ভারতের অদ্ভুত গ্রাম
ভারত এর সভ্যতা, সংষ্কৃতি, শিক্ষা, ঐতিহ্য, ইতিহাস, পরম্পরা সবার চেয়ে আলাদা। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতার একটি হল সিন্ধু সভ্যতা। আর তাই সারা পৃথিবীর পর্যটকদের কাছে ভারত সবসময়ই আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্য স্থান। তবে শুধু সংষ্কৃতি, ঐতিহ্য নয়, এমন কিছু রহস্য বা অদ্ভুত বিষয় ভারতের আনাচা-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে যা পৃথিবীর নানা অংশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের বিষয় হয়ে রয়েছে। ভারতবাসী হিসাবে আমরা অনেকেই সেগুলি সম্পর্কে জ্ঞাত নই। এমন কিছু জিনিস যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞানের কাছেও মেলেনি এখনও। এহেন কিছু বিচিত্র বা অবিশ্বাস্য জায়গার কথা দেওয়া হল অবেক্ষণের পাতায়।
সাপেদের গ্রাম, মহারাষ্ট্র
সাপ এ গ্রামে অতিথি, আর অতিথি নারায়ণ। মহারাষ্ট্রের শোলাপুর জেলার শেতপাল গ্রামকে সাপের আঁতুরঘর বলা হয়। এখানে প্রতিটি বাড়িতে কেউটে, শঙ্খচূড় সহ বিভিন্ন সাপের বিশ্রামের জন্য আলাদা জায়গা বা দেবস্থান রয়েছে। গোটা গ্রামেই সাপেরা ঘুরে বেড়ায় নির্বিঘ্নে। ঘরে, দোকানে বা স্কুলেও সাপেদের অবাধ যাতায়াত। কিন্তু সাপকে দেখে একেবারেই উত্তেজিত বা ভিত হননা এখানকার বাসিন্দারা। তবে এরা কারও ক্ষতি করে না। এমনকি এতদিনে এই গ্রামে কেউকে সাপে কাটার খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি গ্রামের কচিকাঁচারা খেলাও করে সাপেদের সঙ্গে।
দাবা গ্রাম, কেরল
ত্রিশুরের আম্বালুর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মারোত্থিচাল গ্রামের জনসংখ্যা ৯ হাজার। এর মধ্যে প্রায় সকলেই দাবা খেলেন। শোনা যায়, ৬০-৭০ এর দশকে এই গ্রামের মানুষ মদের নেশায় আসক্ত ছিলেন। তেমনই একজন উন্নিকৃষ্ণণ। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৬ বছর। সেই সময়ে তিনি গ্রামে দাবা খেলা আমদানি করেন। মার্কিন গ্র্যান্ডমাস্টার ববি ফিশারের খেলা তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। তা দেখে তিনি গ্রামবাসীদের তাতে উদ্বুদ্ধ করেন। দাবা খেলা শেখানো শুরু করেন। পরে ধীরে ধীরে গ্রামের সকলে মদ ছেড়ে দাবায় আসক্ত হয়ে পড়ে। উন্নিকৃষ্ণণ এখন একটি রেস্টুর্যাসন্ট চালান, কিন্তু তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করে গোটা গ্রামই এখন বদলে গিয়েছে।
দরজা বিহীন গ্রাম, মহারাষ্ট্র
শনি-শিঙনাপুর, মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলার একটি জায়গা। এই জায়গাটি শনি মন্দিরের জন্য বিখ্যাত। তবে তার চেয়েও মজার তথ্য হল, এই গ্রামের কোনও বাড়িতে দরজার পাল্লা নেই। এমনকী এলাকার দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, সরকারি বিল্ডিংয়েও কোনও দরজাতে পাল্লা নেই। অথচ এখানে কোনও অপরাধ হয় না। তা দেখে এলাকার ইউকো ব্যাঙ্কের শাখায়ও কখনও তালা ঝোলানো হয় না। সারা দেশে এমন নজির আর কোথাও নেই।
যমজের গ্রাম, কেরল
কেরলের মালাপ্পুরম জেলার কোদিনহি গ্রাম এক অদ্ভুত কারনে পরিচিত। যা এই এলাকাকে অন্যান্য জায়গা থেকে আলাদা করেছে। এখানে এলেই আপনি দেখতে পাবেন প্রায় একইরকম দেখতে দুটি করে মানুষ। এই গ্রামে ২২০ জোড়া যমজ সন্তান রয়েছে। এবং ২ জোড়া ত্রিপলেট বা একই দেখতে তিনটি করে সন্তান রয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের, এখানকার মেয়েরা অন্য জায়গায় গিয়ে বাস করলেও তারা যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এই নিয়ে বহুদিন ধরেই গবেষণা চলছে, কিন্তু নির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি বৈজ্ঞানিকরা।
সুরেলা পরিচয়ের গ্রাম, মেঘালয়
সাধারণত কোন মানুষকে নাম ধরেই ডাকা হয়। আর নামের মাধ্যমেই ফুটে ওঠে তার পরিচয়। কিন্তু এমন একটি গ্রাম আছে যেখানে কারও নাম নেই। সুরেই পরিচয় ফুটে ওঠে ওই গ্রামের মানুষের। মেঘালয়ের ওই গ্রামের নাম কংথং। মূলত পাখির ডাকের মতো করেই এই সুরের সৃষ্টি হয় কংথং গ্রামে। এই বিশেষ কারণেই এই গ্রামের নামকরণ হয়েছে হুইসলিং ভিলেজ। কংথং-এ প্রত্যেকটি মানুষের যেমন নিজের নাম রয়েছে তেমনই রয়েছে এই অদ্ভুত সুর। যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘জিঙ্গরওয়াই লওবেই’। মাতৃতান্ত্রিক এ গ্রামের মানুষ পড়ালেখা জানে না এমন নয়। সবাই স্কুলেও যায়। পড়াশুনা করে স্নাতকপাশ করেছেন কেউ কেউ। কিন্তু এখনো সেই ধারা অব্যাহত আছে গ্রামে। শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পরে, মা নিজেই তাঁর পছন্দের সুর বাজান। কোনও নামকরণ নয় পরবর্তীতে এই সুরই হয় শিশুর পরিচয়। কখনও আবার আত্মীয়-প্রতিবেশীরাও সুর শোনান সদ্যজাত মাকে। তাঁর যে সুর পছন্দ হবে সেটাই হবে তাঁর সন্তানের পরিচিতি।