হারিয়ে যাওয়ার খবর এলো
মানবেশ মিদ্দার, জতরাম, পূর্ব বর্ধমান ##
পথ চলতে চলতে হারিয়ে ফেলেছিল
তার কেন পাহাড়টা,
জটিল পথের বাঁকে।
আর তার সেই নিজের নদীটা,
যাকে সে ভরে নিতো আষাঢ় আর শ্রাবণের জলে,
পথ হাঁটতে হাঁটতে সেই নদীটাও
হারিয়ে গিয়েছিলো,
না হারায়নি, শুকিয়ে গিয়েছিলো।
ওই পথটায় বর্ষা আসেনি কোনো দিন,
কোনো দিন আসেও না।
আসলে না জেনে, কিছুটা জেনে, অভাবের তাড়নায়
হাটতে হয়েছিলো ওই যন্ত্রণার পথ।
ওটা ছিল অর্থের চলাফেরার পথ,
মানুষে পথ ছিলোনা ওটা।
যে মানুষ গুলো টাকার পিছু পিছু ছুটতে ছুটতে
টাকা হয়ে গেছে,
এপথে তারাই কেবল চলা ফেরা করে,
এ পথে একটুও হাওয়া নেই,
তবুও শুধু টাকার গন্ধ ভাসে,
একটুও প্রেম নেই,
একটুও ভালোবাসা নেই,
থাকার কথাও নয়।
কেননা …
এ পথে চলতে চলতে
চোখে পড়ে মাইল স্টোন, পথের পাশে,
সেখানে লেখা আছে শুধু টাকার অঙ্ক,
যা ক্রমবর্ধমান গন্তব্যের দিকে,
তাই তো ছুটে চলার শেষ নেই।
এ পথের পাশে নদী নেই,
পাহাড় নেই,
গাছপালা নেই,
আকাশে দিকে চাইলে মেঘ দেখা যায় না,
দেখা যায় টাকা উড়ছে।
এ পথে বৃষ্টি আসে না,
টাকার মেঘ থেকে খুচরো পয়সা ঝরে,
ভিখারী কিংবা ভুল করে কোনো মানুষ এলে।
আর আছে কিছু কুসংস্কারের গাছ
এই পথের পাশে,
যার বেঁচে থাকার জন্য একফোটা জল লাগে না,
লাগে মানুষের রক্ত,
আর মাথা থেকে পায়ে গড়ানো ঘাম।
এই পথেই ঢুকে ছিলো,
ভেবে ছিলো ভালোবাসার বন্যা আনবে একা,
বুকে আশাও ছিলো।
কিন্তু হলো কই ???
ভালোবাসা দিয়ে কেনা পাহাড়টা হারিয়ে গেলো,
কবিতা দিয়ে কেনা নদীটা শুকিয়ে গেলো,
প্রেম দিয়ে গড়া বাগানটা পুড়ে গেলো,
গান গেয়ে ডেকে আনা মেঘেরা
আকাশে জায়গা পেলো না।
সে একা একা আর হাটতে পারছিলো না,
থুবড়ে পড়ছিলো বার বার মাটিতে,
সেই সুযোগে তার পিঠের উপর আঘাত হানছিলো
লাখো লাখো টাকার দল
কুসংস্কারের হাতে হাত মিলিয়ে।
সে মৃত্যুর খাদেও পড়ে গেলো একবার।
টেনে তুললো অর্থরা
মেকি ভালোবাসায় বেঁধে।
তারপর তার কাছে যে সামান্য অর্থ ছিলো
তার নিজের অর্জিত,
তাও ছিনিয়ে নিলো
সে পিশাচ অর্থরা।
আবার মৃত্যুর হাতছানি এলো তার কাছে।
কিন্তু ঐ যে,
ঐ তো একটা নতুন পথ।
একবারে একা একা চলে গেছে কোথায়,
কেউ কি ওপথে যায় না?
ও পথের রাজা কে?
ও পথে তো সব আছে দেখছি,
কিন্তু এত স্থির আর শান্ত কেন?
এতো নীরব কেন ও পথ!!!
যাবো নাকি ওই পথে,
কি ভাবে যাবো?
পথ যে বন্ধ।
হা ঈশ্বর !!!
এ পথ কি খুলবে না কোনো দিন?
খুলে দাও, খুলে দাও।
খুলে গেলো দ্বার খুব ধীরে ধীরে,
এক দুই তিন … … …
মনেই নেই কতো বছর লেগে গেলো খুলতে।
এ পথ একবারে আলাদা,
সব আছে, সব আছে,
শুধু নীরবে স্থির হয়ে ধ্যানমগ্নের মতো,
ছুঁলেই জেগে উঠবে যেনো সব।
এ পথে কেউ আসেনি কি আগে ?
নাকি কেউ ধ্যান ভাঙাতে পারেনি?
নাকি দ্বার-ই খুলতে পারেনি কেউ?
ঐ যে নীরব স্থির,
একবার ছুঁয়ে দিই !!!
মুহূর্তে লাখ পাখি উড়লো আকাশে,
ডানা মেলার ঝড়, হাজার কাকলী।
একি উঠেই থেমে গেলো সব !!!
