ডেড সী
ডঃ সুজাতা ঘোষ
আমি সবুজ মায়াবী তরল
ভেসে চলেছি যুগ যুগান্ত ধরে।
আমার এক পাশে জর্ডন নদী আর
অন্য পাশে ইজরাইল।
না আছে গাছ, না আছে মাছ
লোকে বলে, ও ডাইনী, যাস না ওর কাছে।
নিন্দুকেরা কি একবারও ভাবে,
আমি ভাসিয়ে রাখি সবাইকে
অন্য সমুদ্রের মত কেড়ে নেই না জীবন।
বাচ্চারা আমার সবুজ রঙে
ভেসে ভেসে – শুয়ে শুয়ে, কত খেলাই না করে।
বড়রাও তো বালি ছেড়ে চলে আসে
আমার বুকের উপর, বুক মেলে নিঃশ্বাস নিতে।
একবার তাকিয়ে দেখো আমায়,
ঠিক ভালোবাসতে পাড়বে প্রান ভরে।
আমার সুন্দর সবুজ, মোটেই নয় সে বিষ।
একটু বেশী নোনা, তাই তো ভাসো তোমরা সবাই।
শুধু কি ভাসো? কত নাম না জানা খেলাই না খেল!
প্রথম প্রথম তো আমি নিজেই ভয় পেতাম,
ভাবতাম এ আবার কি?
মানুষগুলো কি করে আমার শরীরে মিশে!
এখন শুধু অনুভব করি।
আমিও বুঝে গেছি, লুকোচুরি তোমাদের খুব পছন্দের খেলা।
একটা কথা বলে রাখি চুপিচুপি
আমারও কিন্তু নেশা লাগে, তোমাদের গায়ের গন্ধে।
আমিও ভীষণ উত্তেজিত হয়ে উঠি তোমাদের নরম ছোঁয়ায়।
যেদিন পারবো না নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে;
আকাশ ছোঁয়া উন্মত্ত ঢেউ শক্ত পেশী ছড়িয়ে দেবো,
থর থর করে কেঁপে উঠব আমি লালসায়।
কামড়ে যখন লাল হবে আমার বিস্তৃত ঠোঁট,
ভয় পেও না আমায়।
আমিও যে বড় ভালোবেসে ফেলেছি মানুষের নোনা গন্ধ!
তোমরা যখন আমার শরীর ভেদ করে
পৌঁছনোর চেষ্টা করো আরও গভীরে,
আমার শরীরের প্রতিটি স্নায়ু
কেঁপে ওঠে স্নাৎ স্নাৎ করে।
একে অপরের অনুভূতিতে যখন ডুবে মর থরে থরে
ঠিক তখনই আমি বিস্তৃত করি আমার
বুক, নাভি, শিরদাঁড়া, কোমর, উরু, পায়ের নখ আর বলিষ্ঠ দুটি বাহু।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ, তোমরা বুঝতে পার না, চাও না,
শুধু আমিই ছটফট করি;
আমার নেশা আর অনুভূতির উন্মাদনাকে শান্ত গতিপথে আনতে।
আরও অনেক গভীরে লুকিয়ে আছে আমার রুপ
যাকে তোমরা বল ভয়ঙ্কর, কেউ আসে না এখানে।
চাইলে পাল্টাতে পার অভিমত, বাড়িয়ে দিলাম আমার হাত।
ছুঁয়ে দেখতে পার আমায়।
গভীরে, আরও গভীরে, যেখানে ঘুমন্ত আমি
শুধু অনুভব করি নতুন নতুন তোমাদের।
আমি ভয়ঙ্কর ডেড সী।।