Drugs
সুমন সেন, রিষড়া, হুগলি
“একটা নতুন মাল পেয়েছি, ভাই!” –সুরেশ উত্তেজিত হয়ে বলল রাহুলকে।
সুরেশকে আজ মধ্যাহ্ন-ভোজের জন্য নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রন করেছে রাহুল। ভোজন সেরে তারা ড্রয়িং রুমে এসে বসেছে – মিনিট পাঁচেক হ’ল। রাহুলের স্ত্রী প্রীতিও আড্ডা মারছিল ওদের সাথে। এইমাত্র সে কোল্ড-ড্রিঙ্কস্ আনতে গেল। এই ফাঁকে দুই বন্ধু নিজেদের মধ্যে কিছু গোপনীয় কথা সেরে ফেলার চেষ্টা করল।
সুরেশ ও রাহুল ছোটোবেলা থেকেই বন্ধু। একই সাথে পড়াশুনা এবং খেলাধুলা দু’ই করেছে। এখন তারা দুজনেই একই মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে।
“ম্…মানে?!” –রাহুল কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল।
“আরে… নতুন একটা ড্রাগ পেয়েছি।” –সুরেশ বলল।
“তুই জানিস তো ভাই… আমি এইসব ব্যাপারে…”
“আরে জানি জানি, তবে এইটা নে। এ’টা সবথেকে আলাদা। মার্কেটে খুব নাম শুনছি! আর…দামেও খুব একটা বেশি না। ১২০০ টাকা মাত্র!”
“দেখ ভাই… আমার এখন এই সবে আর বিশেষ রুচি নেই! তাছাড়া, প্রীতি জানতে পারলে খুব রাগ করবে।”
“কিছু জানতে পারবে না। প্রীতি তো বলল – আজ বিকেলে বাপের বাড়ি যাবে, আবার কাল বিকেলে ফিরবে। আজ রাতেই আমরা মাল্টা সাবাড় করে ফেলব।”
“আচ্ছা, কোথায় আছে জিনিসটা?”
“আমার কাছেই আছে, বাড়িতে।”
“দেখ… তুই এত করে জোর করছিস… শুধুমাত্র তাই…, নয় তো…”
“আচ্ছা ঠিক আছে, আর কোনোদিন বলব না তোকে। কিন্তু এটা না নিলে তুই দারুন একটা জিনিস মিস্ করবি।”
“হুম্ম্!”
“ঠিক আছে, রাতে আমার বাড়িতে আয়। দেখবি, ভালো লাগবে আশা করি! ট্যাবলেটের মত জিনিসটা। একবাটি গরম জলে ফেলে, বাষ্পটা নাক দিয়ে টানতে হ’বে। আমি সব রেডি করে রাখব।”
ইতিমধ্যে, প্রীতি ঢুকে পড়েছে ড্রয়িং রুমে।
“কি কথা হচ্ছে দুই বন্ধুর মধ্যে?” –প্রীতি এমনিই জিজ্ঞেস করল।
“ও কিছু না, কোম্পানির নতুন প্রোজেক্টটার ব্যাপারে ডিসকাস্ করছিলাম।” –রাহুল বলল।
প্রীতি কোল্ড-ড্রিঙ্কস্ রাখা ট্রেটা টেবিলে নামিয়ে রেখে, নিজে একটা গ্লাস তুলে নিল এবং দু’জনকে বাকি দুটো তুলে নিতে বলল।
***
বেল বাজল সুরেশের ঘরে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সুরেশ দেখলঃ রাত দশটা বেজে দশ মিনিট। দরজা খুলতেই রাহুল হুড়মুড় করে ঘরে ভিতরে ঢুকে পড়ল।
“রাতের খাবার হয়ে গেছে?” – রাহুল সুরেশকে জিজ্ঞেস করল।
“হ্যাঁ, তোর?”
