অপালার সুখের দিন

মন্দিরা মিশ্র (বিরাটী, উত্তর ২৪ পরগণা)

আজ রবিবার | ঘড়িতে এখন সাতটা পঁয়তাল্লিশ |
অপালা গুনগুন করে সুর ভাঁজতে ভাঁজতে ‚ চায়ের ট্রে নিয়ে বারান্দায় এসে ‚ টেবলে রাখতে-রাখতে বললো ‚
আঃ, এই রবিবারটা একটু শান্তি করে চা খাই | অন্যদিনগুলোতে…..এক হাতে খুন্তি ‚ অন্য হাতে চায়ের কাপ | কখনোবা চা-টা জুড়িয়ে জল হয়ে যায় | তাই ঢকঢক করে সরবতের মতই গিলে নিই |
রমেনবাবু ততক্ষণে অলরেডি খবরের কাগজে মুখ ঢেকে‚ খবর পড়াতেই মগ্ন | পাশে পিকলুও একটা মেয়েদের ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাচ্ছে ……
অপালা চা এগিয়ে দিতেই‚ যে যার কাগজ‚ পত্রিকা সব গুটিয়ে রেখে‚ চায়ের কাপ টেনে নিল |
রমেনবাবু চায়ে একটু চুমুক দিয়েই বললেন‚ অপালা‚ তুমি ভেবোনা | আমি আমাদের অফিসের প্রদ্যুম্নকে বলেছি‚ একটা রান্নার লোকের কথা | দুজনের অফিসের ভাত‚ টিফিন‚ সব একা হাতে সামলাতে‚ তোমার খুবই কষ্ট হয়‚ সেটা আমিও বুঝি |
তাই‚ তুমিও তাহলে আমার কথা একটু…..
কলিংবেলটা বেজে উঠতেই‚ অপালা কথার মাঝেই‚ এতো সকালে আবার কে এল‚ বলে দরজার ম্যাজিক আইতে চোখ রেখে বলল‚ একটা অল্পবয়সী মেয়ে..
রমেনবাবু বললেন‚ আরে খোলই না | একে তো সকালবেলা‚ তারপর আমরা তো আছি…
অপালা দরজা খুলতেই মেয়েটি একটা কাগজের টুকরো‚ অপালার হাতে ধরিয়ে দিয়েই জিজ্ঞেস করল‚ আচ্ছা এটা কি রমেনবাবুর বারি ?
হ্যাঁ ‚ কেন বলতো বাছা‚ অপালার উত্তর |
আঁগ্যে আমারে পোদ্যুম্নবাবু পেটিয়েছেন | ওনার বারিতি আমার মা বহুদিন ধরেই আন্নার কাজ করে | তা আপনাদের নাকি আন্নার নোক নাগবে ‚ তাই…..
এবার রমেনবাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে এগিয়ে এসে বললেন‚ এস গো মেয়ে | তোমাকে প্রদ্যুম্ন পাঠিয়েছে ?
আঁগ্যে হ্যাঁ |
তা তোমার নামটি কি বাছা ?
আমার নাম সুচিত্তারা পাত্তর | ঐ উল্টিডিঙির বসতিতি থাকি ।
তা তুমি রান্নাবান্না সব করতে পারবে তো ? আর তোমাকে কতই বা দিতে হবে ?
ঐতো কাকু, পোদ্যুম্নবাবু মা-রে ঝা দেয়‚ তুমিও তাই দেবা | একবেলার আন্না তো ?
কই গো অপালা‚ এবার তুমি কথা বলে ঠিক করে নাও‚ বলে স্ত্রীয়ের হাতে সমর্পণ করে নিশ্চিন্ত হলেন রমেন |
এদিকে কথোপকথনের ফাঁকে‚ পিকলু চা নিয়ে ঘরে কেটে পড়েছে |
অপালা এবার সুচিত্রাকে নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলেন |
এই আমার রান্নাঘর‚ এই তাকেই মশলাপাতি সব রাখা থাকে | ফ্রিজে আনাজপাতি সবই পাবে |
চালটা আমি আন্দাজ করে ভিজিয়ে রাখব‚ সবজিও কিছুটা কুটেকেটে দেব |
সকালের টিফিন‚ তোমার কাকু নিয়ে যাবে আর আমি-তুমি খাব |
পিকলু টিফিন নেয়না‚ ও অফিসে ক্যান্টিনে খায় |
তোমার কাকু বেরোয় বেলা ন-টায় | তার মধ্যে একটু ডাল‚ ভাত আর মাছের ঝোলটা করে ফেলতে হবে |
তারপর টিফিনের একটা তরকারি আর কখানা রুটি | দেখ পারবে কিনা |
খুব পারবো কাকী | আমি তো আত চারটেয় উঠে‚ সোয়ামীর আর সাউড়ীর জন্যি ভাত-তরকারি কোরে‚ ছেলেডার খাবার জোগার কোরে এখে তাই বেরই |
ও তোমাদের বলিনিকো‚ আমার সাউরীও থাকে মোদের সুঙ্গি | উনিই তো আমার ছেলেডারে দেখে |
তোমাদের তো নিরঝন্ঝাটের আন্না‚ ও আমি ঠিক সময়েই এডি করে দেবানি‚ তোমারে এট্টুও ভাবতি হবেনা কো |
তাহলে কাল সকাল থেকেই এস |
সকাল সাতটার মধ্যে চলে আসবে কিন্তু |
তুমি কিছু ভেবোনি কো কাকী‚ আমি সাতটার দিকিই আসপো |

