পৃথিবীর অদ্ভুত সুন্দর জায়গাগুলি
চন্দ্রানী মুখোপাধ্যায়
আশ্চর্য সুন্দর অতুলনীয় বেশ কিছু জায়গা রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। অকল্পনীয় সৌন্দর্যে মোড়া সেই সব জায়গাগুলি দেখে অনেক সময় অন্যভুবনের মতও মনে হয়। আমাদের না জানা বা অল্প জানা তেমন কিছু জায়গার ছবি এবং সামান্য তথ্য রইল অবেক্ষণের পাঠকদের জন্য।
১) তিয়ানজি পর্বতমালা, চীন
একইসাথে খুব লম্বা এবং সরু ধরনের এই পর্বতগুলি দেখে মনেই হয় না এগুলি পৃথিবীতেই আছে। এ কারণেই এই পর্বতগুলি জেমস ক্যামেরনের অবতার(অভতার) ছবিতেও দেখা গিয়েছে। ৩৮০ মিলিয়ন বছর আগে এইগুলি সমুদ্রের তলদেশে গড়ে উঠেছিল, জল প্রবাহের কারণে এর আশেপাশের বালির তৈরি পাথরগুলি ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু শক্ত শিলাগুলিই টিকে আছে। কোনো পর্বতের দৈর্ঘ্য সমুদ্র-পৃষ্ঠ থেকে ৪০০০ ফুট উঁচু।
২) সেন্টিনেলস অব দ্য আর্কটিক, ফিনল্যান্ড
এই ছবি ফিনল্যান্ডের। সেন্টিনেলস বা বরফে ঢাকা বড় আকারের গাছ। এই অদ্ভূত দৃশ্যটি শুধু শীতকালেই চোখে পড়ে যখন তাপমাত্রা -৪০ থেকে -১৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের মধ্যে অবস্থান করে।
৩) সালার দে ইয়ুনি, বলিভিয়া
বর্ষাকালে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লবণ-ভূমি হয়ে যায় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আয়না। প্রাচীনকালে অনেকগুলি লেকের একসঙ্গে মিলনের ফলে সালার দে ইয়ুনির জন্ম হয়। লবণ-সমতল বা সল্ট-ফ্ল্যাট প্রতিবিম্বের সল্ট-ফ্ল্যাট খুব স্বচ্ছ আয়না হিসেবে কাজ করে। স্যাটেলাইটের শক্তি বা ক্ষমতা নির্ণয়ের জন্য এটা ব্যবহার করা হয়। দেখতেও অসাধারণ।
৪) স্কাফটাফেল আইস কেভ, আইসল্যান্ড
যখন জলপ্রবাহ কোনো হিমবাহের ভিতরে গর্ত তৈরি করে তখন হিমবাহের প্রান্তে অস্থায়ীভাবে বরফের গুহা বা আইস কেইভ তৈরি হয়। স্কাফটাফেল আইস কেভের ভিতরটা খুব আবদ্ধ। এর ভিতরে অল্প পরিমাণ বাতাস আছে। এই গুহার দেয়াল নীল ছাড়া আর সব আলো শুষে নেয়। ফলে এখানের বরফ একটি আকর্ষণীয় রঙে দেখা যায়।
৫)আন্টেলোপ ক্যানিয়ন, আরিজোনা, আমেরিকাt
কয়েক মিলিয়ন বছর আগে জল প্রবাহের তারতম্যের কারণে এই গভীর গিরিখাতটি সৃষ্টি হয়। আর এর গভীরে আলো কম পৌঁছানর কারণে এটাকে আরো গভীর মনে হয়। এর দেয়াল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রঙে দেখা যায়।
৬) ডেড ভ্যালি, নামিবিয়া
আরও এক আশ্চর্য সুন্দর জায়গা হল নামিবিয়ার ডেড ভ্যালি। এই ডেড ভ্যালিতে যে গাছগুলি দেখা যাচ্ছে সেগুলি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বালিয়াড়ির বিপরীতে দাঁড়ানো। একসময় এখানে গভীর বন ছিল, আর এখন মরুভূমি। সুন্দর এই এলাকায় বহু চলচ্চিত্রের শুটিং হয়েছে।