“এইমাত্র খেলাম।”
“আচ্ছা শোন, একটা কথা তোকে বলা হয়নি – মালটা নেওয়ার দশ-পনেরো মিনিট পর থেকে ওর প্রভাব শুরু হ’বে। এরপর ঘন্টাখানেক মনে হ’বেঃ তুই যেন কোনো পরীর দুনিয়ায় উড়ে বেড়াচ্ছিস। তারপর ঘুম চলে আসবে।”
“ধুউ-উ-স্-স্!”
“হা হা হা” –সুরেশ রাহুলের অভিব্যক্তি দেখে হাসল।
“সব রেডি?”
“হ্যাঁ।”
সুরেশ টেবিলের দেরাজ থেকে একটা ছোটো কৌটো বের করল। রাহুল ততক্ষনে সুরেশের ঘরের চারিদিকটায় চোখ বুলিয়ে নিল। তার ঘরের দেওয়ালের চারিদিকে লাগানো বিভিন্ন দেশী-বিদেশী সুপারহিরোর ছবি।
“তুই এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলি, সুরেশ!” –রাহুল বলল।
“ছাড়তো… মাল্টা নে।”
সুরেশ কৌটোর ছিপি খুলে দুটো ট্যাবলেট বের করল। একটা নিজে রাখল, আরেকটা রাহুলকে দিল। “চল্, সোফায় গিয়ে বসা যাক।” –সে বলল।
সুরেশ রান্না ঘর থেকে এক কেট্লি গরম জল এবং দুটো বাটি নিয়ে, রাহুলকে সঙ্গে করে সোফায় গিয়ে বসল।
বাটি দুটোতে গরম জল ভর্তি করে – ট্যাবলেট গুলো ফেলে দিল তাতে। প্রচুর বাষ্প বের হ’তে শুরু করল জল থেকে। দুই বন্ধু পাশাপাশি বসে ঘ্রান নেওয়ার ভঙ্গিমায় বাষ্প টেনে নিতে শুরু করল।
একসময় বাষ্প বের হওয়া বন্ধ হয়ে গেল। রাহুল, বন্ধুকে শুভরাত্রি জানিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল।
“তাড়াতাড়ি বাড়ি যা, তোর হাতে দশ মিনিট সময় আছে।”
***
পরের দিন, সুরেশ ও রাহুল – দুজনের কেউই অফিসে যেতে পারল না। মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, সঙ্গে শরীরে অসহ্য যন্ত্রনা।
সকালে উঠে, আধ-ঘন্টার মধ্যে রাহুল সুরেশকে ফোন করে, “হ্যাঁ সুরেশ, কোথায় আছিস?”
“বাড়িতে।” –সুরেশ উত্তরে জানায়। “আজ অফিসে যেতে পারব না মনে হচ্ছে, শরীরটা খুব খারাপ!”
“মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, আর শরীরে যন্ত্রনা?”
“হ্যাঁ, তোরও হচ্ছে বুঝি?”
“হ্যাঁ। আমার মনে হয়ঃ কালকের ড্রাগটার সাইড-এফেক্ট এ’গুলো। কি জিনিস দিলি ভাই?! প্রীতি এসে যদি ঘুনাক্ষরেও টের পায়, আমাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে খাবে!”
“আরে… কিচ্ছু হ’বে না, তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেন? অফিসে একটা ফোন করে বলে দে – আজ যেতে পারবি না। আজ সারাদিন বাড়িতে থেকে দেখ, মনে হচ্ছে সব ঠিক হয়ে যাবে!”
“ও.কে. দেখি কি হয়!” –রাহুল ফোন রেখে দিল।
***
বিকেলের দিকে দুজনেরই শরীরের কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
সুরেশ ফোন করল রাহুলকে- “কেমন আছিস এখন?”
