নন্টুর পাথর (দ্বিতীয় পর্ব )
প্রহাণ মুখোপাধ্যায়, দমদম, ষষ্ঠ শ্রেণী ##
নন্টুর আর কিছু করার ছিল না। সে সেই পাথরটা ফেলতে চাইছিল না। কিন্ত মায়ের বার বার বলার পরে তাই সে তাকে ছুঁড়ে ফেলল পাশের জঙ্গলে।
এদিকে নন্টুর বাবা খুব মুস্কিলে পড়ে গেলেন। পাথর সরানোর লোকজন পাবেন কোথা থেকে। যতদূর নজর যায় জনমনিষ্যির দেখা মেলে না। হঠাৎ দেখা গেল দুজন লোক আসছে সেই দিকেই। তারা হাসতে হাসতে কি যেন একটা বলছিল। যাই হোক, তার বাবা খুব খুশি হলেন, এতক্ষণ পরে অন্তত দুজন তো মিলেছে। তারা কাছে আসতেই বাবা তাদের অনুরোধ করলেন, “দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা খুব বিপদে! এই মস্ত বড় পাথরটা আমাদের রাস্তা আটকে দিয়েছে!”
লোকগুলো প্রথমে পাথরটাকে দেখল। যেই তাদের নজর সেই পাথরের ওপর পড়ল, অমনি তাদের মুখ হা হয়ে গেল! কিছুক্ষণ পরে তাদের মধ্যে একজন বলে উঠল, “দাড়ান দাড়ান! আমাকে একবার দেখে নিতে দিন। আমরা আছি দুজন; আর আপনারা হলেন চারজন। মিলে হল ছয় জন…”
“মাত্র!!,” তাকে থামিয়ে দ্বিতীয় জন বলে উঠল, “এতে কি হবে বলুন! অন্তত ১০ জন লাগবে এতে। বুঝলেন!” বাবা তো রীতিমত হতাশ তখন। কোথা থেকে পাবেন ১০ জন! এমনিতেই এদিকে লোকের দেখা নেই, তার উপরে আবার ১০ জন!
হঠাৎ নন্টুর মনে হল ঝোপের মধ্যে যেন হালকা নীল আলোর আভা জেগে উঠল। কেমন যেন স্বপ্নের মত হল। নন্টুর বাবা দেখলেন যে হঠাৎ প্রচুর মানুষজন সেই রাস্তায় আসছেন। তারাও সেই পাথরটা দেখে হতভম্ব। সবারই একই প্রশ্ন, এই পাথরটা এখানে এল কি ভাবে?
বেশ কয়েকজন বড় পাথরটাকে সরাতে হাত লাগাল, বাকিরা তাদের সাহায্য করতে লাগল। নন্টুর বাবাও হাত লাগালেন তাদের সঙ্গে। ঠেলতে ঠেলতে পাথরটাও গড়িয়ে পড়ে গেল।
নন্টু কিন্তু এখনও সেই নীল পাথরের কথা ভোলেনি। তার স্পষ্ট মনে আছে, সেই পাথরটা তাদের বাঁচাতেই চেয়েছিল। তার এটাও মনে আছে যে সেটার আলোতেই ব্রেকটা কষেছিল, আর তাদের জীবন বেঁচে ছিল। কিন্ত কেনই বা মায়ের এটা মনে হল ওটা তাদের ক্ষতি করতে চায়।
যাই হোক, রাস্তাটা এখন খুলে গেল। নন্টুর বাবা এতো খুশি হলেন যে তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন “পেরেছি!!! আমরা সত্যি পেরেছি!!” প্রায় দুঘন্টা পরে তারা এখন রাস্তা খোলা পেয়েছে!
নন্টুর বাবা সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চেয়ে ছিলেন। কিন্ত জানাবেন কি করে! পাথরটা সরানোর পরই সবাই কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল!
নন্টুর বাবার মাথায় কিছুই ঢুকছিল না। শুধু তাঁরই নয়, সকলেই অবাক – এমনকি নন্টুও। সে ভাবল, এটাও আবার কি করে সম্ভব! এত গুলি মানুষ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে উধাও। এটাও সেই পাথরের মতনই অদ্ভুত।
নন্টু এতটাই গভীর ভাবনার মধ্যে ডুবে গিয়েছিল যে সে কখন গাড়িতে উঠে হোটেলে পৌছে গেছে সেটাও খেয়ালই করেনি। “আয়, নন্টু আয়। আয় বাবা ওঠ! হোটেলে ঢুকবি না?”
হুশ ফিরতে নন্টু কোনো রকমে বলল, “হ্যা, হ্যা মা। আমি আসছি।”
“ওহ! ওই পাথর আর ওই লোকজনদের ব্যপারে অতো মাথা ঘামাস না।”
“কিন্ত মা! ওই লোকেরা হঠাৎ করে উধাও… এএএ সব কি করে!!”
“ও যাক গে! ওরা হয়তো আগে আগেই চলে গেছে। তুই এসব ব্যপারে ভাবিস না। তুই ব্যস নামতো দেখি!”