আবার ছুঁয়ে দিই !!!
ঝর্ণা ধেয়ে এলো পাহাড় থেকে,
নদী ছুটে এলো,
আকাশে মেঘ এলো গর্জন করতে করতে,
বৃষ্টি এলো,
ঝড় এলো,
দিন এলো, রাত এলো,
সূর্য এলো, চাঁদ এলো, তারারা এলো,
ইশ !!!
ভুলে গিয়েছিলাম এদের কথা,
কতো দিন দেখিনি এদের।
ওটা আমার পাহাড়,
ওটা আমার বন,
ওটা আমার মেঘ,
আমার নদী, আমার ঝর্ণা,
ওটা আমার তারা, আমার চাঁদ, আমার সূর্য
সব সব আমার চেনা কাতো কালের।
ঐ আমার হাওয়া এলো,
ঐ যে সবুজ ধান ক্ষেতে ঢেউ তুললো,
ঐ যে সাগর, নীল জল,
ঐ নীল আকাশ,
এতো আমি কিনেছিলাম,
কোনোটা ভালোবাসা দিয়ে
কোনোটা প্রেম দিয়ে
কোনোটা মন দিয়ে,
কোনোটা হৃদয় দিয়ে,
কোনোটা স্বাস প্রশ্বাস দিয়ে,
কোনোটা প্রাণ দিয়ে,
কোনোটা আত্মা দিয়ে,
মায়া দিয়ে, মমতা দিয়ে, স্নেহ দিয়ে,
সব আমি হারিয়েছি ঐ পথে।
আর এপথের রাজা, সে কই?
যাকে আমার মা দিয়ে গেলো
আমার কাছে আমার মুর্চ্ছিত স্বপ্নে,
সে কই ?
তাকে যে আমার আগে চাই।
এসো কাছে
এসো রাজা,
ছুঁয়ে দাও আমায়,
একি রাজা,
সত্যি এসে ছুঁয়ে দিলো আমায়,
একটু কথা বলো রাজা,
আমার সাথে,
হাঁ সাথী,
তোমায় ছুঁয়ে দিলাম
এই নাও পাহাড়,
এই নাও নদী,
এই নাও আকাশ, বাতাস, চাঁদ, সূর্য, তারা
সব, সব, সব,
এই নাও নতুন কবিতা,
এই নাও ছন্দ,
এই নাও গদ্য, পদ্য, ছড়া, গল্প,
সব সব সব নাও তুমি,
আমার অনেক আছে,
এ গুলো তুমি নাও,
তোমায় দিলাম,
একটা নতুন পথ তৈরি করো দেখি,
তোমার মনের মতো করে,
আমার পথের গায়ে গায়ে।
আমি আবার চলেছি নতুন পথ ধরে,
নতুন জীবনের পথ তৈরি করতে করতে,
রাজার পথে হাঁটবো আমি পরের বার,
এবারের কঠিন পথটা,
পার হয়ে আসি,
পথ করে করে।
… … … … …
ঘুমাও তুমি রাজা, রাত হলো
শুভ রাত্রি।
… … … … …
রাজা !!!
আমায় তোলো,
আমি মৃত্যুর গহ্বরে পিছলে পড়ে গেছি,
আমি হওয়ায় মিশে যাচ্ছি রাজা,
আমায় বাঁচাও।
হাত বাড়াও সাথী !!!
এই তো আমি !!!
এই তো এসেছি !!!
বাড়াও হাত !!!
তোমায় ধরে ফেলেছি আমি সাথী !!!
উঠে এসো সাথী, উঠে এসো !!!
… … … … …
এই যে আমি,
ওঠো তাড়াতাড়ি
স্বপ্নের ঘোর কাটলো,
সাথীর গলার ডাকে,
কানে হেড ফোনটা গোঁজাই আছে।
ফোনটা সারারাত চলেছে?
ফোনটা কাটোনি কেন সাথী,
তুমি তো শুভরাত্রি বললে,
তুমি কেন কাটোনি রাজা ?
ও, কটিনি বুঝি !!!
রাজা শোনো,
এই মাত্র একটা খুব খারাপ খবর পেলাম,
সেই মেয়েটা আত্মাহত্যা করেছে,
অত্যাচার সহ্য করতে পারেনি।
আমার থেকেও ওর খারাপ অবস্থা ছিলো।
ইসসস্
আমি এতক্ষন কি স্বপ্ন দেখছিলাম।
কি স্বপ্ন দেখছিলে ?
আমি তোমার গলার আওয়াজ পাচ্ছিলাম তো ফোনে।
প্রিয়সাথী,
আমি তোমায় ভালোবাসি,
আমায় ছেড়ে চলে যেওনা গো,
তোমায় সেই রঙিন গাছ পাহাড়ের ছবি এঁকে দিয়েছিলাম,
মোম রঙে, যদিও খুব একটা ভালো হয়নি,
গুছিয়ে রেখেছো তো ছবিটা?
ওটা কিন্তু তোমায় ভালোবেসে আঁকা,
তোমার হারানো কবিতার ছবি,
হারালে কিন্তু আমি আঘাত পাবো সাথী।
ভালোবাসি।
_____________________