ছোট্ট শহর

চন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়

আস্ত একটা শহর। কিন্তু সেই শহরের বাসিন্দা মাত্র ৪ জন। শহরটিতে আবার একজন মেয়রও আছেন। অবশ্য তিনি ওই চারজনেরই একজন। শুনতে অবাক লাগলেও এমনি একটি শহর রয়েছে কানাডায়। শহরটির নাম টিল্ট কোভ। এত অল্প লোকের বসবাস থাকলেও শহরে চালু আছে ডাক ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অন্যান্য নাগরিক পরিষেবা।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি কানাডার সবচেয়ে ছোট শহর তো বটেই, হয়তো পৃথিবীরও সবচেয়ে ছোট্ট টাউন হতে পারে। এই চারজন বাসিন্দা শহরটিকে খুব ভালোবাসেন এবং তারা বলেছেন, এখান থেকে চলে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে তাদের নেই।
শহরের চারজন বাসিন্দাই শহরটিকে খুব ভালোবাসেন এবং তারা জানিয়েছেন, এখান থেকে চলে যাওয়ার কোন ইচ্ছে তাদের নেই। চারজন বাসিন্দা হলেও বলা চলে সবাই একটি পরিবারেরই সদস্য।

মনোরম একটি লেককে ঘিরেই শহরটি। মেয়র, মেয়রের এক বোন এবং মেয়রের একজন শ্যালক ওই দু’জন শহরের কাউন্সিলর এবং অন্যজন শহর কর্তৃপক্ষের ক্লার্ক বা কর্মচারী। এই চারজন ছাড়া টিল্ট কোভে আর কেউই থাকে না। <br />চারজনের একজন মার্গারেট কলিন্স, যিনি ক্লার্ক হিসেবে কাজ করছেন, তার জন্ম এই শহরেই। এখানেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, টিল্ট কোভে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা যখন ছিল তখন সেটি ছিল ২,০০০। আর তা হয়েছিল সেখানে মাইনিং- এর কাজের জন্যে। মার্গারেট কলিন্স-এর আশঙ্কা ক্রমশ তাদের বয়স বাড়ছে। বার্ধক্যের কারনে একসময় তারাও হয়তো এই শহর থেকে চলে যেতে বাধ্য হবেন এবং সেটি হবে তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা।

টিল্ট কোভ শহরটি ১৮১৩ সালে যুক্তরাজ্যের জর্জ এবং মেরি উইনসন নামের নাগরিক দম্পত্তি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৫৭ সালে শহরের বাসিন্দা দাঁড়ায় ২৫ জনে। ১৮৮৪ সালে শহরটিতে তামা-সোনাসহ অন্যান্য খনি আবিস্কৃত হলে খনি শ্রমিক ও খনি ব্যবসা সম্পর্কিত লোক বসতি গড়ে উঠতে থাকে। ১৯১৬ সালে শহরটিতে ১৫০০ বাসিন্দা ছিল। ১৯৬০ সালে তা ২০০০ এ দাঁড়ায়। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে খনি দুর্ঘটনায় শহরটির প্রধান খনিটি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কানাডার অন্যান্য অংশে আরও আধুনিক জীবনযাত্রা এবং খনি কাজের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির আবিস্কার ও ব্যবহার টিল্ট কোভের বাসিন্দাদের অন্য শহরের প্রতি আকৃষ্ট করলে লোক বসতি কমতে থাকে। কানাডার এক পরিসংখ্যানে ২০১১ সালে শহরের লোকসংখ্যা ছিল মাত্র ৫ জন যা ২০১৭ সালে এসে ৪ জনে পৌঁছেছে।

মাত্র চারজন বাসিন্দা হওয়ার কারণে তাকে খুব বেশি কাজ করতে হয় না বলে বেজায় খুশি শহরের মেয়র ডন কলিন্স। চিঠি সরবরাহ, আবর্জনা সংগ্রহ, রাস্তাঘাট রক্ষণাবেক্ষণের মতো কাজগুলোও তাকে দেখভাল করতে হয়। মেয়র ডন কলিন্স জানিয়েছেন, পুরো জীবনটাই তিনি টিল্ট কোভে কাটিয়েছেন। বাকি জীবনটাও কাটাতে চান এখানে। শহরে একটি জাদুঘরও আছে।

শহরের বাসিন্দা চার জন হলে কি হবে, প্রচুর পর্যটক আসেন এই শহর দেখতে। সব চাইতে কম জনবসতি হিসেবে তো বটেই মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারনেও টিল্ট কোভ তাই সমাদৃত।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × two =