সুচিত্রা বেরিয়ে যেতে‚ অপালার মুখে হাসি ফুটলো‚ যাক তুমি এতোদিনে একটা কাজের কাজ করেছ‚ বারান্দায় কাগজ নিয়ে বসা রমেনবাবুর উদ্দেশ্যে বললো |
রমেন‚ কাগজ থেকে মুখ না সরিয়েই বললো‚ কেন ? এতোদিন কি আমি অকাজের কাজ করেছি নাকি ?
না না‚ তা কেন ? তুমি সত্যিই আমার যথেষ্ট খেয়াল রাখো | সেইজন্যেই তো আমি না বলতেও‚ তুমি রান্নার লোক খোঁজ করেছ |
হুঁ‚ তবে – বলেই একটু অপালার গালটা টিপে দিলেন |
এই কি হচ্ছে কি ? পিকলু কখন এসে পড়বে ………..তোমার স্বভাব আর গেলনা |
–কেন‚ আমি কি অন্যায় কিছু করেছি নাকি ? নিজের বৌকে একটু আদর করবো না ?
–আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে | এবার উঠে বাজারটা করে এস দেখি | আমিও এবার চান-টান সেরে‚ রান্নাঘরে ঢুকব |

…………….

সকাল সাতটাতেই ডোরবেল বাজতে‚ অপালা হাসিমুখে দরজা খুলে‚ সুচিত্রাকে ভিতরে ঢুকিয়ে‚ দরজাটা বন্ধ করলো |
সুচিত্রা ভিতরে ঢুকেই সোজা টয়লেটে গিয়ে‚ হাত-পা ভালোকরে ধুয়ে‚ একেবারে রান্নাঘরে |
অপালা, তখন সবে আনাজপাতি বের করছিল |
এবার চাল‚ ডাল‚সব কোথায় আছে‚ কতটা নেবে‚ সুচিত্রাকে বুঝিয়ে দিল |
সুচিত্রা‚ তুমি চা-টা আগে বসিয়ে দাও| তোমার কাকু আবার বাজার যাবে তো | ওনার টাটকা মাছ না-হলে মন ওঠেনা |
ও কাকী‚ এইতো আমি চা বসিয়ি দিছি |
ও‚ তাহলে‚ তোমাকে চায়ের কৌটো‚ চিনির শিশি….
কিছু তোমারে দেকাতি নাগবেনা | আমি এসেই সব দেকে নিছি |
বাঃ, লক্ষ্মী মেয়ে। আমি তাহলে, আনাজগুলো কুটে দিই………
ওঃ কাকী ‚ তোমারে কিচ্ছু করতি হবেনা কো | তুমি সুদু আমারে বলে দে-জাও‚ কি কি আন্না হবে | আমি সব কেটেকুটে বেওস্তা করে নেবানি |
না না‚ তাও প্রথমদিনটা আমি একটু দেখিয়ে শুনিয়ে …..
তুমি জাওদিনি কাকী | বারান্দায় গে‚ চার টেবিলি বসগে | আমি এখুনি তোমাদের সগ্গুলির চা নে জাচ্ছি |
বাধ্য হয়ে‚ কি কি রান্না হবে বলে দিয়ে‚ বারান্দায় ওনার পাশটিতে গিয়ে বসতেই‚ কাগজ থেকে মুখ বের করে‚ কি ব্যাপার, চা কই ? তুমি এসে বসে পড়লে যে, স্ত্রীকে বললেন রমেনবাবু |
আরে দেখনা‚ সুচিত্রা‚ কিছুই করতে দেবে না | সে সব একা হাতেই সামলাবে‚ আমাকে তো একরকম রান্নাঘর থেকে বের করেই দিল …….
বলতে বলতেই‚ সুচিত্রা চায়ের ট্রেটা টেবলে নামিয়ে দিয়ে বললো‚ নাও‚ এবার এট্টু শান্তি করে চা-টা খাও দিনি | দাদাতো বোধায় পরে ওটপে‚ সে আমি পরে দাদার জন্যি আবার চা করে দেবানি | তোমার তা নে ভাবতি হবেনাকো‚ বলেই হনহন করে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল |
এই সুচিত্রা‚ তুমি চা-বিস্কুট নিয়েছ ?
হ্যাঁগো নিছি‚ তোমরা চা খাও দিনি …..
এবার খুশি মনে অপালা চায়ের কাপের সঙ্গে বিস্কুটটাও এগিয়ে দিলেন, রমেনবাবুর দিকে ।
