বউমা ষষ্ঠী

স্বরূপা রায়, শিলিগুড়ি

আজ লাহিড়ী বাড়িতে বিশাল তোড়জোড় চলছে। কারণ, আজ জামাইষষ্ঠী। বাড়ির কর্তামশাই জহরবাবুর তিন মেয়ে, এক ছেলে। মেয়েরা বড়, ছেলে সবার ছোট।

বাড়িতে তিন জামাই। বড় জামাই তো পনেরো বছর পুরোনো জামাই। তার খাতির তো আলাদাই, বড় জামাই বলে কথা। বাকি দুই জামাইও নতুন নয়।

প্রতি বছরই বেশ বড় করে জামাইষষ্ঠীর আয়োজন করেন জহরবাবু। স্ত্রীয়ের ষষ্ঠীপূজার জন্য সব জিনিসপত্র বাদেও প্রচুর বাজারঘাট করেন। আর সব উনি নিজে হাতে করেন। ছেলেকে সাহায্যও করতে দেন না।

আজ সকাল থেকেই রান্নাঘরে চলছে যুদ্ধ। জহরবাবুর স্ত্রী নিজে হাতে সব জামাইদের জন্য রান্না করেন। তাই পূজা সেরে উনি লেগে পড়েছেন রান্না করতে। হাতে হাতে সাহায্য করছে একজন রান্নার বউ আর ওনার নিজের নতুন বউমা।আজকের দুপুরের মেনু ভাতের সাথে কাশ্মীরি মুগের ডাল, মুড়িঘণ্ট, ছোট মাছের চচ্চড়ি, ইলিশ মাছ ভাপে, পোলাও, পাঁঠার মাংস, আমের চাটনি, দই আর মিষ্টি। তাছাড়া সকালের জন্য থাকছে লুচি, আলুর দম, কষা মুরগী আর মিষ্টি।

সকাল ১১টা বাজতেই জহরবাবুর পরপর সব জামাইরা মেয়ে ও নাতিনাতনিদের নিয়ে হাজির। বসার ঘরে মেঝেতে আসন পেতে জহরবাবু বসালেন সব জামাইকে। তারপর বড় থেকে ছোট, পরপর সব জামাইকে ষষ্ঠীর পাখার হাওয়া দিয়ে ওনার স্ত্রী হাতে হলুদ সুতো বেঁধে দিলেন।

জহরবাবু লক্ষ্য করলেন, দূরে দাঁড়িয়ে ওনার বউমা চোখের জল আড়াল করছে। সবার অলক্ষ্যে উনি বউমার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই বউমা চোখের জল মুছে ফেললো।

“কাঁদছিলি কেন?” জহরবাবু জিজ্ঞেস করলেন।

“কোথায়? না বাবা, কাঁদছিলাম না।”

“এই বুড়োর চোখকে ফাঁকি দেওয়া যায় না রে মা। জামাইষষ্ঠীর আয়োজন দেখে মন খারাপ করছে তোর, তাই না?”

“আজ আমি অনাথ না হলে আমিও তোমার ছেলের সাথে বাপের বাড়ি যেতাম জামাইষষ্ঠী পালন করতে। কিন্তু…”

জহরবাবু আর কিছু বললেন না। জামাইদের ষষ্ঠী হয়ে গেলে উনি নিজের স্ত্রীকে উঠিয়ে স্ত্রীয়ের জায়গায় নিজে বসে ডাকলেন বউমাকে, “এই দিকে আয় তো মা।”

“কি হবে বাবা?”

“আমার সামনে আসনে বস।”

সবাই অবাক। জহরবাবুর বউমা বসলো ওনার সামনে পাতা আসনে। জহরবাবুর স্ত্রী যেভাবে জামাইষষ্ঠী করলেন। সেইভাবেই জহরবাবু ওনার বউমাকে পাখার হাওয়া দিয়ে হাতে হলুদ সুতো বেঁধে বললেন, “এই হলো বউমাষষ্ঠী। আজ থেকে এই বাড়িতে প্রতি বছর জামাইষষ্ঠীর সাথে বউমাষষ্ঠীও হবে।”

জহরবাবুর বউমার চোখে জল। সে “বাবা…” বলে জড়িয়ে ধরলো জহরবাবুকে। বাড়ির সবার মুখে হাসি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 2 =