শরতে শৈশবের একাল সেকাল
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ##
ভাদ্র সবে হয়ত গড়িয়েছে গুটিগুটি দিনকয়েক। সাকুল্যে বড়োজোর পক্ষকাল। নীল ঝকঝকে আকাশের অধিকার তখনো খুঁজে পায়নি পেঁজা তুলোর মত মেঘগুলো। প্রায়শঃ আকাশ জুড়ে বিছিয়ে থাকে ডাস্টার দিয়ে সদ্য মোছা স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডটির মত ধূসর মেঘ। পুরু। ঘন। ওভাবেই কখনো কখনো একটা স্যাঁতসেঁতে ঘেরাটোপে বেবাক দিন মুখভার করে থাকতো আকাশটা। কোনোকোনো দিন আবার হয়ত সারাদিন অবিরাম ঝুপঝুপ বর্ষণ। যেদিন তাপ ঝরিয়ে, চড়চড়িয়ে রোদ উঠতো, শরীরটা তেতে পুড়ে গলদঘর্ম হয়ে উঠলেও, একমুঠো রোদ ঠিক চোখের জানালা গলে মন দুয়ারে গিয়ে হাঁক পাড়বেই — ” দেখো দেখো, তাকিয়ে দেখো পুজো এলো বলে.…..”
মনেমনে বলতাম, সে তো এখনো অনেক দেরি। গোটা ভাদ্র যাবে, আশ্বিন আসবে, তারপর…..।
তবুও রোদের গন্ধ শুকে দেখি। ওমা, সত্যি তো, এ যে দেখি নতুন জামার গন্ধ।
তখনো পাঁচটা অঙ্ক করা বাকি। রতনস্যারের ক্লাস আছে। করে না নিয়ে গেলে পিঠে গুদুম গুদুম। সঙ্গে শতখনেক বার কানধরে ওঠবোস ফাউ। তবুও রইলো পড়ে অঙ্ক। এক ছুটে বাগানে। সত্যি তো এ কদিনে একবারের তরেও তো খোঁজ নিয়ে দেখা হয় নি! কবে শুরু হলো শিউলি ঝরা? দুটো তুলে নিয়ে নাকের তলায় দিতেই যেন ….. দিনের আলো তখনো অধরা এমনি এক সকালের তন্দ্রাচ্ছন্ন চেতনায় শোনা সেই অলৌকিক উচ্চারণের প্রতিধ্বনি শুনতে পেলাম — “আশ্বিনের শারদ-প্রাতে বেজে উঠেছে আলোক-মঞ্জীর; ……”
আশ্বিন মাস আসতে আর কত দেরি আছে? বাংলা মাস আর তার দিনক্ষণ নিয়ে মাথা ঘামাবার তো বিশেষ প্রয়োজন পড়েনা। ওটা মা ঠাকুমার ব্যাপার — এ ব্রত, সে ব্রত, অমাবস্যা, পূর্ণিমা — খোঁজখবর তাই রাখতেই হয় তাদেরকে। ছুটলাম ঠাকুমার কাছে। গালে দাঁত নেই। পানের নেশা। হামান-দিস্তায় পান থেঁতো করে খায়। হয়ত সেটাই করছিল। কোনো ভনিতা নয়। সরাসরি প্রশ্নে। “আশ্বিন মাস কবে পড়বে ঠাকমা?” সাড়ে তিন কুড়ি বয়সেও এতটুকুও রসের ঘাটতি ছিলনা ঠাকমার। মুখে সদা ফিকফিকে হাসি আর কথায় কথায় ছড়া কাটত।
” কেন দাদা…. ও বুঝেছি…. ‘আশ্বিনে অম্বিকা পূজা বলি পড়ে পাঁঠা/কার্তিকে কালিকা পূজা ভাইদ্বিতীয়ার ফোঁটা।/ অঘ্রানে নবান্ন দেয় নতুন ধান কেটে/পৌষ মাসে বাউনি বাঁধে ঘরে ঘরে পিঠে।”
আমি বিরক্ত হয়ে বলতাম, “আমি শুধু আশ্বিনের কথা জানতে চেয়েছি, ওর ভাইবোন পরিবারবর্গের ফিরিস্তি নয়।”
ঠাকুমা মজা পেয়ে হাসতে হাসতে বলতো, আচ্ছা বাবা আচ্ছা, তাই নয় হবে, আজ হলো গিয়ে সোমবার …পরের সোমবার …তারপর, আরো… তা’ ভাদ্রের এখনো বারো তেরো দিন আছে….”