“ভালো আছি একটু। বমি বমি ভাবটা কমেছে, তবে মাথা ঘোরাটা আছে অল্প। প্রীতি ফিরেছে। কাজে যাইনি বলে বকাবকি করছিল। বাড়িতেও বেশি কাজ করছি না। সারাদিন গল্প বই পড়েই কাটিয়ে দিলাম।”
“খুব ভালো! আমিতো পুরো ফিট্ হয়ে গিয়েছি। আচ্ছা, রাখলাম। রাতের দিকে যাব একবার।”
***
দুইমাস পরঃ
অনেক কিছু পাল্টে গিয়েছে এই দুই মাসে। সুরেশ ও রাহুলের বন্ধুত্বের সম্পর্কেও চিড় ধরেছে সামান্য। কারণটা হলঃ রাহুলের প্রতি সুরেশের ঈর্ষা! ছাত্রাবস্থা থেকেই রাহুল সুরেশের থেকে বেশী মেধাবী ছিল। সুতরাং, তখন থেকেই সুরেশের মনে ঈর্ষা ঘনীভুত হচ্ছিল রাহুলের প্রতি। তবে, তাদের এত বছরের সম্পর্কে কোনোদিন সুরেশের কাছ থেকে সেটা প্রকাশ পায়নি। কিন্তু ইদানিং… অফিসে রাহুলের প্রোমোশন পাওয়া এবং নতুন প্রোজেক্টটাতে তার দায়িত্ব পাওয়াটাকে সুরেশ যেন মেনে নিতে পারছেনা। তার ধারনা ওই কাজের জন্য একমাত্র সে নিজেই উপযুক্ত লোক! এ’ব্যাপারে সে রাহুলের সাথে কথাও বলেছে। এবং সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরার সূত্রপাতও হয় তখন থেকেই।
এছাড়াও, ইদানিং তাদের মধ্যে একটা আমূল পরিবর্তন এসেছে। রাহুল যেন তার কাজের প্রতি আরও বেশী তৎপর হয়ে গিয়েছে। অফিসের যে কোনো ছোট-বড় সমস্যার সমাধান করা এখন তার বাঁ-হাতের খেলা। অনেকের মনে হ’তে পারে – এটা প্রোমোশন পাওয়ার পরে তার আনন্দের বহিঃপ্রকাশের ফল! কিন্তু না, আগেও প্রোমোশন পাওয়ার জন্য সে নিজের কাজের প্রতি একাগ্র হ’বার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেনি। এখন তার পরিবর্তন সম্পূর্ণরুপে আভ্যন্তরিক এবং স্বয়ংক্রিয়।
অন্যদিকে, সুরেশের জীবনে এসেছে এক অবিশ্বাস্য ধরনের পরিবর্তন। এখন সে উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির মনের ভাব বুঝে নিতে পারে। শুনে নিতে পারে সে তার না বলা কথা। অন্য কাউকে দিয়ে, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই কাজ করিয়ে নিতে পারে সে। মাসখানেকের মধ্যে, ছোটোখাটো কয়েকটি অপরাধমূলক কাজও করে ফেলেছে সে। তবে, মানুষের অভিশাপও সে কুড়িয়েছে প্রচুর। তার জন্যই হয়তো তার এই শক্তিই তাকে নিজের শারীরিক বিনাশের প্রতি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। যে মাথার প্রয়োগ করে সে এই শক্তিকে কাজে লাগাত, সেই মাথাতে এখন সে বেশি জোর দিতে পারে না। এই শক্তিকে কাজে লাগানোর সময়; অজান্তেই নিজের মাথায় একটু বেশি জোর প্রয়োগ করলেঃ গল্গল্ করে রক্ত বেরিয়ে আসে তার নাক থেকে, মুখ থেকে।
প্রথম কয়েকদিন সুরেশের বেশ মজাই লাগছিল এই শক্তি পেয়ে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তার মাথায় চিন্তা প্রবেশ করেঃ ‘এই শক্তির উত্স তাকে খুঁজে বের করতেই হ’বে!’ অতীতের সমস্ত স্মৃতি তোলপাড় করে ফেলে সে। অবশেষে মনে পড়ে ‘ড্রাগ’-এর কথাটা।
***
একদিন মদ্যপানের জেরে – কথায় কথায় সুরেশ, তার আরেকটা বন্ধু সুমিতকে সবটা বলে দেয়। তার শক্তি পাওয়ার কথা, ছোটো-খাটো অপরাধের কথা – সব। প্রায় হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে সে। বলে – সে আগেই ভালো ছিল। তার এইসব কিচ্ছু চাই না। শুধু মুক্তি চাই মাথা যন্ত্রনা থেকে।
সুমিত প্রথমটায় বিশ্বাস করেনা সুরেশের কথা। কিন্তু… যখন সুরেশ, সুমিতকে দিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবেও একটি মদের বোতল ভাঙ্গার জলজ্যান্ত উদাহরন দেয়, তখন সেও বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় সুরেশের কথা।
“ভাই, আমিতো এইসব কিছু বুঝি না। কিন্তু একজন আছে, যে এইসব ব্যাপারে প্রচুর অভিজ্ঞ। আমার দূর-সম্পর্কের মামা, বট কৃষ্ণ পাল। চুঁচুড়াতে থাকেন। তার কাছে আমি তোকে নিয়ে যেতে পারি, যদি তুই চাস্।” –সুমিত বলল।
***
“আরে কি ব্যাপার… সুমিত বাবু যে…!”
