মহাকাশেও দুষ্টুমি চিনের!
সীমান্তে চোখ রাঙানোর পাশাপাশি ভারতের উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থার (স্যাটেলাইট) উপরেও লাল চক্ষু চিনের। ২০০৭ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ভারতের স্যাটেলাইট ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে একাধিক বার আক্রমণ চালিয়েছে তারা। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ২০১৭ সালেও একই ধরনের হামলা চালানো হয় বলে সূত্রের খবর।
২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভারতীয় স্যাটেলাইটে হামলা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তুলে ধরে ১৪২ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএএসআই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহাকাশে স্যাটেলাইট প্রতিরোধ প্রযুক্তি রয়েছে চিনের। তার মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মহাকাশ প্রযুক্তি এবং নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৃথিবীকে অনুসরণ করে চলা স্যাটেলাইটের ওপর হামলা চালায় তারা। এসব কাজের জন্য চিনের কাছে রয়েছে কো-অর্বিটাল স্যাটেলাইট, যা মূলত শত্রুপক্ষের কৃত্রিম উপগ্রহকে অনুসরণ করে। তাদের স্যাটেলাইট প্রতিরোধকারী ক্ষেপণাস্ত্র, জ্যামার্স এবং সাইবার অস্ত্রও রয়েছে। যা দিয়ে শত্রুপক্ষকে সম্পূর্ণরূপে স্তব্ধ করে দিয়ে হামলা চালানো যায়। চিনা সেনাদের হাতে এর মধ্যেই বিশেষ প্রযুক্তি এসেছে। সেসব প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে ভারতের স্যাটেলাইটের ওপর দফায় দফায় হামলা চালানো হলেও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) প্রযুক্তি নিরাপদেই রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরোর প্রধান কে শিভন। তার মতে, ভারতের একটি স্বাধীন এবং বিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের নজর থেকে দূরে রাখা হয়েছে। ইন্টারনেটের সঙ্গেও সেটি সংযুক্ত নয়। তাই ওই প্রযুক্তি নিরাপদেই রয়েছে।
ইসরোর সূত্র বলছে, স্যাটেলাইটগুলোতে সাইবার হামলা চালানোর ক্ষেত্রে সতর্কবার্তা পৌঁছে দিতে বিশেষ প্রযুক্তি রয়েছে ইসরোর কাছে। তাই চিন এরকম হামলা ঘটিয়ে থাকলেও সফল হতে পারেন তারা। তবে চিনও হাত গুটিয়ে বসে থাকার পাত্র নয়। ইতোমধ্যেই উন্নত ধরনের সাইবার হানা প্রযুক্তি তৈরি করে ফেলেছে তারা।
চিনা বিজ্ঞানীরা শত্রুপক্ষের মহাকাশযান বা স্যাটেলাইট হাইজ্যাক করা বা তার প্রযুক্তি বিকল করে দিতে সক্ষম। সেজন্য মাটিতে, আকাশে এবং মহাকাশে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি জ্যামার তৈরিতে বিনিয়োগ করেছে তারা। তার মাধ্যমে আপ লিঙ্ক, ডাউন লিঙ্ক, ক্রস লিঙ্কগুলিকে নিশানা করে শত্রুপক্ষের মহাকাশ প্রযুক্তিগুলিকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম তারা। সেখান থেকে তারা তথ্য চুরিও করে নিতে পারে। যদিও এই বিষয়গুলি অতি গোপনীয় হওয়ায় অন্য দেশ তথা দেশের সাধারণ মানুষজন খুব বেশি কিছু জানতে পারেন না।
প্রসঙ্গত, সিএএসআই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি থিংকট্যাংক সংস্থা। মার্কিন সরকারের সচিব, চিফ অফ স্টাফ, বিমান ও বিশেষ বাহিনীর শীর্ষস্থানীয়রা এখানে পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়াও তাদের সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হয়ে উঠতে পারে, বিচার-বিবেচনার মাধ্যমে তা নিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর ও সরকারের অন্যান্য বিভাগের নীতি নির্ধারণকারীদের পরামর্শ দেয় সংস্থাটি।