আলোর পথযাত্রী
অশোক দাশ ##
‘তমসো মা জ্যোতির্গময় অসতো মা সদ্গময়’
তমসার বুক চিরে উজ্জ্বল হিরণময় জ্যোতি
বিচ্ছুরিছে দিক- দিগন্ত ।
সূর্যকরোজ্জ্বল প্রত্যুষে বর্ণালী আলোর বর্ণচ্ছটায়
উদ্ভাসিত ধরণী অঙ্গন।
আঁধার ভেঙে আলোর পথযাত্রী ওরা
গ্লানি- অপমান -নিগ্রহে রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত
হৃদয়ে নবজাগরণ পণ।
‘ বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি’
অহিংসা পরম ধর্ম
সে তো ভারতের চিরন্তন বর্ম।
‘ সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই’
জাতপাতের প্রাচীর ভেঙে প্রেমের জয়গান
গাইলেন কবি চন্ডীদাস।
‘ মেরেছো কলসির কানা তাই বলে কি প্রেম দেব না’
প্রেমের কাঙাল শ্রীচৈতন্য ভক্তি রসের প্লাবনে
গাইলেন মানুষের উত্তরণের গান,
বিবিধের মাঝে একতা
ঘোচায় অস্পৃশ্যতার ব্যবধান।
জীবন্ত সতীর জ্বলন্ত লাশ জ্বলছে শ্মশান চিতা
বুকের মধ্যে ক্রোধাগ্নি,
একলা রাতে মশাল হাতে
বুক চিতিয়ে করছে লড়াই রামমোহন
বাঁচাতে সতীর প্রাণ।
‘ অজ্ঞানস্য জ্ঞানাঞ্জনা সলাকয়া’
কে দেয় নাড়া দুয়ারে -দুয়ারে!
অর্ধেক আকাশ তমসাচ্ছন্ন
ওদের সুপ্ত অন্তরে জ্বালাতে বিপ্লব বহ্নি
বিদ্যার আবাহনে বিদ্যাসাগর।
বাল্য বৈধব্যের যন্ত্রণার নিরসনে
প্রগতির দীপ হাত মানুষের ঈশ্বর।
‘ সত্যম্ শিবম্ সুন্দরম্’
সত্য সুন্দরের সাধনা ভারতের শাশ্বত ধ্যান,
বহমান স্রোতধারা চিরন্তন।
কালের যাত্রা পথে মহান সারথি
জ্বালাও দীপান্বিতার আলো
জ্বালালে রবি কবি বিশ্বকবি।
নতুন ভারতের পথিকৃৎ বিশ্ববরেণ্য বিবেকানন্দ
সহিষ্ণুতার দর্শনে
সারা ভুবন আপ্লুত বিস্মিত।
‘ আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো’
নেতাজির উদাত্ত আহ্বান
শত শহীদের রক্তে খন্ডিত স্বাধীনতা
হৃদয় বিদীর্ণ কাঁটাতারে।
আজও প্রতিক্ষণ রক্তক্ষরণ,
বুকে চাপা যন্ত্রণার জগদ্দল পাথর।
মহামানবের আলোকিত মুখে বেদনার আর্তি,
জমাটবাঁধা অশ্রুতে ঝরুক মুঠো মুঠো রোদ্দুর।
এই অস্থির ঘন ঘোর সংকটে
চাই শুধু আলো আর আলো
সব প্রাণে মানবতার দীপ জ্বালো।