যাহা বলিব সত্য বলিব

 চিত্রা দাশগুপ্ত #

মানুষ মিথ্যা কেন বলে—? কঠিন প্রশ্ন ….আরে বাবা মিথ্যা কি আর একটা কারণে বলে, হাজার কারণে মানুষ মিথ্যা বলে ! এক একটা বয়েস, এক এক রকম কারণে মানুষ প্রয়োজন বিশেষে রকম-ফের মিথ্যা বলে থাকে। এক মিথ্যা ঢাকতে হাজার মিথ্যা বলে। তবে অল্প বিস্তর মিথ্যা আমরা সকলেই দরকার মত বলে থাকি। 

শৈশব কাল থেকে মানুষের মধ্যে মিথ্যার চাষ শুরু হয়। অতিরিক্ত কঠিন শাসন, অবহেলা বা অপূর্ণ-চাহিদা পুরণের জন্য শিশু মিথ্যা বলে। সামান্য দোষে বা ভুলে গুরুতর সাজা, প্রহার, বকুনির ভয়ে মিথ্যা বলে। অনেক সময় নিজের প্রাধান্য পাওয়ার জন্যও মিথ্যা বলে। একটু আদর একটু মনোযোগ  পাওয়ার জন্য অনেক সময় বাচ্চারা হাত-ব্যথা, পেট- ব্যথা গোছের মিথ্যা বায়না কান্না জোড়ে যাতে মা-বাবার সান্নিধ্য পায়। শুরু থেকে যদি আমরা এ সব বিষয় নজর রাখি বা তাদের মিথ্যার প্রশ্রয় না দিয়ে ভালো মত সহানুভূতির সাথে বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলি ও প্রতিকার করি তবে কিন্তু বাচ্চাদের মিথ্যা বলার প্রবনতাটা বাড়তে পারে না।

পরবর্তী কালে ছাত্রাবস্থায় অভিভাবক বা শিক্ষক অ‍তিরিক্ত চাপ দিলে সেটা নিতে না পারলে, পরীক্ষার ফল আশানুরূপ না হলে শাস্তির ভয়ে ছাত্ররা মিথ্যার আশ্রয় নেয় বা অসাধু পথ গ্রহণ করে।

যৌবনে নিজের আকাঙ্ক্ষিত পথের বাঁধা সরিয়ে নিজের লক্ষ্যে পৌছবার জন্য অনেকেই ‍‍অনেক মিথ্যার সাহায্য নিয়ে থাকে। নিজের স্বার্থ সিদ্ধির 

জন্য,পজিশন রক্ষা, দুর্বলতা ঢাকার জন্য মিথ্যা বলতে তাদের আট়্কায় না। হীনম্মন্যতা বোধ থেকে যে গ্লানি অনুভূত হয় তার থেকে মুক্তি পেতে মিথ্যার পথ ধরে ও এক মিথ্যা ঢাকতে হাজার মিথ্যার জালে জড়িয়ে পড়ে এবং হামেসাই তার পরিণতি হয় খুব বিপদ-জনক।

পেশা-গত কারণে ‍অনেকে মিথ্যা বলেন,সেটা তাদের পেশা গত অধিকার। 

আদালতে মামলা মোকদ্দমাতে ,নানা রকম কথার কৌশলে সাদাকে কালো, কালোকে সাদা আকছার প্রমান করা হচ্ছে। বড় বড় কোম্পানিরা 

তাদের পণ্য বিক্রির জন্য রঙিন মোড়কে পুরে মিথ্যা প্রচার করে, সেটা অবশ্য অ‍র্ধ সত্য, সত্য মিথ্যার মাঝামাঝি। স্বার্থ সিদ্ধি করার জন্য 

সত্যবাদী  যুধিষ্ঠির ও মিথ্যার পথে হেঁটেছেন,

“ অশ্বথমা হত (ছোট্ট করে বলা) ইতি গজ”! এই ইতি গজ অর্ধসত্যটা তার স্বান্তনা’এ তো আমরা সবাই জানি ।

লোভের বসে অনেক প্রোমোটার, সিভিল- ইঞ্জিনিয়াররা মিথ্যার মুখোশের আড়াল থেকে নানা রকম হেরাফেরি করায় কত দূর্ঘটনা আমরা দেখি। 