৭) টারকুয়োজ আইস, বৈকাল হ্রদ, রাশিয়া
বৈকাল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে পুরনো স্বচ্ছ জলের হ্রদ। শীতকালে এই হ্রদ জমে যায়। কিন্তু এই হ্রদের জল এতটাই পরিষ্কার যে বরফের ১৩০ ফুট নিচে পর্যন্ত পরিষ্কার দেখতে পাওয়া যায়। মার্চ মাসে বরফে তুষার এবং রোদের কারণে ফাটল ধরে। এর ফলে বরফ থেকে ফিরোজা রঙের আলো ঠিকরে বের হয় যেটা বাইরে থেকে দেখা যায়। অপূর্ব সুন্দর সেই দৃশ্য দেখতে প্রবল শীতেও এখানে ভিড় জমান পর্যটকেরা।
৮) গ্র্যান্ড প্রিসম্যাটিক হট স্প্রিং, উইয়োমিং, আমেরিকা
গ্র্যান্ড প্রিসম্যাটিক হট স্প্রিং আমেরিকায় সবচেয়ে বড় গরম জলাশয়। এই জলাশয়ের জলের এরকম গাঢ় রঙের কারণ হলো, জলাশয়ের জলে রঞ্জক ধরনের অণুজীব। এই অণুজীবগুলি যেসব জলে প্রচুর খনিজ উপাদান আছে, তাদের আশেপাশে জন্মায়।
৯)পামুক্কেল হট স্প্রিংস, তুরস্ক
কয়েক মিলিয়ন বছরে পামুক্কেল উষ্ণ প্রস্রবণ এবং জলাশয় সুন্দর একটি ল্যান্ডস্কেপে পরিণত হয়েছে। দেখে মনে হতে পারে জলাশয়ের আশেপাশের জায়গাগুলি বরফের, কিন্তু তুরস্কে সারা বছরই গরম থাকে। আসলে বরফ বলে যা মনে হচ্ছে সেগুলি চুনা পাথর।
১০) সকোটরা, ইয়েমেন
সকোটরা দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ উদ্ভিদ পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় নি। সবচেয়ে উদ্ভট প্রজাতির একটি হচ্ছে ড্রাগন ব্লাড গাছ। এই গাছটি দেখতে ছাতার মত। অন্যান্য গাছগুলিও কেমন যেন অদ্ভুত আকৃতির। অনেকেই এই জায়গাটিকে এলিয়েনদের স্থল বলেও অভিহিত করেন।
১১)ঝ্যাংগাই ড্যানজিয়া ল্যান্ডফরম, গানসু, চীন
হঠাত দেখলে মনে হয় যেন হোলির ছোঁয়া লেগেছে পাথরের গায়ে। এই রঙিন পাথরগুলি ২৪ মিলিয়ন বছর ধরে পড়ে থাকা খনিজ পদার্থ এবং বালি-পাথরের ফলে তৈরি হয়েছে। বাতাস এবং বৃষ্টি এই পাথরগুলিকে সুন্দর আকৃতি দিয়েছে। যেমন, প্রাকৃতিক স্তম্ভ, টাওয়ার, গিরিখাত, উপত্যকা, জলপ্রপাত ইত্যাদি।
১২) টানেল অব লাভ, ক্লিভান, ইউক্রেন
অনেক বছর ধরে প্রতিদিন তিনবার করে ট্রেন যাতায়াতের ফলে আশেপাশের গাছগুলিসহ এই টানেলটি এরকম হয়েছে। পরিত্যক্ত অবস্থায় এখন টানেলটি একটি দারুণ সুন্দর এবং রোমান্টিক জায়গায় পরিণত হয়েছে।
১৩)ক্যানো ক্রিস্টাল রিভার, কলম্বিয়া
এখানে অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাস হওয়ায় এই নদীটির জলে বিভিন্ন ধরনের রঙের দেখা মেলে। নদী ধরে এগোতে থাকলে দেখা মেলে অপূর্ব সব রঙের যে রঙের কারনে অদ্ভুত সৌন্দর্য পেয়েছে এই নদী। এখানের পাথরগুলি ১.২ বিলিয়ন বছরের পুরানো। যারা এই নদী সামনাসামনি দেখেছেন তারা এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নদী বলে থাকেন।