“এত দিন?” আমি একটু নিরাশই হতাম। তার মানে পুজো আরো…. সবুর সইত না এক মুহূর্তও। তক্ষুনি ক্যালেন্ডার দেখে যেন নিশ্চিন্ত হতে হবে।
শুরু হতো দিন গোনা। আমি ঠিক টের পেতাম একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে রোদ। প্রতিদিন যেন আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠতো সোনারোদের চেকনাই। শিউলি তলায় আর দু চারটে নয়, কেউ যেন শ্বেতশুভ্র গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে। এক এক দিন সকালে হঠাৎ যখন ঘুম ভেঙে গিয়ে আর ঘুম আসতে চাইত না, বিছানা ছেড়ে উঠে পড়তাম। মা তখন উঠোনে ছরা দিত। আমাদের বাড়ির সীমানার পাঁচিল টপকে, দেবু ঘোষের পোড়ো বাগানটা পার হয়ে আরো কিছু দূর গিয়ে সহোদর ভায়ের মত যে দুটো নারকেল গাছ দাড়িয়ে আছে পাশাপাশি আমার জন্মের আগে থেকেই, তাদের মাথায় দিনের প্রথম রোদ ঝিলমিলিয়ে হেসে উঠতো আমাকে দেখে। একটু পরেই ওই শিশু রোদ তামাম দুনিয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়ে জানিয়ে দেবে উৎসব পানে আরো এক কদম এগিয়ে যাবার আনন্দ সংবাদ। কথাটা মনে আসতেই সেই আনন্দের প্রথম ঢেউ টা যেন আমাকেই ভাসিয়ে নিয়ে গেলো। আমি গুটিগুটি পায়ে সদর দরজা পেরিয়ে একফালি সবুজে পা রাখতেই যেন চমকে উঠতাম শিশিরের হিমেল-চুম্বনে। কোথা থেকে ম ম করা শিউলির গন্ধ ছুটে এসে জড়িয়ে ধরতো আমাকে। রাতপাহারা সাঙ্গ করে, ভালোবেসে আমারই পেতে রাখা বস্তাটায় অঘোরে ঘুমোচ্ছে কুকুরটা। এমন ভালোলাগায় বড্ড আদর করতে মন চায় কাউকে। ওর গলায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতাম।
স্কুলে বাংলার ক্লাসে খুব যত্ন করে তখন চলছিল “কপোতাক্ষ নদ”-এর পাঠ। আমার খুব প্রিয় কবিতা। কিন্তু সেদিন যেন মন নেই। জানালার ওপাশে সবুজ মাঠে তখন লুটোপুটি খাচ্ছে শরতের রোদ। উচ্ছল রোদে চঞ্চল হয়ে ওঠে মন। কানে ক্রমেই বিলীন হয়ে আসে “সতত হে নদ, তুমি পড় মোর মনে!/সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে; ..…. ছোট্ট শিশুর মতই একছুটে মন আমার তখন চলে যায় সেই প্রথম শৈশবে ফেলে আসা “সহজপাঠে” …. এসেছে শরৎ, হিমের পরশ/ লেগেছে হাওয়ার ‘পরে/ সকাল বেলায় ঘাসের আগায়/ শিশিরের রেখা ধরে।
আমাদের মফস্বল শহরটা তখনো এতটা ইট কাঠ কংক্রিটের একচেটিয়া হয়ে যায়নি। তখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে, আপনমনে থাকার যথেষ্ট স্বাধীনতা ছিল সবুজের। কত গাছপালা ছিল চারিদিকে। কতরকম পাখি দেখতাম সারাদিন। কাকভোরে আর শেষ বিকেলে গাছেগাছে পাখির দল কিচিরমিচির সুর তুলে ওদের ছোটছোট প্রাণের অনাবিল আনন্দ ওরা সবারসাথে ভাগ করে নিত। তখন বাতাসও ছিল অনেক স্বচ্ছ আর টাটকা। আজকের মত এতটা ঘোলাটে নয়। বাতাসের স্বাদটাও ছিল অন্যরকম। ফারাকটা আজ স্পষ্ট বুঝতে পারি।
