আবীরা
পূর্ণিমা মণ্ডল, দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান ##
ক’দিন থেকে অরুনিমা মনটা ভালো নেই। সামনে দোল, জীবনের বসন্তের শুরুতেই নিয়তির খেয়ালে, আকাশের চওড়া বুকটা হারিয়ে, মাস ছ’য়েক সে এক রঙহীন সত্ত্বা! যদিও কেউ কোন নির্দেশ দেয়নি, তবুও সে সাদা পোশাকেই নিজেকে মুড়ে রাখে।
স্কুলে পড়ানো ছাড়া তেমন কোন কথাই বলেনা। সহকর্মীরাও ব্যাপারটা বোঝে। সমবেদনা জানানোর ভাষাও যেন তারা হারিয়েছে। রোজকার মত আজও উদাসী হয়েই বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিল। নতুন কেনা বাইকটা নিয়ে বিতাংশু সামনে এসে বলে, “খুব আপত্তি না থাকলে, আসতে পারেন.. “
“ধন্যবাদ.. আমি বাসেই চলে যাবো.. “
“আজ তো বাস নেই, কিসব ঝামেলার জন্য সব বাস আটকে আছে আগের মোড়ে। রাস্তার ধর্ণা না সরলে বাস চলবেনা। চলে আসুন.. আমি নামিয়ে দেবো.. “
অরুনিমা ভেবে পায়না কি করবে? অগত্যা দেরী হয়ে যাবে ভেবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিতাংশুর বাইকে চেপে পড়ে।
“একটু বাজারের ভেতর দিয়ে যেতে হবে.. ভালো করে বসবেন.. কিছু রঙ নেবো.. “
অরুনিমার সঙ্কোচ লাগে কিন্তু কিছু বলা তো ঠিক নয়। বাস চললে অসুবিধা হতোনা কিন্তু… ঘরে মা ও একা, আকাশকে হারিয়ে আর শ্বশুরবাড়ির ভাত জোটে নি.. তাই যত তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছানো যায়.. এইসব ভাবতে ভাবতে… হঠাৎ
“একটু দাঁড়ান এখানটায়, আমি কিছু রঙ নিয়ে আসছি “
বাইকটা রাস্তার একধারে দাঁড় করিয়ে বিতাংশু নানা রঙের আবীর কেনায় ব্যস্ত..
অরুনিমার সব আগের কথা মনে পড়ে যায়.. কলেজে একসঙ্গে পড়া.. একসময় বিতাংশু প্রোপোজও করেছিল.. কিন্তু অরুনিমা জানতো নিজের পরিবারকে.. তাই ভালো লাগাকে আর পরিনতি দেয়নি। বাপমরা মেয়ে নিয়ে মা যে কি কষ্ঠ করেছে জ্যাঠার সংসারে তা বোঝার ক্ষমতা ছিল…
“সব কাগজের ঠোঙা.. প্লাস্টিক বারণ.. চলুন… “
হঠাৎ কোথা থেকে একদল ছেলে দৌড়ে এসে এমন ধাক্কা দিলো যে অরুনিমা বিতাংশুর বুকের উপর এসে পড়লো.. সব কাগজের ঠোঙা ফেটে রঙহীন সত্ত্বাকে যেন রাঙিয়ে দিলো.. সারা মাথায়, মুখে, বুকে , লাল, সবুজ, ধলুদ, গোলাপী, আবীরে ভরে গেল.. যেন রামধনু রঙে সাজিয়ে দিলো ….
বিতাংশু একদৃষ্টে অরুনিমা কে দেখতে থাকে… ঠিক সেই আগের মতো.. নিজের করে..
“বুরা মত মানো হোলী হ্যায়… ” বলেই খুব জোড়ে হেসে ওঠে বিতাংশু…
অরুনিমা কিছু না ভেবেই.. জড়িয়ে ধরে বিতাংশু কে…
কেমন যেন ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে অরুনিমা….. অস্পষ্ট ভাবে বলেই ফেলে…
“আমি…..আর পারছি….. না.. “