১৪)ফ্লাই গ্লেইসার, নেভাডা
এই প্রস্রবনের ধারাটি দুর্ঘটনাবশত তৈরি হয়েছিল। একটি কূপ খনন করে পরে সেটি বন্ধ না করার কারণে এটি হয়। খনিজ পদার্থ এবং শ্যাওলা বের হয়ে জমতে জমতে এরকম অদ্ভুত দেখতে একটি টিলা হয়ে যায়। তবে বিভিন্ন রঙের সমাহারে এটি এখন নেভাদার অন্যতম সেরা পর্যটনস্থল।
১৫) প্লিটভাইস লেক, ক্রোয়েশিয়া
প্লিটভাইস প্রাকৃতিক উদ্যানটি ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে সবচেয়ে পুরাতন প্রাকৃতিক উদ্যান। কয়েক হাজার বছর ধরে চুনাপাথর এবং চকের উপর জলের প্রবাহের ফলে প্রাকৃতিকভাবে বাঁধ, সুন্দর সুন্দর হ্রদ, গুহা এবং জলপ্রপাত তৈরি হয়েছে এখানে।
১৬) মাউন্ট রোরাইমা, সাউথ আমেরিকা
টেবিলের মত দেখতে এই পর্বতটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো পর্বতের মধ্যে একটি। দুই বিলিয়ন বছর আগে ভূ-অভ্যন্তরে পরিবর্তনের কারণে এই পর্বতটি তৈরি হয়েছিল। এই পর্বতের ধারগুলি সম্পূর্ণ খাড়া। এটাতে অনেকগুলি জলপ্রপাত আছে। এতে আরোহণ করা অসম্ভবের কাছাকাছি একটা ব্যাপার।
১৭)জলের নিচে নদী, সিনোট অ্যাঞ্জেলিটা, মেক্সিকো
সিনোট অ্যাঞ্জেলিটায় জলের নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীটি হাইড্রোজেন সালফেট দিয়ে পরিপূর্ণ। ফলে এই নদীর জল সাধারণ লবণাক্ত জলের চেয়ে ভারী বা ঘনত্ব বেশি। যখন এই হাইড্রোজেন সালফেট মিশ্রিত জল সাধারণ জলে ডুবে যায় তখন এটি নিজেই আলাদাভাবে জলের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। মেক্সিকোর এই নদীকে ঘিরে তাই রহস্যের সীমা নেই।
১৮)নাইকা মাইন, মেক্সিকো
এই রুপার খনিটি স্ফটিক দ্বারা আবৃত। এটা ৫০ ফুট লম্বা এবং ৪ ফুট প্রশস্ত। এর নিচের ম্যাগমা স্তর থেকে যে হাইড্রোথার্মাল তরল নির্গত হয়েছে তার ফলে এই স্ফটিকের(ক্রিস্টাল) আবরণ তৈরি হয়েছে। যারা গুহা দেখতে ভালোবাসেন তাদের জন্য অবশ্যই দেখার জায়গা এটা।
১৯)লেক নাটরন, তাঞ্জানিয়া
এই লেকের জলে লবণের পরিমাণ অতিরিক্ত বেশি। লবণে আসক্তি আছে এমন অণুজীবগুলি এখানে বেড়ে ওঠে এবং লাল রঞ্জক পদার্থ তৈরি করে। ফলে জলের রঙ লাল হয়ে থাকে। অন্যান্য প্রাণিদের জন্য এই জল বিপদজনক। এই জলে নামার পর অনেক প্রাণি চুনাপাথরে পরিণত হয়।
২০)দি আই অব আফ্রিকা, মৌরিতানিয়া
সাহারা মরুভূমির মাঝখানে পাওয়া গেছে এই অদ্ভুত সুন্দর জায়গাটি। চোখের মতন দেখতে লাগে বলে একে ‘দি আই অফ আফ্রিকা’ নাম দেওয়া হয়েছে। এটা ২৪ মাইল জুড়ে বিস্তৃত। এর প্রাকৃতিক গঠন এত সুন্দর যে অনেকদিন ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন এটা মহাজাগতিক কোনো ঘটনার ফলে তৈরি হয়েছে।