মহাপুরুষ এবং যুবক অথবা স্বর্গ সন্ধানে মানুষ!
বিদ্যুৎ দেব ##
ঈশ্বরে কৃতজ্ঞ হও, তার কাছেই মানুষের সব ঋণ। প্রাণের আগের দেওয়া কথা ভুলে যাওয়া পাপ। সুখের এক মাত্র ঠিকানা মন্দির। মন্দিরে আসুন এবং সুখী হোন। অর্জিত অর্থ সেবায় দান করুন। ঈশ্বরের সেবায়।
শুনছেন শ্রোতারা আর চোখ মুছেন কেউ কেউ। হাত চালান দেয় পকেটে, কেউ কেউ। ধাতব মুদ্রা আর কাগজ সংগ্রহ করেন গুরু-শিষ্য। অন্ধকার মাড়িয়ে মহাবিদ্যালয়ে পা দেয়া যুবকের সংখ্যা গুনার মত।
যা ছিলো-আছে -থাকবে। সুখ বিষয়ে জানার থাকলে আগ্রহনামা প্রেশ করার অনুরোধ জানান উপস্তিত মহাপুরুষ ।
কম সংখ্যা হাত উপরে উঠে আবার নেমে যায়। ভক্তদল শব্দ প্রতিবন্ধি হয় ক্ষণ সময়ে।
যুবকের হাত উঠে। কিছু জানতে চায়। প্রশ্ন করতে চায়। হাতে স্পিকার। বলতে থাকে।
” গুরু, সময়ে মানুষ বদলায়, ঘুমানোর আগে মন আয়নায় দেখে নিলে দেখা যায়? এক ব্যক্তি আগে চোর ছিলেন, এখন সিদ্ধপুরুষ। প্রেমিকার প্রতারণায় নিয়েছেন ব্রহ্মচর্য। অথচ তার কর্মে স্বয়ং সেই আত্মহত্যা করতে গিয়ে ফিরে আসে বার বার । অথচ নিজেকে নাই করে নেয় তার জন্মদাতা পিতা পরমেশ্বর। “
স্পিকারে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়!
শান্ত স্বর উচ্চারিত হয় গুরুর মুখে, ” প্রমাণ ছাড়া বাক্য বলতে নেই । শব্দই ব্রহ্ম। উচ্চারিত বাক্য ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা মানুষের নেই। পাপ বাড়ায় এমন বাক্য উচ্চারণ না করায় শ্রেয়। এই সব পাপ তুমি জানো?”
স্পিকার ছাড়াই যুবকের মুখে উচ্চারিত হয় শব্দ,” উপদেশ দেয়া সহজ, হৃদয়ঙ্গম করা কি সহজ?”
সরল প্রশ্ন -উত্তরের আবেদন করে যুবক।
আপনি মহাপুরুষ, আপনার ভাই সুদের কারবার কেন করে?
-এর দায় আমার ভাইয়ের। ওর কর্ম ওকেই শাস্তি দিবে। নানান কিছিম নরকে শাস্তির বৃত্তান্ত শুনে শ্রোতারা।
-আপনার কোন দায় নেই? ভাইকে ঠিক করুন আগে , তারপর উপদেশ দিন, পরিবর্তন করুন প্রতিবেশী, পাড়া, গ্রাম, সমাজ, তারপর হোন সর্বজনীন ।
– যেমন?
আবার প্রশ্ন করেন যুবক, ” আমাকে ঈশ্বর দর্শন উপায় সমূহ বলুন!”
-শ্রাস্ত্র পড়ো, বিশ্বাস নিয়ে পড়ো, অবশ্যই পাবে। তিনি নিরাকার কিন্তু সমগ্রে বিরাজমান। তিনি পরম দয়ালু। তিনি কাউকে নিরাশ করেন নাহ। আশ্রয় গ্রহণ করো, মুক্তি লাভের কোন সংশয় করোনা।
যুবকের চোকে জল মুছেন, আর বলে উঠে,” গুরু, আপনার ঈশ্বর গত এক বছর ধরে আমার বাসায় ভাত রান্না করেন, অথচ আপনি অদৃশ্য ঈশ্বর দর্শনে ব্যাকুল? এটাই যদি সত্য হয় জগতে মিথ্যা কি আছে আর জানাবেন।?
মন্দির ঘরে ভক্ত শ্রোতাদের চোখ এক হয় যুবকের দিকে অদৃশ্য আলোর রেখা পড়ে।
দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন, ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধা। অভয় দেন গুরুকে।” বাবা আমি আসতে চাইনি এই যুবক আমাকে বাধ্য করেছে। সুখে থাকো বাবা,তোমার কল্পিত ঈশ্বর তুমি লাভ করো। অন্তত তোমার কাছে নেই আমি, থাকতে চাইবোও না । তোমার জন্য আমি স্বামী হারা এবং বিধবা।পূনরায় জন্মান্তর কোন ব্যপার থাকলে আমি তোমার মত মহাপুরুষ জন্মদিতে চাইবো না আর । আমি চাইব দায়িত্বশীল পুত্র। তিনি আরো বলে আর চোখের জল ছেড়ে দেন, ” পারলে তোমার ভাইকে সুদের কারবার হতে ফিরিয়ে আনো। আলোর পথে আনার চেষ্টা করো। আমি সুখে আছি এবং স্বর্গ পেয়ে গেছি । এই যুবকের বাসা আমার স্বর্গ এবং এটাই আমার মন্দির। আমাদের স্বর্গে আরো ৫ জন দেবতা আছেন। এই যুবকের দেবতা।
কোন দিন সময় হলে এই স্বর্গ দেখে এসো। ওখানে অনাবিল সুখ এবং পরম আনন্দ। আমাদের ঈশ্বর আমাদের সব কিছুর দায়িত্ব নিয়েছেন । তাই আমাদের ঈশ্বরের সন্ধান করতে এই সব কৃত্রিম মন্দিরে আসতে হয়না। তার প্রয়োজন ও হয়না।
তোমাকে আমাদের স্বর্গে অগ্রিম স্বাগতম, অপেক্ষায় থাকবে তোমার জন্য এই যুবকের “আলোর বৃদ্ধাশ্রম।”
উপস্তিত ভক্তদের চোখে আবারো জল দেখা যায় ।
ভক্তদের ভক্তি বাড়ে অথবা ঘৃণা। ভক্তি আর ঘৃণা এক কক্ষে নৃত্য করে ভক্তদের সামানেই। যুবক এবং নত মস্তকে সামনে বসা গুরুদেবের অবয়বের দিকে চোখ স্ব স্ব দ্বায়িত্ব নিয়ে দেখে নেয়। কেউ কেউ ভুলে যায় চোখের জল মুছা এবং অবিরাম জল ঝরতে দেয়ার সব নিয়ম।