নন্টু গাড়ি থেকে নামল বটে কিন্ত তার চিন্তা এখনও সেইখানেই।
দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। নন্টু এখনও সেই ব্যাপারটা ভোলেনি। উত্তেজনায় রাতে তার ঘুমই আসতে চাইছে না। যে ছেলেটা রাত নটাতেই ঘুমিয়ে পড়ে তারই আজ চোখে এক ফোটা ঘুমও নেই।
এদিকে সেই রাতে দুই চোর হোটেলে ঢুকেছিল। তাদের মধ্যে একজনের নাম ছিচকে, আরেকজনের নাম মিচকে। তাদের নাম যতই অদ্ভুত, ততটাই ভয়ংকর তারা। দার্জিলিঙ জেলার মোস্ট ওয়ান্টেড চোরেদের তালিকায় শীর্ষে তারা। পুলিশ তাদের হাতের নাগালে কিছুতেই পায় না। বিভিন্ন জায়গায় তাদের নাম দিয়ে পোস্টার লাগানো আছে! তাদের মধ্যে একটা পোস্টার নন্টুর চোখেও পড়েছে।
এবার ছিচকে এবং মিচকের নজর এই এলাকার হোটেলের দিকে। ছিচকে চুপটি করে এক ল্যাসো বার করে তার এক দিক সোজা ছুঁড়ল নন্টুদের বারান্দার রেলিঙে। তারপর আরেকটা দিক এক ল্যাম্পপোস্টে বেধে দিল। তারপর তাতে চরতে লাগল।
বারান্দায় উঠতে যাবে, হঠাৎ কিছু একটা সজোরে মিচকের মাথায় পড়ল। ‘ইইইইআআ’; মিচকে প্রায় চিৎকার করে উঠল, ছিচকে বলল, ‘মিচকে চুপ কর! সবাই জেগে যাবে, তাহলে আমরা ধরা পড়ে যাব। একদম চুপ থাক!’ মিচকে কোন মতে চুপ করে থাকল। এবার ছিচকের মাথায় এসে পড়ল কিছু একটা সজোরে। সেও প্রায় চিৎকার করতে যাচ্ছিল, কিন্ত সকলে জেগে যাওয়ার ভয়ে সে নিজেকে সামলে নিল। ঘরে ঢুকতেই শুরু হল পাথরের পিটুনি। হাউমাউ করে উঠল দুজনে।
নন্টুর বাবা-মা একটা ভয়ানক ঝটাপটির আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে উঠে পড়লেন। নন্টুও প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল। তারা চট করে আলো জ্বালিয়ে দেখে কি!- দুই চোর ছিচকে আর মিচকে মাটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে!!
বাবা বললেন “এরা দুজন কোথা থেকে এলো!”
মা বললেন “সেটা বড় কথা নয়! কথাটা হল এদের দুজনের এ হাল কে করেছে।”
বাবা বললেন “অ্যা! এ কি দেখছি! আমাদের জিনিসপত্র নিজেই উঠে তাদের মারছে!”
মা বললেন “এটাও কি সম্ভব! আজকের দিনটাতেই এরকম কেন হচ্ছে?”
‘মা, একবার ওদিকে দেখ।’ মা ওদিকে তাকাতেই অবাক হয়ে দেখেন সেই পাথরটা! সেটা আবার ফিরে এসেছে!
চোর দুটোর যখন চোখ খুলল, ততক্ষণে পুলিশ তাদেরকে ঘিরে রেখেছে।
“স্যার! স্যার! আমাদের বাঁচান! আমাদের ওই পাথরের হাত থেকে বাঁচান! আমাদের জেলে নিয়ে যান! যা হয় করুন, কিন্তু আমাদের বাঁচান!!” আর্তনাদ করে উঠল দুজনেই।
‘ঠিক আছে। তোদের যখন এতই ইচ্ছা আছে, তাহলে চল তকে জেলে পুরে দিয়ে আসি।’ তাদের গাড়িতে ঢুকিয়ে পুলিশ অফিসার বললেন ‘ওহ, শেষমেশ আজ এই দুই বেটাকে ধরেছি! এবার সব মুস্কিল শেষ।’
নন্টু তার মাকে বলল, ‘দেখলে মা, আমি বলেছিলাম না পাথরটা আমাদের সাহায্য করতে চেয়েছিল।’
মা বলল, ‘ঠিকই বলেছিলি রে, ও সত্যি আমাদের সাহায্য করতেই চেয়েছিল। কিন্ত পাথরটা তো ফেলে দিয়েছিলি আবার কোথা থেকে এল?’
নন্টু বসে বসে পাথরটার ব্যাপারে ভাবছিল, হঠাৎ ফের উজ্বল হতে শুরু করল টেবিলে থাকা পাথরটা।
“নন্টু, ওঠ, ওঠ বাবা… শিগগিরি ওঠ! অনেক ক্ষণ ধরে ডাকছি! আমাদের ডুয়ার্স যেতে হবে না? ট্রেন মিস হয়ে যাবে তো”
ধড়ফর করে উঠে বসে নন্টু। এখনও ডুয়ার্স যাওয়া হয়নি? তাহলে জাদু পাথরটা…
# #
এই গল্পের প্রথম পর্বের লিঙ্ক , নিচের ছবিতে ক্লিক করলেই পড়া যাবে প্রথম পর্বটি-
দারুণ
Khub valo