এক বাড়িতেই একটা শহর

শহর কথাটি শুনলেই মনে আসে প্রচুর বড় বড় বাড়ি, খেলার মাঠ, প্রশাসনিক ভবন, পুলিশ, পোস্টঅফিস, হাসপাতাল, বিদ্যালয় এমন নানা বিষয় বা বস্তুর কথা। আসলে এসবকিছু মিলেই তো একটি শহর হয়। কিন্তু শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি যে আলাস্কার হোয়াইটার নামে শহরটিতে আর দশটি শহরের মতন এ সব উপাদান থাকলেও নেই কেবল থাকবার স্থান। আর তাই পুরো একটি শহরই এখানে তৈরি হয়েছে একটা মাত্র বাড়িতে। একটা বহুতলের এর ভেতরেই গোটা একটা শহর থাকতে পারে এটা বোধ হয় এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না?
 


আলাস্কার হোয়াইটার নামক এই শহরটির কেন্দ্রস্থল একটিমাত্র বহুতল। ১৪ তলার এই দালানে বর্তমানে প্রায় ২১৮ জন মানুষ বাস করেন। বেইজিক টাওয়ার নামে পরিচিত এই বহুতলটি সাবেক আর্মি ব্যারাক হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এটিই শহরবাসীর একমাত্র আশ্রয়স্থল এবং কর্মস্থলও বটে। শহরের সব মানুষ যে একটি দালানে আটকে থাকেন তা কিন্তু নয়। বাইরে গাড়ি, মাছ ধরার নৌকা কিংবা অন্য কোনও যানবাহনেও জায়গা খুঁজে নিতে হয় অনেককে। তবে সেটা কিছু মানুষের ক্ষেত্রেই। বাদ বাকি বেশিরভাগ মানুষই মোটামুটি রয়ে যান অদ্ভুত এই দালান শহরে।


থাকবার ঘর ছাড়াও দরকারি কি নেই এই বাড়িতে?  ডাকঘর, পুলিশ স্টেশন, বিদ্যালয়, চার্চ, হাসপাতাল থেকে শুরু করে ছোটখাটো বাজারও রয়েছে এই শহরে। রয়েছে শরীরচর্চার জন্যে জিম আর ভূগর্ভস্থ টানেল। এই ১৪ তলার ভেতরেই! তবে বাদবাকি সবকিছু অনেক বেশি ব্যবহৃত হলেও এখানকার দোকানগুলিতে কখনোই খুব বেশি ভিড় দেখা যায়না। দালানের প্রতিটি মানুষের হাতেই দেখতে পাওয়া যায় বাইনোকুলার। নানারকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বরফ আর প্রিয়জনের খোঁজখবর রাখতেই এটি ব্যবহার করেন তারা।


পর্যটকদের কাছে পর্যটনস্থান হিসেবে হোয়াইটার বেশ আকর্ষণীয় স্থান। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে এখানে ২২ ঘন্টা সূর্যের দেখা পাওয়া যায় বলেই অন্যসব স্থানের তুলনায় এখান সবার ভিড়টাও থাকে বেশিই। তবে এখানে যাওয়ার জন্যে জলপথ ব্যবহার করার পাশাপাশি পাহাড়ই একমাত্র উপায়। ভূগর্ভস্থ টানেল থাকলেও সেটা একটা সময় কেবল একটা নির্দিষ্ট দিকেই যায় এবং রাতের বেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
চিরচেনা পৃথিবী থেকে অনেকটা দূরে পাহাড়ের ভেতরে বন্দী হোয়াইটার শহরটি এতটাই ছোট যে এর মানুষগুলোকেই সবসময় দায়িত্ব পালন করতে হয় শহরটিকে বাঁচিয়ে রাখতে। একেকজন নিজেদের মতন কাজ ভাগ করে নেন। তারপর সেটা ঠিকঠাক করে পালন করে যাওয়া। যদিও চারপাশের মানুষগুলো আপনার অনেক কাছেই থাকবে এখানে, তবুও এত মানুষের ভিড়ে একাকিত্ব অনুভব করার জন্যে হোয়াইটারের মতন জায়গা হয়না। বিশেষ করে এখানকার কোনরকম জরুরী দুর্ঘটনার সময় পুরো ব্যাপারটা অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে পড়ে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − twelve =