“এইতো…। আমার মামা বট কৃষ্ণ পাল ওরফে বটুক বাবু।” –সুমিত তার বন্ধু সুরেশকে বলে। “আর… মামা, এ হল আমার বন্ধু সুরেশ। সম্প্রতি একটা বিশেষ সমস্যায় পড়েছে, তাই তোমার কাছে নিয়ে এলাম।” –বটুক বাবুকে বলে সে।
“আসুন আসুন। বসুন সুরেশ বাবু।” –বটুকবাবু বলেন।
বটুকবাবু চেয়ারে বসেছিলেন সকালের খবরের কাগজটা নিয়ে। সুরেশের সাথে পরিচয়পর্ব সারার পর উঠে পরেন। জিজ্ঞেস করেন, “কি নিবি বল সুমিত, আপনি কি নেবেন বলুন সুরেশ বাবু?”
“কিছু না। ধন্যবাদ! কাজের কথাটা আগে সেরে ফেলা যাক?” –সুরেশ বলে।
“নিশ্চই!” –বটুকবাবু বলেন।
সুরেশ তার শক্তির ব্যাপারে সমস্ত কথা বটুকবাবুকে বলে। শুধুমাত্র ছোটোখাটো অপরাধের কথাগুলো চেপে যায়।
“দেখুন সুরেশ বাবু, পৃথিবীতে এমন বহু মানুষ আছে – যারা জন্ম থেকেই কিছু বিশেষ শক্তির অধিকারী। আবার কিছু মানুষ – পরবর্তীকালে কিছু বিশেষ কারনে এইরকম বিশেষ শক্তি পেয়ে যায়। আমি যেমন… ছোটোবেলা থেকেই ভূত দেখতে পাই, কিন্তু কেউ বিশ্বাসই করেনা।” –কথাটা বলে একটু ‘হে হে’ করে হেসে নিলেন বটুকবাবু। তারপর আবার বললেন, “আপনার ক্ষেত্রে যদি এটা জন্ম থেকে না হয়, তাহলে হতে পারে- কোনো দূর্ঘটনার ফলে হয়েছে, অথবা কিছু বিশেষ জিনিস খেয়ে নেবার ফলে হয়ছে, অথবা রক্তে কোনো বিশেষ জিনিস মিশে গিয়েছে কোনোভাবে।”
ভনীতা না করে সুরেশ বটুকবাবুকে ড্রাগটির ব্যাপারে সমস্ত কিছু বলে ফেলল।
“অ্যা… তাহলে এই হচ্ছে ব্যাপার! শুনুন – মানুষ তার গোটা মস্তিষ্কের সম্পূর্ণটা কখনোই ব্যবহার করতে পারে না, তারা সর্বাধিক ১০ শতাংশ ব্যবহার করে। বাকি ৯০ শতাংশ অকেজো হয়ে পড়ে থাকে সারা জীবন। কোনোভাবে যদি মানুষ এই ৯০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারে; তাহলে মানুষের চিন্তা-ভাবনা, কাজ করার ক্ষমতা যে কোন্ পর্যায়ে যাবে – তার ধারনা কারুর নেই। তারা মহাব্রহ্মান্ডের দশটি মাত্রা আবিষ্কার করে ফেলবে হয়তো, তারা সেকেন্ডের মধ্যে গ্যালাক্সি পাড়ি দিতে পারবে হয়তো, তারা মৃত মানুষকে বাচিয়ে ফেলতে পারবে হয়তো, তারা টাইম ট্রাভেল করতে পারবে হয়তো। এটা যে কোন্ সীমায় গিয়ে পৌঁছাবে সেটা কেউ বলতে পারে না।” –বটুকবাবু বললেন।
“টেন পার্সেন্ট ব্রেইন মিথ্? সেটা একটা বেকার জিনিস। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জ্ঞানী-গুনী ব্যাক্তিরা এসে সেটাকে মিথ্যা প্রমাণ করেছেন।” –সুরেশ বলে।
