হৃদয় রেখে যাও
সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
এই নাও আমার চোখ যে তোমায় প্রথম দেখেছিল,
এই নাও আমার হাত যে প্রথম স্পর্শ করেছিল,
এই নাও আমার ঠোঁট,যা তোমার গালে চুমু দাগ রেখেছিল, এই নাও আমার কাঁধ যেখানে মাথা এলিয়ে ঝরা পাতার মতো শুয়েছিলে, এই নাও আমার আঙুল, যে আঙুলে আঙুল জড়িয়ে হেঁটেছ
অনেকটা পথ, এই নাও আমার পা, যে পা তোমার
পায়ে পা মিলিয়ে দুর্গম দিন হেলায় পেরিয়ে এসেছে, বিশ্বাসের টুকরোগুলো নিও, না হলে যে
অদানে অব্রাহ্মনে যাবে, সেই নিঃশ্বাসও নিয়ে যাও
যা আমাদের যৌথ অনুভব ও অভিমানের মাঝে
বিসমিল্লাহ খাঁর সানাই বাদন হতে দ্বিধা করেনি,
আর অভ্রকুচির মতো ঝকঝকে হাসির ঝরণাগুলি
নাও,এই নাও প্রতিশ্রুতি ভাঙা বিষণ্ণ শ্রাবণের কাক ভেজা বিকেলটুকুও নাও,আমাদের সমস্ত চমৎকার
ফুঁড়ে উঠে আসা মহাজাগতিক অভিমান নিয়ে যাও,তোমার শরীরের ত্বকাশ্রিত বকুল গন্ধটুকু নাও, আমার দামাল বাউণ্ডুলে স্বভাবের বাউলপনা
ইচ্ছে হলে নাও,যা তোমার শরীরময় উলকি হয়ে
আছে, আর আমার সমগ্রের ভিতর থাকা তোমার সমগ্রের লাভাস্রোতটুকুও নিয়ে যাও।
এই নাও আমার প্রতিদিনের অপেক্ষার শিল্পিত রূপ, যা কেবল হাত ঘড়ির ঠাট্টায় মেশা,
নাও আমার উৎকণ্ঠার জাদুবিদ্যা জানা জাদুদণ্ড,
যা করতে করতে তোমাকে আঁকতে হত বারবার,
এই নাও রোমিও জুলিয়েট উপন্যাসের বই, আলাপ
বাঁক নেবার দিনে তোমার দেওয়া প্রথম স্মারক,
নাও লেটারস ফ্রম এ ফাদার টু হিজ ডটার আর এই বইয়ের ভাঁজে শুকিয়ে যাওয়া মৃত গোলাপের লাশ,এই নাও আমার হাসির ফসিল,যা অনেক স্মৃতি-প্লাবনের পলির পলেস্তারায় রচিত,নাও দুঃখ, যা প্রকাশ করতে না পারার অযুত কষ্ট বইতে বইতে আমি ক্লান্ত,এই নাও কান্না,যদিও আমি নিজে না কেঁদে কাউকে কাঁদাইনি কোনদিন,তোমাকেও কাঁদাবে না,এই নাও নির্জনতা, যার অন্তঃসলিলা আমাদের চেনে, নাও রোদ্দুর, যার প্রথম স্পর্শ তোমার মুখে আবির ঢেলে দেয়, এই নাও গোধুলি যার গায়ে আমাদের পারফিউমের গন্ধ ম ম করছে,
এই নাও রাত্রি, যা আমাকে দুরন্ত দুঃসাহসী ও তোমাকে ভীত করেছিল প্রথম চকিতে,এই নাও চন্দ্র শোভিত মধ্য যাম, যার নিরবচ্ছিন্ন নিরাভরণ ইশারায় আমি শরীর সর্বস্বতার খেলা শিখেছি তোমার রচিত ব্যাসার্ধ জোড়া বিদ্যুল্লতায়।
সব সব নিয়ে যাও। তোমার হৃদয় রেখে যাও।
সে যে আমার আত্মায় লীন,
তার চোখে চোখ রেখে আমাকে লিখতে হবে
সম্পর্কের করুণ এপিটাফ।
এই দুঃসহ কর্মজীবনটুকু আমার জন্য রেখে দিয়ে
তুমি বিহ্বলতাগুলোকে গোলাপ বানিয়ে সন্ধ্যামেঘে
উড়নি উড়িয়ে ফিরে যাও।
পিছুটান নেই। পিছুডাক নেই। বাঁধন ছেঁড়ার দিন।
তোমার ক্ষণিকের স্থিতি বাঙময় হয়ে রইল শুধু,
এই বিমূর্ত শিল্পটুকু থাক। যা একান্ত আমার।