আজ যেখানে অনেকটা জায়গা নিয়ে ঝাঁ-চকচকে বহুতল আবাসনটা দাড়িয়ে আছে, সেখানে তখন ছিল বিলের মাঠ। বর্ষার পর এই শরতে, ভরা দরিয়ার মত এমাথা থেকে সেমাথা টলটল করতো জল। চারপাশে জনবসতির চিহ্নমাত্র ছিলনা। জলের সীমানা যেখানে শেষ, তারপর থেকে যতদূর চোখ যায় শুধুই সবুজ আর সবুজ। এই শরতে সেই সবুজের অনেকখানি জায়গা জুড়ে ঢেউ তুলতো কাশের বন। যেদিন কোনো কারণে হঠাৎ করে স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যেত, চুপিচুপি সোয়া মাইল পথ উজিয়ে একছুটে পৌঁছে যেতাম বিলের মাঠে। হাঁ করে চেয়ে থাকতাম কাশের বনের অপরূপ তরঙ্গায়িত ছন্দময়তায়। দু চোখ মেলে অপলক। অমন মুগ্ধ চেয়ে থাকার মাঝেই হঠাৎ করে দেখতাম, দুই ভাইবোন রেলগাড়ি দেখতে কাশবনের মধ্য দিয়ে উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াচ্ছে। আমি ওদের ঠিক চিনতে পেরেছিলাম। ওরা পথের পাঁচালীর সেই অপু আর দুর্গা। একটা অচেনা উদ্বেলিত আনন্দে ছুট্টে গিয়ে আমিও হাত ধরতাম ওদের।
মনে পড়ে এই শরতেই প্রথম পড়ে ছিলাম পথের পাঁচালী। প্রথমে চমৎকৃত হলেও পরে দুর্গার ওভাবে অকালে ঝরে যাওয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। দুচোখ ছাপিয়ে অশ্রুর ঢল নেমেছিল গালে। নদী নালা খাল বিলের মতই শরতে শিশুমনও কানায় কানায় হয়ে থাকে। এমনসময়ে অমন সহজসরল প্রাণচঞ্চল একরত্তি একটা মেয়ের জীবনের ইতি টানা কি খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। কোন প্রাণে পারলেন বিভূতিভূষণ? একটুও কি দয়া মায়া নেই তার। আসলে তখন আমার নিতান্তই ছেলেমানুষ বয়স। নিয়তির হাতে মানুষের অনিবার্য বিপন্নতার এমন নিদারুণ অসহায় বাস্তবতাকে বোঝার মত বোধভাস্যি আমার ছিলনা বললেই চলে!
চুপিচুপি গেলেও আমার একাএকা বিলেরমাঠে যাওয়াটা কেমনকরে যেন একদিন জানাজানি হয়ে গেল বাড়িতে। যদিও চারপাশে আমার যেমনখুশি ঘুরে বেড়াবার স্বাধীনতায় তেমন কোনো বিধিনিষেধ ছিলনা। তবে ওই বিলেরমাঠের দিকে যাওয়ার ব্যাপারে বাড়ির দিক থেকে একটা আপত্তি ছিল। তবে সেটা ছিল প্রধানত: মায়ের দিক থেকেই। কারণ এমনিতেই ওই পথে মানুষজনের চলাচল কম, তার উপর মাঝখানে, পথের ধারে পড়ে একটা পরিত্যক্ত কবরস্থান। বড়রা বড় বলেই সেখান দিয়ে অনায়াসেই যেতে পারে কিন্তু ছোটদের নাকি যখনতখন যেতে নেই।
“বিলের মাঠে গিয়েছিলে?”
