লিচুর উপকারিতা এবং অপকারিতা

গরমকালে এক অতি পরিচিত এবং জনপ্রিয় ফল লিচু। অত্যন্ত সুস্বাদু, সুমিষ্ট এবং খাদ্যগুণে ভরপুর এই ফলটি। তাই ছোট বড় প্রায় সকলেই লিচু খেতে ভালবাসেন। এই আলোচনায় দেখে নেব লিচু খাওয়ার উপকারিতার দিকগুলি, পাশাপাশি লিচু বেশি খেলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি হতে পারে সেটাও জেনে রাখা দরকার।

লিচুর পুষ্টিগুণ

পুষ্টিগুণের দিক থেকে এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘সি। ক্যালসিয়াম দরকার হয় হাড়, দাঁত, চুল, ত্বক, নখ ভালো রাখতে। হিসাব করে দেখা গেছে, ১০০ গ্রাম লিচুতে থাকে শর্করা ১৩.৬ গ্রাম, ক্যালরি ৬১, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৭ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন ‘সি’ ৩১ মিলিগ্রাম। ১০০ গ্রাম লিচু বলতে মাঝারি আকারের প্রায় ১০টি লিচুকে বোঝায়।

উপকারিতা

১. লিচু ক্যান্সার থেকে মানবদেহকে দেয় সুরক্ষা। এটি ক্যান্সার তৈরিকারী কোষ ধ্বংস করে। এতে অবস্থিত ফ্ল্যাভনয়িডস বা ভিটামিন ‘পি’ স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

২. লিচু দেহের শক্তি বাড়ায়, কারণ এটি শরীরে ফ্লুইডের পরিমাণ বাড়ায়।

৩. লিচুতে ভিটামিন ‘সি’-এর পরিমাণ কমলালেবুর তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি।

৪. এই ফলটিতে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড রয়েছে।

৫. লিচু বিটা ক্যারোটিনসহ প্রয়োজনীয় ভিটামিন শোষণে সহায়তা করে।

৬. এটি হজমে সহায়তা করে,কারণ লিচুতে আছে কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার।

৭. লিচুতে বিটা ক্যারোটিনও পরিমাণ গাজরের তুলনায় তুলনায় বেশি।

৮. লিচুতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়, দাঁত, চুল, ত্বক, নখ ভালো রাখতে সাহায্য করে।

৯. এটি ত্বক ও চুলের পুষ্টি জোগায়।

১০. এতে রয়েছে নিয়াসিন ও রিবোফ্লাভিন নামক ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স।

১১. লিচুর ভিটামিন ‘এ’ রাতকানা কর্নিয়ার অসুখ, চোখ ওঠা, চোখের কোনা ফুলে লাল হয়ে যাওয়া দূর করে।

১২. লিচুতে থাকা পটাসিয়াম এবং খনিজের মতো উপাদান হূদরোগের ঝুঁকি কমায়। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

১৩.এটি মস্তিষ্ক বিকাশেও সহায়তা করে। এছাড়া আমাদের হার্ট ভাল রাখে, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

মাত্রাতিরিক্ত লিচু খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

১. প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ ক্যালোরি রয়েছে। পরিমাণে বেশি লিচু খেলে তাই যে পরিমাণ ক্যালোরি জমা হয় তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে তাতে আমাদের ওজন বেশ ভালোভাবেই বৃদ্ধি পায়।

২. মাত্রাতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে। লক্ষণ হিসাবে শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুক ধড়ফড় করা, মাতাহ ঘুরানো, বমি ভাব ইত্যাদি হতে পারে।

৩. লিচু আমাদের রক্তের গ্লুকোজ কমাতে সহায়তা করে। তাই পরিমাণে বেশি খেয়ে ফেললে তা হাইপোগ্লাইসেমিয়া করতে পারে বিশেষত ইফতারের সময় এমনটি করলে। যাদের ডায়াবেটিস আছে, যারা ওষুধের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করেন, তারা লিচু গ্রহণে সাবধান থাকা উচিত। কারণ ওষুধ এমনিতেই রক্তে গ্লুকোজ কমিয়ে রাখে সঙ্গে লিচুও যদি একই কাজ করে তাহলে যেকোনো বিপত্তি ঘটতে পারে। ছোট বাচ্চারা লিচু গ্রহণ করলে কোনো অবস্থাতেই খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়। পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে এতে।

৪. জানেন কি, লিচু একটি গরম ফল। আর গরম ফল হওয়াতে বেশি পরিমাণে লিচু খেলে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার ব্যালেন্স নষ্ট হয়। ফলে গলাব্যথা হওয়া, মুখের ভেতরে ক্ষত হওয়া এমন কি নাক দিয়ে রক্তপাতও হতে পারে। বিশেষ করে আমাদের দেশের বর্তমান আবহাওয়ার কারণে এমনটা হওয়ার ভয় বেশি।

৫. একটানা বেশ কয়েকদিন পরিমাণের বেশি লিচু খেলে আমাদের ইমিউনিটি বেড়ে যায়। এর ফলে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যেতে পারে। যেমন- রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, মাল্টিপল স্ক্লেরসিস, লুপাস ইত্যাদি রোগ থাকলে তা বেড়ে যেতে পারে।

৬. সার্জারির রোগীদের অতিরিক্ত লিচু খাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই রক্তচাপ এবং রক্তের গ্লুকোজের ওপর সরাসরি প্রভাব থাকাতে যাদের সার্জারির প্রয়োজন তারা সার্জারির পূর্বের দুই সপ্তাহ এবং পরের দুই সপ্তাহ লিচু খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

৭. অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি- লিচুতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, জরুরি ফ্যাটি এসিড নেই। ফলে বেশি পরিমাণে লিচু খেলে তা শরীরের স্বাভাবিক ব্যালেন্স নষ্ট করে। তাই আমাদের সবার উচিত পরিমিতভাবেই লিচু খাওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 3 =