ভালবাসায় অটুট রইল, ভাল বাসা
নন্দন দত্ত, সিউড়ী, বীরভূম ##
বাসা গড়তে গিয়ে বাসা ভাঙার নজির এখন ভুরি ভুরি। কলকাতা তো বটেই, শহর ছাড়িয়েও এখন এই বাসা ভাঙার ছবি বেশ পরিচিত। কিন্তু একটি নির্মাণ সংস্থার ছক ভাঙা কাজে এই বাসা ভাঙার গল্পে এসেছে এক অচেনা মোড়। ঘটনাস্থল বীরভূমের সিউড়ী।
সম্প্রতি লালকুঠি পাড়ায় জমি সহ একটি তিনতলা বসত বাড়ি কেনে গার্ডেন রিচের নির্মান সংস্থাটি। বনদফতরের অনুমতি নিয়ে বাড়িটিতে থাকা কয়েকটি পুরনো গাছও কাটে সংস্থাটি। ধুলিস্যাত করে দেওয়া হয় বসত বাড়ি ‘সাধুভবন’। সোমবার তিথি মেনে ভূমি পুজো করে নির্মান সংস্থাটি। জবা গাছের ঝোঁপে তখনই ডেকে ওঠে ঘুঘুটি। বাস্তু ঘুঘুটি যে দীর্ঘদিনের বাসিন্দা তার জানান দেয়। সংস্থার পক্ষে তখন সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন রামকৃষ্ণ বসু। তিনি কর্মীদের খোঁজ নিতে বলেন। কর্মীরা দেখেন জবা গাছটিতে একটি ঘুঘু পাখির বাসা, নাড়া লেগে বাসায় থাকা তিনটি ডিমের একটি ডিম মাটিতে পড়ে ভেঙে গিয়েছে। একটি ডিম ফুটে ছানা বেরিয়েছে। তখনই গাছতলায় বসে সংস্থা সিদ্ধান্ত নেয় গাছ না কাটার। রামকৃষ্ণবাবু জানিয়ে দেন আমরা পাখির বাসা ভেঙে মানুষের বাসা তৈরি করব না। শুধু তাই নয় যতদিন ডিম ফুটে ছানা না বের হয় ততদিন ওই অংশে নির্মাণ বন্ধ থাকবে।
বেসরকারি ওই নির্মাণ সংস্থার ডিরেক্টর স্নিগ্ধা ঘোষ জানান, “আমরা বাসা গড়ি। তাই সবার বাসাকেই সমান শ্রদ্ধা করি। যতদিন ওই পাখির ডিম ফুটে বাচ্চা উড়ে না যাবে ততদিন ওই অংশে কোনও নির্মান হবে না”। জেলা বিভাগীয় বনাধিকারিক পারভিন কাওসোয়ানের মতে এটা একটা উদাহরন হওয়া উচিত। পাখির বাসা বাঁচাতে এমন মানবিক দৃষ্টান্ত মেলা ভার।
কেউ কেউ বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ দীনবন্ধু বিশ্বাসের হেফাজতে ডিম রেখে নির্মানের পরামর্শ দেন। কারন দীনবন্ধুবাবু সরীসৃপের ডিম ফুটিয়ে অনুকূল পরিবেশে তাদের ছেড়ে দেন। কিন্তু দীনবন্ধুবাবুর মতে, “মায়ের ওমে যেখানে ডিম ফাটে সেখানে কৃত্রিম প্রক্রিয়া কেন”? তাছাড়া তিনি ঘুঘুর ডিম ফোটানোর প্রক্রিয়াও জানেন না। তবে যে মানবিকতা একজন প্রমোটার দেখিয়েছেন তা একটা দৃষ্টান্ত হল বলে তিনিও মনে করেন।
এখন নির্মাণ স্তব্ধ, তাই নিরিবিলিতে মায়ের আদরে নিরাপদেই রয়েছে ঘুঘু শাবকেরা। মাঝে মধ্যেই ওদের দিকে নজর রাখছেন একজন নিরাপত্তা কর্মী। সব মিলিয়ে সাধুভবনের বাস্তুঘুঘুদের নিয়ে এই কোমল শীতেও বেশ সরগরম সিউড়ী শহর।
ছবিঃ শান্তনু দাস