খবরের কাগজে চোখ রেখেই প্রশ্ন করেছিলেন বাবা।
ভাবলাম ধরা যখন পড়েই গেছি তখন শাস্তির কথা ভেবে আর লাভ কী, সত্যিটাই বলে দিই।
বললাম,”হ্যাঁ।”
“কেন গিয়েছিলে?”
“কাশবন দেখতে।”
“আর কী দেখলে?”
আর যা দেখেছিলাম সে তো সাদা চোখে নয়, মনের চোখে। সেটা বলতে গেলে আমার মস্তিষ্কের সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না তো? চুপ করে থাকাই শ্রেয় বোধ করেছিলাম।
বাবা কাগজটা ভাঁজ করে একপাশে সরিয়ে রেখে উঠে দাড়িয়ে বললেন, “চল, আজ আমিও তোমার সাথে বিলেরমাঠে যাব।”
শাস্তির বদলে স্বস্তি! না এতটা আশা করিনি। খুশি যেন আর আমার ধরেনা।
বাবা সেদিন বিলেরজলে পদ্ম আর শাপলা আলাদাকরে চিনিয়ে দিয়েছিলেন। আমি তাদের আলাদা করে চিনে যতটা না অবাক হয়েছিলাম তার থেকে অনেক বেশি হয়েছিলাম পদ্মগুলো দেখে। তার কারণটাও স্পষ্ট ছিল বাবাকে করা আমার জিজ্ঞাসায়।
“এইরকম একশ আটটা পদ্ম লাগে সন্ধিপুজোয়, তাইনা বাবা?”
বাবা মজা করে উত্তর দিয়েছিলেন,”তা লাগে, তবে সর্ষেবাটা দিয়ে শাপলা খেতেও মন্দ লাগেনা।
শরৎ মানেই পুজো আসছে। আর পুজো আসা মানেই নতুন জামা। আমাদের ছোটবেলায় দেখতাম প্রায় সব আত্মীয় স্বজনকে জনেজনে জামাকাপড় দেওয়ার একটা রেওয়াজ ছিল। অনেক খরচ। তাই খুব স্বাভাবিক কারণেই একাধিকের আকাঙ্খার কোনো প্রশ্নই উঠতো না, একেই সন্তুষ্ট থাকতে হতো। সেটা নতুন হলেই চলতো। এনিয়ে কারমনে আক্ষেপ বা অভিযোগও খুব একটা থাকত না। আসলে সেইসময়ে নতুন পোশাকের নাম, দাম, মান কিংবা সংখ্যার উপর মনের খুশির তারতম্য ঠিক ততটা নির্ভর করতো না। আর নতুন পোশাকটির তাৎপর্য ঠিক এভাবে দেখার চলও ছিলনা। বরং কাশফুল, সোনাঝরা রোদ, নীলাকাশে ভাসমান শ্বেতশুভ্র খণ্ড খণ্ড মেঘগুলোর মতই ওই নতুন পোশাকটাও ছিল উৎসবঘিরে নিরবিচ্ছিন্ন খুশির একটা অনুষঙ্গমাত্র।
সময়ের গতিশীলতার অনুশাসনে নাকি জীবনের প্ৰয়োজনভিত্তিক পরিবর্তনধর্মিতার নিয়মে — কী ভাবে বদলে যায় আমাদের সেই সময়গুলো যা একদিন আমাদের রক্তে-হাড়ে-মজ্জায় মিশে গিয়েছিল? এ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে কে কবে আর মাথা ঘামিয়েছে। বদলে যাওয়াটাকেই মেনে নিয়েছে একটু একটু করে।
আজ কত বদলে গেছে আমার শৈশবে দেখা সেদিনের সেই শরৎঋতু! যেমন বদলে গেছে আজকের শরতে সেদিনের সেই শৈশব!
