৩৯ বছরে গোবরডাঙ্গা নকসা
সৃজিতা চক্রবর্তী ##
“এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাবো”-বিখ্যাত গানের এই লাইনটিকে অনুসরণ করে পথ চলা শুরু করেছিল গোবরডাঙ্গা নকসা। প্রতি বছরের মত এবছরও গোবরডাঙ্গা নকসা তাদের জন্মদিন পালন করলো ১ মে।
নকসা এবার ৩৯ বছরের জন্মদিন তথা পান্তা পার্বণে হাজির হয়েছিলেন সংস্থার প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, নকসার সদস্যবৃন্দ ও বিভিন্ন শুভানুধ্যায়ীরা। নকসার জন্মলগ্নে গুটিকয়েক সদস্য মিলে যে খেলাঘর তৈরি করেছিল সেই খেলাঘরের সঙ্গে প্রাক্তন-বর্তমান সব সদস্যদের অফুরান স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তাই জন্মদিনের প্রথম পর্যায়ের অনুষ্ঠান খেলাঘরে অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুষ্ঠানে নকসার প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নকসার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তাদের কিছু সুখ-দুঃখের স্মৃতিচারণা করেছিল। বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছোটরা কিছু কবিতা আবৃত্তি করে। বিশিষ্ট গুনীজনেরা নকসার ভবিষ্যতের চলার পথকে আরো সুমধুর করার কিছু উপদেশ দেন।
পরবর্তীতে খেলাঘর থেকে গোবরডাঙ্গা সংস্কৃতি কেন্দ্র পর্যন্ত এক অসাধারণ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। নকসার হাতের কাজের কর্মশালায় ছোট সদস্যদের নিজেদের হাতে তৈরি মাপেট-পাপেট ও অন্যান্য সামগ্রী সেই শোভাযাত্রাকে এক অন্য মাত্রা দেয়।
পরবর্তী পর্যায়ে গোবরডাঙ্গা সংস্কৃতি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান।
সেই অনুষ্ঠানে ‘বাগুইআটি নৃত্য মন্দির’ এর শিক্ষিকা শ্রীমতি সোমা গিরির ছাত্র-ছাত্রীরা পরিবেশন করেছিল কেরালার বিখ্যাত মার্শাল আর্ট– “কালারি পায়াট্টু”। শুধু ছাত্র-ছাত্রীরা নয়, কেরালা থেকে আগত তাদের গুরুও নকসার জন্য মার্শাল আর্টের একটি ছোট্ট অংশ প্রদর্শন করেন।
পরবর্তীতে ছিল আর মনোগ্রাহী এক অনুষ্ঠান। নৃত্যের তালে তালে অঙ্কন। ‘ছন্দে ছন্দে’র সুমিতা ভট্টাচার্য্য পরিবেশন করেছিলেন এক অসামান্য নৃত্য। সেই নৃত্যের ভাবনাটিকে আরো বিস্তারভাবে দর্শকের মধ্যে পৌঁছে দিতে সঙ্গে ছবি এঁকেছিলেন শ্রী সৌমেন্দ্রনাথ দত্ত।
‘লালন একাডেমি’র তাপসী রায়চৌধুরী ও মৃত্তিকা মালাকারের ঝুমুর গানের তালে সেদিন নেচে উঠেছিল প্রত্যেকের মন।
নৈহাটি কলেজের অধ্যাপক শ্রী সত্রাজিৎ গোস্বামী স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। এরপর বহরমপুর রেপার্টরি থিয়েটারের নির্দেশক শ্রী প্রদীপ ভট্টাচার্য্য মহাশয়কে “দেবু বসু স্মারক সম্মান”এ সম্মানিত করে গুরুপ্রনাম দেওয়া হয়।
নকসা আয়োজিত জাতীয় নাট্য উৎসব তৃতীয় বর্ষে সমসাময়িক ভারতীয় থিয়েটার বিষয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্বদের বলা বক্তব্যের একটা সংকলন বই আকারে প্রকাশিত হয়। বই প্রকাশনায় উপস্থিত ছিলেন শ্রী প্রদীপ ভট্টাচার্য্য,শ্রী জ্যোতির্ময় চৌধুরী,শ্রী কিরিট বর্ধন,শ্রী জিতেন্দ্র সিং(হিন্দিভাষী থিয়েটারের নাট্যবিদ) প্রমুখ নাট্য ব্যক্তিত্ব।
সারাদিন ব্যাপি নানা বর্নময় অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নকসার ৩৯তম জন্মদিন হয়ে উঠেছিল রীতিমত আনন্দদায়ক এবং আকর্ষক। গোবরডাঙ্গা নকসার উত্তোরত্তর বৃদ্ধি হোক, দীর্ঘ পথ চলুক তারা এই শুভ কামনা রইল অবেক্ষণের তরফ থেকেও।