রহস্যময় দ্বীপ
বিশ্ব জুড়ে বহু রহস্যময় জায়গা রয়েছে যে গুলো অন্যান্য জায়গার চেয়ে একেবারেই আলাদা।এসব জায়গায় নিউটনের মহাকর্ষণ সূত্র ও কম্পাসও কাজ করে না। অজানা কোন কারণে এসব এলাকায় ঘটে নানা রকমের অদ্ভুত ঘটনা। প্রখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ ইভান স্যান্ডারসন এই রহস্যময় অদ্ভুত জায়গাগুলোর নাম দিয়েছেন ‘ভোরটেঙ্’। যার অর্থ ঘূর্ণিপাক। সাধারণত ঘূর্ণিপাক জলেরই হয়ে থাকে। তবে স্যান্ডারসনের এই ঘূর্ণিপাক জলের নয়, চেতনা-বোধের। বিজ্ঞানী ব্র্যাড স্টেইজার এমন রহস্যময় জায়গাগুলোকে অভিহিত করেছেন ‘উইন্ডোএরিয়া’ বলে। প্রশান্ত মহাসাগরের কোলে ‘বাল্ট্রাদ্বীপ’ তেমনই এক রহস্যময় জায়গা।
প্রকৃতির বিচিত্র সৃষ্টি রূপে বেশ কিছু এলাকা অমীমাংসিত রহস্য হিসেবে আজ পর্যন্ত বিস্ময় জিইয়ে রেখেছে। এর মধ্যে সব চাইতে উল্লেখযোগ্য হল বাল্ট্রা। এটি ইকুয়েডরের গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের একটি বিশেষ দ্বীপ। বাল্ট্রা মূলত মানববসতি শূন্য একটি দ্বীপ। দ্বীপটি দক্ষিণ সিমুর(লর্ড হিউ সিমুর-এর নামে) নামেও পরিচিত। দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের নিকটবর্তী ১৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ। আর এই ১৩টি দ্বীপের একটি হচ্ছে বাল্ট্রা। আকার প্রকারেও খুবই ছোট, মাত্র ২১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত এই দ্বীপ।
কিন্তু এখানকার অন্য ১২টি দ্বীপ থেকে বাল্ট্রা একেবারেই আলাদা, অদ্ভুত এবং রহস্যময়। এই দ্বীপে কোনও বড় গাছপালা, প্রাণী বা কীটপতঙ্গ সেভাবে নেই। বাল্ট্রা এবং তার পাশের দ্বীপ সান্তাক্রজের মাঝে তিনফুট গভীর ও কয়েক ফুট চওড়া একটি খাল আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের বাল্ট্রা সহ দুটি দ্বীপে বিমানঘাঁটি স্থাপন করে ইউএস সরকার। এরপর থেকেই বিশ্ববাসী জানতে পারে বাল্ট্রা দ্বীপের এই অদ্ভুত রহস্যের কথা। এখনও এই বিমান বন্দরের মাধ্যমে বহির্জগতের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বাল্ট্রার। আসেন পর্যটকেরাও। ফ্রান্সিস ওয়ানার ছিলেন এই বিমানঘাঁটিরই তৎকালীন একজন দায়িত্বরত আধিকারিক। এই দ্বীপপুঞ্জে থাকাকালীন অদ্ভুত সব ঘটনা আর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তিনি। যেগুলো পরবর্তী সময়ে বিভিন্নপত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলে জনমানসে প্রবল কৌতূহল এবং বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়। তিনি লিখেছেন, ‘জীবনের সবচেয়ে বড় বড় বিস্ময়কর ঘটনাগুলোর মুখোমুখি হয়েছি আমি বাল্ট্রা দ্বীপে গিয়ে’।