“দেখুন সুরেশ বাবু… বিশ্বাস করা আর না করা, পুরোটাই আপনার ব্যাপার। আর… আমার মনে হয়ঃ আপনার যা পরিস্থিতি তাতে এটা বিশ্বাস করে নেওয়াই ভালো। তাছাড়া, আপনি একা নন যে ড্রাগ নেওয়ার পর একটি বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন, এ’রকম আরও বহু মানুষ আছেন বা ছিলেন। অ্যাপেল কম্পিউটারস্-এর স্বর্গীয় কর্ণধার স্টীভ জোবস্ নিউ ইয়র্ক টাইমস্ এর রিপোর্টার জন মার্কফ্-কে ২০০৫ সালে একটি ইন্টারভিউতে বলেন, ‘Doing LSD was one of the two or three most important things I have done in my life.’ LSD হল একটি ড্রাগ, আর তিনি এটাও বলেন – তার জীবনের উন্নতির পিছনে LSD-র একটা বড় অবদান রয়েছে। তাছাড়াও মাইক্রোসফট্ কর্পোরেশন-এর কর্ণধার বিল গেট্স্ ১৯৯৪ সালের প্লে-বয় ম্যাগাজিনের ইন্টারভিউতে স্বীকার করেন – তিনিও তার যৌবনকালে LSD নিয়েছিলেন। তাছাড়া ফ্রান্সিস ক্রিক্, জন সি. লিলি, রাল্ফ আব্রাহাম, রিচার্ড ফিন্ম্যান প্রভৃতি ব্যক্তিত্বরা LSD নিয়েছিলেন। রিচার্ড ব্রান্সন, কার্ল সেগান প্রভৃতি ব্যক্তিত্বরা গাঁজা টানেন। লেখক টিম ফেরিস্ ‘আয়াহুয়াস্কা’ নামক একটি পাতা দিয়ে নেশা করেন। এমনকি থমাস আল্ভা এডিসন ‘ভিন মারিয়ানি’ নামক এক মাদক দ্রব্যের নেশা করতেন। তবে আমি বলছিনা যে – যেকোনো মানুষ নেশা করলেই সুপারহিউম্যান হয়ে যাবে, অথবা যেকোনো নেশা যেকোনো মানুষের উপর সঠিক প্রভাব ফেলবে। আমি এটা বলছি যে – অনেক সময় এ’রকম হয়ে যায়, যখন একটি নেশার ফলে মানুষের মস্তিষ্কের বিভিন্ন দরজা খুলে যায়। তখন মানুষ তার মাথার ১০ শতাংশেরও বেশি ব্যবহার করতে পারে। আর ফলস্বরুপ অ্যাপেল কম্পিউটারস্ এর মত সংস্থা তৈরী হয়, অথবা আপনার মত টেলিকাইনেটিক্ শক্তি চলে আসে কারুর শরীরে।” –বটুকবাবু বললেন।
“হুম্ম্, বুঝলাম।” –সুরেশ গম্ভীরভাবে বলে।
“তবে আপনার ক্ষেত্রে একটা গুরুতর সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেটা হলঃ নাক, মুখ থেকে রক্ত বেরিয়ে আসা। এর মানেঃ শক্তি প্রয়োগের সময় আপনার মাথায় ছোটো ছোটো ষ্ট্রোক্ হচ্ছে। আপনার মাথা গ্রহন করতে পারছেনা এই প্রবল শক্তিকে। যত তাড়াতাড়ি পারেন এই শক্তি কারুর উপর প্রয়োগ করা বন্ধ করে দিন। এ’ভাবে চলতে থাকলে একদিন আপনার মৃত্যু অনিবার্য।” –বটুকবাবু বললেন।
