ব্রেক আপের পরের পৃষ্ঠা
অনুপ কুমার সরকার , আইহো, মালদা ##
প্যাচপ্যাচে ভেজা আঁখি পল্লব জোড়ায় শ্রাবণের ধারা বেয়ে চলেছে। মায়ের ডাক শুনে দ্যুতি হকচকিয়ে কোনমতে চোখ মুছে বলল, কী মা ? তোর বাবাকে একবার ফোন করে দেখ তো কোথায় আছে, এতো দেরি হওয়ার তো কথা নয়। যা গরম পড়েছে আজকে। হ্যাঁ মা করছি দাড়াও একটু। সদ্য ব্রেক আপ হয়েছে তাদের সম্পর্কের। নীলাদ্রি রোজ ফোন করেই যায় ব্রেক আপ হওয়া সত্ত্বেও। জোড়া তালি দিয়ে হলেও সম্পর্কটা রক্ষা করতে চেয়েছিল নীলাদ্রি। সম্পর্কের টানাপোড়েন নয়, কবেই যে ইতি ঘটেছে সেসব ঠাওর করতে পারছে না। বর্ষাকালীন সময়ে ফুলে ফেঁপে ওঠা কোনো কোনো নদীও একসময়ে শুকিয়ে খেলার মাঠে পরিনত হয়ে যায়। মাঝে মাঝে মনে হয়, আদৌ কি এখান দিয়ে কোনো নদী বয়ে গেছে। নীলাদ্রি সাথে দ্যুতির সম্পর্কটাও ঠিক ঐ রকম বর্তমানে।
দ্যুতি মোটেও হতে চায় না অতীত কাহিনীর গল্পের লাইন। সম্পর্কের অবনতি বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলছে। দিন দিন দ্যুতি ঠিক কেমনই যেন হয়ে যাচ্ছে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না। মেয়েটা কম কথা বলে, ঐ সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই মুখ হাত ধুয়ে জানালার গ্রিল ধরে বসে থাকে। দ্যুতির দুঃখের গাঙ অনেক গভীর। দেখে ঠাওর করার উপায় নাই। বেশ কয়েক দিন ধরেই মা বাবার সাথেও ব্যবহার ঠিক হচ্ছে না, সেটাও উপলব্ধি করতে পারছে দ্যুতি। রাতেও ঠিক সময়ে ঘুমায় না। দিন দিন শরীরের যে কি হাল হচ্ছে, দেখে মনে হয় খুবই অসুস্থ মেয়েটা। রাতেও ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন জানালার গ্রিল ধরে আঁধফালি বাকা চাঁদকে গোলাকার হতে দেখেছে। আবার পুনরায় গোলাকার চাঁদকে কমতে কমতে সেই আঁধফালি হতে দেখেছে। আর তখন তার নিজের জীবনের গল্প গুলো আর খুনসুটি দেয় না হৃদয়ের জঞ্জালযুক্ত আঙিনায়। রোজ রাতে তার অতীত বৃতান্তের কাছে ধর্ষিতা হয় দ্যুতি। তাকে কামড়ে জখম করে ছিঁড়ে খায়। তখন দ্যুতি একা একাই মিট মিট করে হাসে। একা একাই কত কথকতা কয়। সন্ধ্যার জানালায় দ্যুতি খুঁজে পায় জোনাকির মিট মিটে আলো আর সঙ্গে ঝি ঝি পোকার কলরব। দ্যুতি কেমনই যেন দিন দিন প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার ঘেরার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ধীরে ধীরে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছে। পূর্ণিমার জ্যোৎস্না জানালার গ্রিল ভেঙে যখন বিছানায় আসে দ্যুতি সেই জ্যোৎস্নার আলোর সাথে খুনসুটি করে। আবার অমাবস্যার কালো অন্ধকারেও একটা জোনাকির মৃদু আলো সমস্ত ঘরকে আলোকিত করে দিয়ে যায়।