রাগিনীর রাগ
পায়েল বন্দ্যোপাধ্যায়, জামশেদপুর
ঝনাত, ঝন, ঝন, ঝন, ঝন, ব্যস রান্নাঘরের বাসনের তাক পুরো ফাঁকা। দু-একটা জিনিস বাইরেও গেল বুঝি।
মাঝে মাঝেই এই রকম হয়, সিদ্ধার্থের বাড়িতে। পিয়া রাগ করলে মাঝে মাঝেই ওই বাসনের তাকটা খালি হয়ে যায়,তার সাথে দু -চারটে বাইরে।আজকেও তার অন্যথা হলো না।কিন্তু,না আজ বেশ ভালোই রেগে আছে পিয়া।
“আর থাকবো না। এবার আমি চলে যাবো। আমি আমার মা বাবার কাছে গিয়ে থাকবো থাকুক একা।আমি দেখতেও আসবো না।অন্য কাউকে বিয়ে করুক আমি আর থাকবো না। ওই ছোটবেলার প্রেম তুলতুলি ওকে নিয়ে থাকুক কত সহ্য করে দেখব। আমি আর ………..”
না, এবারে ঝগড়াটা বেশ ভালোই হয়েছে। সিদ্ধার্থ এবারে রাগের মাথায় মোবাইলটা ভেঙে দিয়েছে পিয়ার, ব্যাস আর আছে কোথায় পিয়া। আসল পিয়া সারাদিন একা থাকে। কাজের সূত্রে সিদ্ধার্থ কলকাতার বাইরে থাকে পিয়াও ওর সাথেই থাকে। বাড়ির সব লোকজন কলকাতায়, শশুর বাড়ি, বাপের বাড়ি সব কলকাতায়। এখানে সারাদিন পিয়া ঘরে একা, ওই এক কাজ করা, টিভি দেখা, স্যোশাল নেটওয়ার্ক ব্যস। তারওপর সিদ্ধার্থ বাড়ি ফিরে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে তাহলে পিয়াই বা কি করে সারাদিন? আর এই সব নিয়ে অভিযোগ করলেই ঝামেলা লেগে যায় দুজনের মধ্যে। এবারেও যথারীতি তাই হয়েছে এই সব নিয়ে ঝামেলা হতে হতে সিদ্ধার্থ পিয়ার মোবাইলটা ভেঙে ফেলেছে রাগের মাথায়। পিয়াকে বলেছে কলকাতা চলে যেতে।
“না আর নয়
এত অপমান আর সহ্য করবনা আমি চলে যাবো। ফোনটা নেই যে ফোন করে বলবো টিকিট কেটে আনতে।”
ধূলো পড়া বইগুলো সব নামলো তাক থেকে। এখন তো স্যোশাল মিডিয়া অফ হতেই ধূলো পড়া বইগুলোতেই চোখ যায়। সারাক্ষণ নিজের মনে গজরাচ্ছে আর মাঝে মাঝে বই পড়ছে। সিদ্ধার্থ অফিস চলে গেছে।
– “নিজের আর কি, এর সাথে তার সাথে সারাদিন হাহা হিহি এই তো কাজ অফিসে। একবারও ভাবে আমার কথা, ছেড়ে দিতে পারলে বেঁচে যায়। আবার বিয়ে করবে তো নতুন করে। মেয়ে বসানো আছে। আমি বলে আছি কেউ জুটবে না কপালে। সব আসবে টাকা পয়সা নেবে আর কেটে পড়বে। আমায় পেয়েছিল এই যাত্রায় উৎরে গেল। সব করে দিয়ে দিয়ে পেয়ে বসেছে আর কিছু করবো না দাঁড়াও হচ্ছে। এই যাবো মায়ের কাছেই থাকবো আমি,নিজের সেই যোগ্যতা আছে যে একটা চাকরি করতে পারবো।”
না এবারে সিদ্ধার্থের ও খারাপ লেগেছে মোবাইল ভেঙে দিয়ে। তাই আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলো অফিস থেকে।
– “বলছি আমার মোবাইলটা নিয়ে তো মাকে একবার ফোন করতে পারতে।
– না, চাই না আমার। নেকাপনা হচ্ছে ফোন ভেঙে দিয়ে। নিজেরটাও তো ছিল সামনে সেটা ভাঙা হলো না কেন??
– না মানে সরি।”
কিছু না বলেই ঘরের দরজা দুম করে বন্ধ হলো। আবার খুলেও গেলো
– “টিকিট কেটে দাও কাল বাড়ি যাবো না হলে পরশু
– ওকে কাল কেটে দেব পরশু চলে যেও”
দুম দুম আবার দরজা বন্ধ আজ আলাদা ঘরে শোবে দুজনে।
– “একবারও বললো না, যেও না, চলে যেতে বললো। হ্যাঁ চলেই যাবো আর নয়।”
এরপর রাত, রাত থেকে সকাল। দুজনের কথা নেই। পিয়া রান্না করলো খেতে দিলো। সিদ্ধার্থ খেয়ে অফিস চলে গেল কথা নেই দুজনের।
– “একবার বললো না ফোনটা রাখো। এত অপমান আর নয় বাপের বাড়ি যাবো আর আসবো না।”শুরু হলো কান্না।
কিন্তু কেউ বোঝানোরও নেই, বোঝারও নেই একাই কাঁদছে আবার একাই চোখের জল মুছে চলেছে। না সিদ্ধার্থর ও খারাপ লাগছে। তাই আজকেও একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলো।
কিন্তু, পিয়াও দেখাবে না সে কষ্ট পেয়েছে। বাড়ি ফিরেই সিদ্ধার্থ ঘরে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় বসলো। পিয়া চা করে দিয়ে ঘরে গেল। ঘরে গিয়েই দেখলো খাটের উপর একটা সরি লেখা বড় গ্রিটিনস কার্ড, গোলাপ ফুল, আর তার সাথে নিউ মোবাইল। এবার তো আল্লাদে আটখানা হয়ে এসে ঘর থেকে বেরিয়ে সিদ্ধার্থকে জড়িয়ে ধরে আগে একটা চুমু খেলো। সিদ্ধার্থও তাকে জড়িয়ে ধরে সরি বললো। পিয়া তো কেঁদেই ভাসায়। সিদ্ধার্থের ভালোবাসায় বাপের বাড়ি চলে যাবার কথা ভুলেই গেল। এখন সিদ্ধার্থের ভালোবাসায় ডুব দিয়েছে সে। রাগিনীর রাগ ভাঙল।
“-আরে না না আর কাঁদতে হবে না তোমার মোবাইল পছন্দ হয়েছে আর বাকি গিফট গুলো?
হ্যাঁ খুব পছন্দ হয়েছে। love you
Love you too।
সাথে আরো একটা জিনিস আছে।
কি গো।
ওই যে বলেছিলে কলকাতা যাবে তার টিকিট কেটে এনেছি।”
বেশ আবার পিয়া আর আছে কোথায়
– “হ্যাঁ আমি গেলে তো বেঁচে যাও
– আরে না না শোনো আমি তো ইয়ার্কি……..’
আর ইয়ার্কি আবার দরজা বন্ধ, আবার ঝন ঝন ঝন বাসনের তাক ফাঁকা।
আর কিছু না বলে সিদ্ধার্থ চুপ, একটু রেস্ট নিয়ে নিচ্ছে কারণ সে জানে এবার তাকে ছুটতে হবে kfc, dominos না হলে অন্য কোনো ভালো রেস্টুরেন্ট ডিনারের জন্য, আবারও রাগিনীর রাগ ভাঙ্গানোর জন্য।