লোভে পড়ে অনেক শিক্ষিত সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত মানুষ ও মিথ্যা তথ্য ও পরিচয় পত্র ব্যবহার করে বা বে-নামিতে নানা রকম সুযোগ সুবিধার অপব্যবহার করে থাকে। 

জঠর জ্বালায় মানুষ মিথ্যা বলে, মান বাঁচাতে মিথ্যা বলে, প্রাণ বাঁচাতে মিথ্যা বলে। অনেক সদয় ব্যক্তি অপরের মান-প্রান বাঁচাবার জন্য ও মিথ্যা বলেন । 

 দেশের কল্যানের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি যারা গুপ্তচর নামে পরিচিত তারা ও মিথ্যা পরিচয় মিথ্যা কথার আড়ালে দিন কাটান।

অতি-বৃদ্ধ বা আ্যমেনশিয়া রোগীও স্মৃতিভ্রংশ হয়ে মিথ্যা কথা বলে থাকেন। 

কথাই আছে অপ্রিয় সত্য বলিও না! তার মানে পরোক্ষে প্রিয়র্থে মিথ্যা বলা

চলবে। ঠিক তাই, সাহস দেবার জন্য মনের জোর উদ্বুদ্ধ করার জন্য অ‍নেক  ক্ষেত্রে মিথ্যা আশ্বাস খুব সুফল দেয়, সে মিথ্যা অনিন্দনীয় !

যে মিথ্যা অন্যের ক্ষতি করেনা বা প্রাণহানি ঘটায় না তেমন মিথ্যায় দোষ নেই। যাদের মন বল একটু কম তাদের উৎসাহিত করার জন্য তাদের কাজের একটু মিথ্যা প্রসংশা একটু মিথ্যা তারিফ করে ,”ভাল করছ” ,”ভালো হচ্ছে” বললে অনেক সময় তাদের মধ্যে আত্মপ্রত্যয় বা কনফিডেন্স জাগে এবং দেখা যায় তারা সত্যি সত্যি উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে। রোগীর মনোবল বাড়াবার জন্য ডাক্তারের মিথ্যা প্রবোধ, “আজ ভলো আছেন, ওষুধ কাজ করছে —” রোগীর ফাইটিং স্পিরিট বাড়িয়ে তোলে যেটা সুস্থ হবার জন্য খুব জরুরী।

মনের কল্পনায় রঙ মিশিয়ে মিথ্যা স্বপ্নের জাল-বুনে রচিত হয় কত কাব্য কবিতা। মিথ্যা অবাস্তব, আজগুবি সাইন্স ফিকশন লিখে কত লেখক/লেখিকা নামি দামী হয়ে আজ খ্যাতির শিখরে অধিষ্ঠিত !

সত্যি মিথ্যা ‍অনেক সময় রূপ পাল়্টায়। কুসংস্কারের জন্য একদিন যা সত্যি বলে মানুষ ভেবেছে নানা রকম গবেষণার মাধ্যেমে বিজ্ঞানীরা তা মিথ্যা প্রমাণ করেছেন, বিশেষ করে অসুখ বিসুখের ক্ষেত্রে তার অনেক প্রমাণ আমরা পেয়েছি। পরিস্থিতি ও উপস্থাপনার ওপর নির্ভর করে  মিথ্যা সত্যি ও সত্য মিথ্যা হতে পারে ,যে যে ভাবে দ্যাখে, যেমন আমার চোখে যে জলের গ্লাস ‍অর্ধেক ভর্তি, সেটা অন্যর কাছে অর্ধেক খালি মনে হতে পারে। দাবার বোর্ড আমি বলি সাদা কালো চেক্ আপনার কাছে তা কালো সাদা চেক্ হতেই পারে! বড় জটিল ব্যাপার !

আমার কাছে ১লা এপ্রিল মিথ্যা ঠকিয়ে এপ্রিল ফুল বানানোর প্রথমটা বেশ মজার লাগে। তবে সাবধান “ঝুঠ বলে কাউয়া কাটে….” মিথ্যা বললে“পিনাচিও”র মত নাক লম্বা হয়ে যায় ….( ফেয়ারি-টেলের গপ্প),

তাই শপথ করে বলছি যাহা বলিব সত্য বলিব ….ভ্যাট বকিব, কিন্তু মিথ্যা বলিব না।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × five =