তবু নিয়ম করেই প্রতিবছর এখনো শরৎ আসে। তবে চারপাশের সবুজহীন নিরেট কংক্রিটে প্রতিনিয়ত ঘষা খেয়ে খেয়ে সেদিনের সেই সোনারবরণ রোদকে যেন বড়ই ফিকে লাগে আজকাল। তবুও শৈশব আজো রোদ ধরতে চায় — জানলার দুটো গরাদ ধরে অব্যক্ত কাতরতায়। রোদের চোখে অশ্রু ঝরে। একটা নিরুপায় সিক্ত উষ্ণতা দুটি কচি হাত স্পর্শ করে যায় মাত্র। শিউলি ফুলের গাছটা কবেই কাটা পড়েছে। আজকের শিশুরা মোবাইলের ইউ-টিউবে পরিচিত হয় টাটকা শিউলি ফুলের সাথে। তাই শিউলির সৌরভ আর যেন ওদের আপনজন হয়ে উঠতে পারে না। আর ওই যে আধুনিক স্বাচ্ছন্দ্যের অতিকায় সুবিশাল আবাসনটি, যার কক্ষে কক্ষে ছোটছোট ফুলগুলো, উন্মুখ হয়ে থাকে তাদের শৈশবের ফুরিয়ে যাওয়ার প্রতীক্ষায়, তারা কি কোনোদিন জানবে যে এই আবাসনের অতীত ইতিহাসের গভীরেই এক বিলেরমাঠের টলটলে ধূ ধূ জলরাশি,নিজেকে উজাড় করে দেওয়া নিবিড় সবুজ আর নীলাকাশের বুকে অপরূপ ঢেউ তুলে যাওয়া উচ্ছ্বসিত কাশবনের মাঝে একদিন এক আত্মহারা শৈশব খুঁজে পেয়েছিল তার অবাধ মুক্তির ইপ্সিত পথ। হয়ত আজো, দূরে, আরো দূরে কোথাও আছে সেই বিলেরমাঠ — শুধু আজকের শিশুরা আর তার নাগাল পায়না। চুপিচুপি কোনোদিনই আর সেখান যাওয়া হবেনা তাদের। ছুটি হওয়ামাত্রই স্কুলগড়িটা তাদের পাকড়াও করে তুলে নিয়ে চলে যায়। বাড়ি ফিরেও ফুরসত কোথায়, পিঠে বইয়ের বোঝা নিয়ে টিউশনে যাওয়ার তাড়া।
তবুও আজো শরৎ আসে শৈশবে। বাবা মায়ের সাথে গিয়ে নামি নামি শপিং মলে দামী দামী সব পোশাক কেনা। একটা, দুটো, তিনটে…. যতগুলো মনে ধরে। বাড়িতে ফিরে আবার অনলাইনে অর্ডার। আহা, ওদের এই শৈশবটা তো আর ফিরে আসবেনা! তারপর বড়ো বড়ো রেস্তোরাঁয় চাইনিজ অথবা কন্টিনেন্টালে উদরপূর্তি সমাপন করে, একগাদা খেলনা কিনে, নিজেদের বাতানুকূল গাড়িতে চেপে ঘরমুখী হওয়া। তখনো হয়ত দিনের আলো ফুরিয়ে যায়নি। ক্লান্তিতে শিশুটা মায়ের গায়ে নিজের শরীরটা এলিয়ে দিয়ে নিশ্চুপ চেয়ে থাকে বাইরে। বন্ধ জানালার রঙিন কাঁচ বদলে দেয় আকাশের নীল, মাঠেঘাটের সবুজ, ফুলবাগানের লাল-হলুদ-বেগুনী। বাইরের সবকিছুই যেন রংচটে কৃত্রিম, বিবর্ণ। কিন্তু বিবর্ণতার ওই রং যে বড়ই চেনা ওই শিশুর কাছে। ও রং যে তার শৈশবেরই। তাই ক্লান্তি আরো গাঢ় হয়ে আসে। ঘুমিয়ে পড়ে। তখনো বিষন্ন শরৎ শৈশবের একটু ছোঁয়া পাওয়ার ব্যাকুলতায় চলন্ত গাড়ির বন্ধ জানালায় নিস্ফল ডানা ঝাপটিয়েই চলে।