায়েড চিকেনের রমরমা। আমরা অনেকেই এই ফ্রাইড চিকেন বা ফ্রাইড ফিশ খেতে খুব ভালোবাসি। কিন্তু অতি সুস্বাদু এই খাবার নারীদের মৃত্যু ঝুঁকি অনেকখানি বাড়িয়ে দেয় বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে মেনোপজ পরবর্তী নারীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এই ফল পাওয়া গেছে।
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় দাবি করা হয়, যেসব নারী প্রতিদিন ফ্রাইড চিকেন খান তারা উচ্চ মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছেন। এক্ষেত্রে যেসব নারী ফ্রাইড চিকেনসহ অন্যান্য ভাজাপোড়া খাবার খান না তাদের তুলনায় ফ্রাইড চিকেন খাওয়া নারীদের মৃত্যুর ঝুঁকি শতকরা ১৩ ভাগ বেশি। একমাত্র ক্যান্সার ছাড়া আর কোন রোগেই এত মৃত্যু ঝুঁকি নেই বলে গবেষণাটিতে জানানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিয়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওয়েই বাও এর নেতৃত্বে এই গবেষণা পরিচালিত হয়। ওয়েই বাও বলেন, ‘আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বজুড়েই ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া খুব সাধারণ একটি ব্যাপার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বলতে হয়, স্বাস্থ্যের উপর এসব খাবারের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে আমরা খুব কমই জানি।’
ভাজাপোড়া খাবারের সঙ্গে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে করা এ ধরনের পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম করা হয়েছে বলে ধারণা করেন ওয়েই বাও।
যদিও এর আগে করা গবেষণাগুলোতে বলা হয়েছে, বেশি পরিমাণে ভাজাপোড়া খাবার গ্রহণের ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
গবেষকরা উল্লেখ করেন, ভাজাপোড়া খাবার বিশেষ করে ফ্রাইড চিকেন এবং ভাজা মাছ স্বল্প পরিমাণে খেলে অবশ্য তেমন কোন ক্ষতি হয় না। বরং তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হিসেবেই প্রতীয়মান হয়েছে।
এদিকে ২০১৭ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে এক একবারের বেশি আলুভাজা খান তাদের মৃত্যু ঝুঁকি যারা খান না তাদের তুলনায় দ্বিগুণ।
বাও এর নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষক দলটি ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ৪০টি ক্লিনিকের ৫০ থেকে ৭৯ বছর বয়সি প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার নারীদের খাদ্যাভ্যাস পর্যবেক্ষণ করেন।
যেসব নারী নিয়মিত ভাজা মাছ গ্রহণ করেন তাদের মৃত্যু ঝুঁকি শতকরা ৭ ভাগ বেশি। এছাড়া নিয়মিত ফ্রাইড চিকেন খেলে মৃত্যুর ঝুঁকি শতকরা ১৩ ভাগ এবং হৃদরোগে মৃত্যু ঝুঁকি শতকরা ১২ ভাগ বেড়ে যায়। তবে ভাজা মাছের ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকি কিছুটা কম রয়েছে।
বাও জানান, ভাজাপোড়া খাদ্য স্বাস্থ্যের উপর কি ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তা নির্ভর করে খাদ্যের ধরন এবং এটি ভাজার প্রক্রিয়ার উপর। পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন,বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগীদের জন্য মাছ উপকারী তবে তা অবশ্যই ভাজা হিসেবে নয়।
গবেষকরা জানান, যদিও এই গবেষণাটি কেবল নারীদের উপর করা হয়েছে কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রেও একই ফলাফল প্রযোজ্য। এর আগে ভাজাপোড়া খাবারের ক্ষেত্রে করা অন্য গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে এগুলো নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
এদিকে বাও বলেন, নতুন এই গবেষণার ফলাফল সারা বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানুষের খাবার ভাজার পদ্ধতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন, স্পেনে রান্নার ক্ষেত্রে জলপাই এর তেল ব্যবহার করা হয়। সুতরাং সেখানে মৃত্যুর ঝুঁকি একই রকম নাও হতে পারে।