চোখের নিচে কালো
ত্বকের নানা সমস্যার মধ্যে একটি হচ্ছে চোখের নিচে কালো দাগ। যাকে বলা হয় ডার্ক সার্কেল। ডার্ক সার্কেল ঢাকতে অনেকেই কনসিলার প্রয়োগ করেন, তবে তা স্থায়ী সমাধান নয়। সাধারণ জীবনযাত্রার পরিবর্তন যেমন বেশি ঘুম, হাইড্রেটেড থাকা এবং চোখ না ঘষার অভ্যাস ডার্ক সার্কেল মোকাবিলায় অনেক সময় সাহায্য করতে পারে কয়েকটি ঘরোয়া প্রতিকারও রয়েছে যা কার্যকরী।
বয়স বাড়ার প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যেই রয়েছে চোখের নীচে ডার্ক সার্কেল এবং ব্যাগ। আমাদের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ত্বক প্রাকৃতিকভাবে কোলাজেন হারাতে থাকে এবং আরও পাতলা হতে থাকে। এর ফলে চোখের চারপাশের শিরা আরও স্পষ্ট হয়ে যায় আর চোখের ডার্ক সার্কেল আরও স্পষ্টভাবে দেখা যায়। স্ট্রেস, অতিরিক্ত স্ক্রিন এক্সপোজার এবং ঘুমের অভাবও এর কারণ।
ডার্ক সার্কেলের ঘরোয়া প্রতিকার:
ভারতীয় চিকিৎসক রুবি সচদেব এর কিছু ঘরোয়া প্রতিকার জানিয়েছেন:
১. ঠাণ্ডা সেঁক
সকালে বা সন্ধ্যায় শসার টুকরো বা রস দিয়ে ১০ মিনিটের জন্য বা দিনে দু’বার এই ঠাণ্ডা সেঁক দিন। এতে ত্বক উজ্জ্বল হয়। কোল্ড গ্রিন টি ব্যাগে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য পাবেন।
২. টমেটো ব্যবহার করুন
টমেটো লাইকোপেনের সমৃদ্ধ উৎস, যা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য, দৃষ্টি এবং ত্বকের জন্য দুর্দান্ত একটি উপাদান। লেবুর রসের সঙ্গে সম পরিমাণ টমেটো রস মেশান এবং তুলো দিয়ে লাগান।
৩. আলুর রস
আলুর রস ভিটামিন-সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি সমৃদ্ধ উৎস এবং কোলাজেন গঠনের সংশ্লেষণের জন্য দুর্দান্ত। আলুর রস তুলোয় ভিজিয়ে নিজের চোখের উপর দশ মিনিটের জন্য প্রয়োগ করুন এবং হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৪. দুগ্ধজাতীয় পণ্য ব্যবহার করুন
ঠান্ডা দুধের মতো দুগ্ধজাত খাবার, হলুদের পেস্ট সহ বাটার মিল্ক ভিটামিন-এ’র সমৃদ্ধ উৎস যাতে রেটিনয়েড থাকে। এগুলো ত্বককে উজ্জ্বল এবং তরুণ করে। তুলোয় করে এই উপাদান আপনার চোখের নীচের অংশে প্রয়োগ করতে পারেন।
৫. তেল ম্যাসাজ
তেল দিয়ে চোখের নিচের অংশে ম্যাসাজ করা একটি ভাল পদ্ধতি হতে পারে।
১. ভিটামিন ই তেল ফ্রি র্যাডিকেকের বিরুদ্ধে লড়াই করে যা বার্ধক্যের লক্ষণগুলোর মূল কারণ
২. নারকেল তেলের প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি বৈশিষ্ট্য রয়েছে
৩. আর্গন তেল ভিটামিন ই-র সমৃদ্ধ উৎস
৪. আঙ্গুর বীজের তেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ
৫. হলুদ পেস্ট এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা প্রতিটি বাড়িতে পাওয়া যায় এবং এটির অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য ডার্ক সার্কেল হ্রাস করে।
ডার্ক সার্কেল কীভাবে প্রতিরোধ করবার উপায়?
ভারতের
ডা. সৌরভ শর্মা, এমএস এবং এমসিএইচ
(প্লাস্টিক সার্জন), পরামর্শ দিয়েছেন, “বেশিরভাগ সময় ডার্ক সার্কেল অস্থায়ী হয় এবং
প্রায়শই বার্ধক্য বা ঘুমের অভাবের কারণে তা দেখা দেয়। যদিও চোখের চামড়ার হাল
ফেরাতে ঘরে ঘরে প্রচুর পরিমাণে চিকিৎসা এবং ঘরোয়া টোটকা রয়েছে, তবে সাধারণত ডার্ক সার্কেল নিয়ে চিন্তার কিছু
নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যদি বিবর্ণতা বা ফোলাভাব আরও খারাপ দিকে যেতে থাকে তবে
ডাক্তারের কাছে যান অবশ্যই।
ডার্ক সার্কেল প্রতিরোধের কিছু টোটকা:
১. কাজের ও মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন।
২. আয়রন এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার আপনার হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াবে এবং আপনার ডার্ক সার্কেল হ্রাস করবে।
৩. সবসময় চোখের ত্বক ময়শ্চারাইজ করুন। শুকনো, ডিহাইড্রেটেড ত্বক চোখের নিচের অঞ্চলটিকে নিস্তেজ করে তোলে করবে।
ডার্ক সার্কেলের জন্য কিছু ঘরোয়া প্রতিকার:
১. ঠান্ডা শসার টুকরো ব্যবহার করুন
শসাতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে যা চোখের চারপাশে ফোলা ভাব হ্রাস করতে পারে। প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট হিসাবে শসা ত্বকের টিস্যুকে সংকুচিত করে। দুই চোখের উপর কাটা শসার টুকরো রাখুন। ৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং ধুয়ে ফেলুন।
২. কোল্ড টি ব্যাগ ব্যবহার করে দেখুন
চা ব্যাগে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং ক্যাফিন রক্তনালী সঙ্কুচিত
করতে এবং তরল ধারণক্ষমতা হ্রাস করতে সহায়তা করে। চায়ের ট্যানিন বিবর্ণতা হ্রাস
করতে পারে।
৩. বেশি
ঘুমোন
ঘুম কম হলে ডার্ক সার্কেল হয়। ঘুম কম হলে আপনার ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়, যা ডার্ক সার্কেলকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। সাত থেকে আট ঘন্টা বিশ্রাম নিন।
৪. মাথা উঁচু রেখে ঘুমাবেন
ঘুম কম হলে যেমন ডার্ক সার্কেল হয় তেমনই কীভাবে ঘুমোচ্ছেন সেটাও বড় বিষয়। ডার্ক সার্কেল প্রতিরোধ করার জন্য মাথার নিচে কয়েকটি বালিশ দিয়ে উঁচু করুন যা চোখের নিচের তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে।
ঘরোয়া প্রতিকার ছাড়াও কিছু কার্যকরী চিকিৎসা রয়েছে যা ডার্ক
সার্কেল কমায়।
১.
পিগমেন্টেশন হ্রাসের জন্য কেমিক্যাল পিল
২. ত্বকের পুনর্গঠন এবং ত্বক শক্তিশালী করার জন্য লেজার সার্জারি
৩. পাতলা চামড়ায়রঙ্গক ইনজেকশনের জন্য মেডিকেল ট্যাটু
৪. রক্তনালীগুলি এবং মেলানিন যা আপনার চোখের নীচের ত্বকের বিবর্ণতা সৃষ্টি করে, তা লুকোতে টিস্যু ফিলার।