“মৃত্যুতো সবার ক্ষেত্রেই অনিবার্য স্যার, কারও আগে আসে আর কারও পরে। তবে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, এইরকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং উপদেশ দেওয়ার জন্য।” –করজোড়ে নমস্কার করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সুরেশ।
“আমি আসছি মামা, পরে কথা হবে।” –সুমিতও বটুকবাবুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বন্ধুকে অনুসরন করল।
***
বটুক বাবুর কথা শোনে না সুরেশ। সেই ড্রাগ থেকে উদ্ভূত নেশা যেন তাকেই গ্রাস করে ফেলেছে। তার শিরায় শিরায়, অস্থিমজ্জায় প্রবেশ করে – আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলেছে তাকে। শক্তি-প্রয়োগ যেন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে তার। সেটা ছেড়ে সে কখনোই বেরিয়ে আসতে পারবে না। তবে, সঙ্গে মৃত্যুভয়ও খোঁচা মারতে থাকে তাকে। এখনও পর্যন্ত বিয়ে করেনি সুরেশ। দিল্লির লাড্ডু কিরকম হয় – তার স্বাদই গ্রহন করল না জীবনে। ইচ্ছে ছিলঃ মধুচন্দ্রিমার সময় প্যারিস্টা একবার ঘুরে দেখবে! তার স্বপ্ন কি অধরাই থেকে যাবে! মাঝে মধ্যে আশঙ্কিত হয়ে পড়ে সে।
***
“আরে ভাই সুরেশ… কেমন আছিস? তোর তো পাত্তাই পাওয়া যায় না আজকাল!” –রাহুল জিজ্ঞেস করল।
“না রে… আজকাল শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে।” –সুরেশ বলল।
“কি হ’ল রে?!”
“ভিতরে চল বলছি।”
রাহুল বাগানের গোলাপ গাছগুলিতে জল দিচ্ছিল। আজ রবিবার, তাই অফিস যাওয়ার ব্যাপার নেই। সুরেশকে আসতে দেখেই সে ঘরের ভিতর নিয়ে আসল। রাহুলের স্ত্রী প্রীতিও বাড়িতে উপস্থিত ছিল। টি.ভি. দেখছিল সে। সুরেশকে আসতে দেখেই টি.ভি. বন্ধ করে চলে আসল। তিনজনে একসাথে মিলে গল্প জুড়ে দিল তারা।
হঠাত্ই রাহুল কোনো কথা না বলে, সদর দরজার বাইরে বেরিয়ে গেল। দরজাতে বাইরে থেকে তালা দিয়ে, পথভ্রষ্টের মত এদিক-ওদিক চলতে চলতে এগিয়ে গেল কোনো অজানা পথের দিকে।
বাড়িতে সুরেশ ও প্রীতি মুখোমুখি বসে রয়েছে। সুরেশের লোলুপ দৃষ্টি যেন প্রীতির সর্বাঙ্গ লেহন করছে। একসময় তারা উঠে রাহুল ও প্রীতির শোবার ঘরের দিকে গেল। প্রীতি আগে আগে এবং সুরেশ পিছু পিছু চলতে থাকল। ঘরে প্রবেশ করল তারা। সুরেশ দরজাটিকে ভিতর থেকে বন্ধ করে দিল। ঠিক সেই মুহুর্তেই সুরেশের নাক থেকে টপ্ টপ্ করে দু’ফোঁটা রক্ত গড়িয়ে পড়ল মেঝেতে।