একটা নয় দুটো নয়, একের পর এক অসংখ্য অবিশ্বাস্য সব ব্যাপার ঘটেছে তাঁর চোখের সামনে। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তিনি শুধু দেখেই গেছেন এ সব, কোনও যুক্তিযুক্ত উত্তর বা ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি। তাঁর মতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি শক্তি কাজ করছে দ্বীপটির ভেতর। যার প্রভাবে ঘটেছে একের পর এক রহস্যময় ও অবিশ্বাস্য ঘটনা।<br /><br />চলছে বর্ষাকাল, হচ্ছে প্রচণ্ড বৃষ্টি তারপরও খোলা আকাশের নিচে থাকা মাটিতে পড়ে না বৃষ্টির ফোঁটা। এও কি সম্ভব? তাক লাগানো ব্যাপার হলো পুরো বাল্ট্রা দ্বীপেই বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে না। এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জ হওয়ায় এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়। কিন্তু কোন এক রহস্যজনক কারণে বাল্ট্রার উপর বৃষ্টি হলেও তা সরাসরি নিচে না পড়ে অন্যপাশে গিয়ে পড়ে।বৃষ্টি যত প্রবলই হোক এ যেন এখানকার এক অমোঘ নিয়ম।
বাল্ট্রাতে এলেই অস্বাভাবিক আচরণ করে নাবিক বা অভিযাত্রীর কম্পাস। দিক নির্দেশক কম্পাস এই দ্বীপে ঠিকমতো নির্দেশনা দেয় না। সবসময় দিক-নির্দেশকারী কম্পাস এখানে এলেই থমকে দাঁড়ায়। দিক-নির্দেশক কাঁটা ইচ্ছেমতো ঘুরে দিক নির্দেশনা দেয় উল্টোপাল্টা।আরও রহস্যজনক বিষয়হলো বাল্ট্রা দ্বীপের ওপর বিমান যাওয়ার সময়েও নিয়ন্ত্রনহীন আচরণ করে বিমানের কম্পাসও। দ্বীপ পার হয়ে গেলেই সব ঠিকঠাক চলে।<br />আরেকটি তাক লাগানো ব্যাপার বাল্ট্রায় পা রাখা মাত্রই যে কোন যাত্রীর মাথা হালকা হয়ে যায়। অজানা-অচেনা কোন এক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার আশ্চর্য রকম অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। দীর্ঘক্ষণ এ দ্বীপে থাকলে, দ্বীপ থেকে চলে আসার পর কয়েকদিন সেইঅনুভূতি থেকে যায়। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়।
আশেপাশের প্রতিটি দ্বীপেই রয়েছে সিল মাছ, ইগুয়ানা, দানবীয় কচ্ছপ, গিরগিটিসহ বিরল প্রজাতিরপ্রাণী। বাল্ট্রাতে নেই কোন প্রাণী , উদ্ভিদ বা কীটপতঙ্গও। নেই কোন মানুষের বসবাস। অদ্ভুত এ বাল্ট্রা দ্বীপে কোনো পশুপাখি আসতে দেখা যায় না। জোর করে এলেও কোনো পশুপাখিকে বসতি করানো যায়নি। দেখা গেছে,বাল্ট্রাকে এড়িয়ে পাশের দ্বীপ সান্তাক্রুজের ধার ঘেঁষে চলে যায় সব প্রাণী। শুধু তাই নয়, উড়ন্ত পাখিরাও বাল্ট্রার কাছে এসেই ফিরে যায়। মনে হয় যেন কোনো দেওয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে ওরা। পরেও অসংখ্য মানুষ গিয়েছেন এই দ্বীপে বেড়াতে বা কাজে। তারাও মুখোমুখি হয়েছেন এমনই নানান বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার।এই দ্বীপের রহস্যের কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাননি বিজ্ঞানীরা।
কি? যাবেন নাকি একবার এই রহস্যময় দ্বীপে। এত কথা শোনা থুড়ি পড়বার পর সে ইচ্ছে হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে কিন্তু একটা আবদার রইল আমাদের তরফ থেকেও, ফিরে এসে সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটা আমাদের পাঠকদের সঙ্গেই ভাগ বাঁটোয়ারা করতে হবে
কি অদ্ভুত এই দ্বীপটি। আমার পড়ে খুব ভাল লাগল।