মরনোত্তর চক্ষু এবং দেহদান সহায়তা কেন্দ্রের উদ্বোধন মধুসূদনকাটিতে
মরনোত্তর দেহ এবং চক্ষুদানের গুরুত্ব অপরিসীম। উত্তর ২৪ পরগণার গোবরডাঙা মছলন্দপুর অঞ্চলে ইতিমধ্যেই মরনোত্তর চক্ষু এবং দেহদান করেছেন অনেকেই, হয়েছে অঙ্গদানও। এবার এই বিষয়ে এক অসাধারণ কাজ করল গোবরডাঙার পাশের গ্রাম মধুসূদনকাটি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি এবং মছলন্দপুর বিজ্ঞান চেতনা মঞ্চ। মধুসূদনকাটী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির পৃষ্ঠপোষকতায়, মধুসূদনকাটি কৃষক কল্যান সমিতি ও মছলন্দপুর বিজ্ঞান চেতনা মঞ্চের যৌথ উদ্যোগে শ্রীমতি কিরণ বালা স্মৃতি মরণোত্তর দেহ ও চক্ষু দান অঙ্গীকার সহায়তা কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন হ’ল মধুসূদনকাটী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির শ্রী কালীপদ সরকার সভাপতিত্বে সমিতি প্রাঙ্গনে।
এদিনের অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সংগীত ‘অন্ধজনে দেহ আলো… ‘ পরিবেশন করেন কল্পনা পাল। এই কেন্দ্র স্থাপনের প্রেক্ষিত ও গোবরডাঙা মছলন্দপুর অঞ্চলে এই আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস উল্লেখ করে স্বাগত ভাষন দেন ডা তাপস সরকার। এরপর এই কেন্দ্রের বিশ্বনাথ রক্ষিত স্মৃতি কক্ষের দারোদ্ঘাটন করেন ‘গণদর্পন’ কলকাতার সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত সাহা রায়। শুধুমাত্র অঙ্গীকার নয় ১৯৯৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট একুশটি মরণোত্তর দেহ ও আশি জোড়া চোখ অন্ধত্ব নিবারন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যানে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ এবং চক্ষু ব্যাঙ্কে দান করা হয়। আগামী দিনে এই আন্দোলনের গতি প্রকৃতি ও জনগনের ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য রাখেন সুদীপ্ত সাহা রায়। এরপর বক্তব্য রাখেন মছলন্দপুর বিজ্ঞান চেতনা মঞ্চের বহুমুখী কর্মকাণ্ডের বিবরন সহ, সম্পাদক তপন বিশ্বাস । এরপর বক্তব্য রাখেন এই আন্দোলনের দীর্ঘদিনের নিরলস কর্মী , বর্ষীয়ান সমাজ কর্মী, বিজ্ঞান লেখক, মধ্যমগ্রাম বিজ্ঞান চেতনা ফোরামের সুরেশ কুণ্ডু। সবশেষে এই আন্দোলনের সংকট, বাস্তব সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন তহমীনা খাতুন স্মৃতি রক্ষা কমিটির পক্ষে সহযোদ্ধা সুকুমার মিত্র। আন্দোলনের শ্রীবৃদ্ধি কামনা করে বক্তব্য রাখেন গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ বাপী দাস। জনগনকে আরও বেশী যুক্তি বাদী ও বিজ্ঞান মনস্ক হওয়ার আহবান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রীতিলতা শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক আশীষ চক্রবর্তী । এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত স্বাস্থ্য শিবিরে বারাসাত ‘গণ ল্যাবরেটরী’ র সহায়তায় বিনা মূল্যে/ স্বল্প মূল্যে তিনশ জনেরও বেশী মানুষের চোখ,সাধারণ রোগ, স্ত্রী রোগ ইত্যাদি বিষয়ে চিকিৎসা, পরামর্শ ও ইসিজি সহ নানাবিধ রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। সব শেষে এই মানবিক আন্দোলনে সকল স্তরের মানুষের সতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পশ্চিমবঙ্গ রক্তদাতা সমিতি র সম্পাদক, লেখক, সাংবাদিক পবিত্র কুমার মুখোপাধ্যায়।
পাশাপাশি এদিন এই এলাকার মরনোত্তর দেহ এবং চক্ষুদানকারীর পরিবারগুলির সদস্যদের তারা সম্মানিত করেন। সর্ব মোট এগারো জন মরণোত্তর দেহ দাতা /দাত্রী ও পঁচিশ জন মরণোত্তর চক্ষু দাতা /দাত্রী পরিবারকে স্মারক দিয়ে অভিনন্দিত করা হয়। এই প্রয়াস প্রশংসাযোগ্য, এতে পরবর্তিতেও অন্যান্য মানুষ তাদের নিজেদের এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের দেহ এবং চক্ষু দানে উৎসাহিত হবেন আশা করা যায়। আসুন আমরা সকলেই পুরানো সব সংস্কার ছেড়ে মৃত্যুর পরে আমাদের মূল্যবান দেহ ও অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দান করে চিকিৎসা বিজ্ঞান ও মানব কল্যানে ব্রতী হই।