–হুঁ‚ এবার তাহলে তোমার সুখের দিন শুরু হল‚ বললেন রমেনবাবু |
তা-যা বলেছ | তবে অভ্যেস তো নেই‚ কেবলই মনে হচ্ছে‚ অফিসের ভাতের তাড়া আছে | কতক্ষণে রান্না শেষ করে‚ তোমার ভাত বাড়ব‚ টিফিন গোছাবো …….
রমেনবাবু চা-খেতেখেতে বললেন‚ ও দুদিনেই অভ্যেস হয়ে যাবে | এবার নিজের শরীরের একটু যত্ন-আত্তি কর | অকালেই বুড়িয়ে যেওনা …
ধ্যাৎ‚ তুমি না……
এবার মাছের ব্যাগটা এনে কত্তার হাতে ধরিয়ে দিল‚ অপালা |
রমেনবাবুও রেডি হয়েই ছিলেন‚ ব্যাগটা নিয়েই বেরিয়ে গেলেন |
–আটটা বাজে‚ যাই এবার পিকলুর চা-টা করতে বলি‚ বলে রান্নাঘরের দিকে এগোলো অপালা |
ওমা তোমার চা করা হয়ে গেছে ?
চায়ের কাপটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো ‚ এই নাও কাকী ‚ দাদারে দে এস গে | আর ইদিকি তো আমার আন্নাও হয়ে এয়েছে | এবারে ভাতডা বসাপো আর কাকু মাছডা আনলি ‚ চট
করে ঝোলডা করে………..
অপালা‚ পিকলুর ঘরে চা নিয়ে যেতে যেতে ভাবলো‚ একেবারে পাকা-হাতের কাজ | এর মধ্যে‚ ডাল‚ তরকারি রুটি সব রেডি | শুধু ভাত আর মাছের ঝোলডাই বাকি …
এই পিকলু‚ পিকলু‚ ওঠ বাবা‚ আটটা বাজে |
পিকলু একটু আড়ামোড়া ভেঙে‚ উঠে বসে চায়ে একটু চুমুক দিয়েই বলল‚ বাঃ‚ আজকের চা-টা বেশ ভালই বনিয়েছ তো …..
-ওরে আমি না ‚ ঐ সুচিত্রাই বানিয়েছে |ওর হাতের রান্নাবান্না দেখলাম বেশ পরিপাটি | খেতে কেমন হবে জানিনা | একদিন খেলেই বোঝা যাবে….
-আমি এগোই‚ দেখি তোর বাবা‚ ফিরল কিনা ?
পিকলুর ঘর থেকে বেরোতে, ডোরবেল শুনে খুলে দাঁড়াতেই….সুচিত্রা এসে খপ করে‚ ওনার হাত থেকে মাছের ব্যাগটা নিয়েই রান্নাঘরে |
-হাঁ করে ওনার মুখের দিকে তাকাতেই‚ উনি বললেন‚ কি দেখছ অমন করে ? কেমন জোগাড় করেছি বল ..
-হ্যাঁগো‚ তাইতো ভাবছি‚ এতো ভালো মেয়েটা‚ আমাদের কপালে টিকলে হয় |
-আরে টিকবে টিকবে | ওর সঙ্গে মেলা কথা বল না | ওকে ওর মত কাজ করতে দাও | দেখবে‚ সব ঠিক থাকবে |
জামা ছেড়ে রেষ্ট নিয়ে‚ বাথরুমে ঢুকতেই‚ আমি রান্নাঘরের দিকে এগোলাম …..
বাবা‚ এদিকে উনুনে মাছের ঝোল ফুটছে‚ আর সুচিত্রা পরিপাটি করে ওনার ভাত বেড়ে‚ গুছিয়ে দিচ্ছে ….
–আমাকে দেখেই বলল‚ এই যে কাকী‚ ঝোলডা নামলিই কাকুরে ভাত দে দোবো |
-উনি বাথরুম থেকে বেরোতেই ‚ ভাতের থালাটা টেবলে ধরে দিলাম |
-উনি জামা-প্যান্ট পরে একেবারে তৈরী হয়েই‚ ডাইনিংএ ঢুকতে-ঢুকতে বললেন‚ বাঃ‚ মাছের ঝোলের বেড়ে গন্ধ বেরিয়েছে তো‚ বলে খেতে বসে গেলেন |
খাওয়ার শেষে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বললেন‚ অফিস যাওয়ার সময় আজই প্রথম একটু তৃপ্তি করে খেলাম |
অন্যদিন‚ তোমার গলদঘর্ম অবস্থা আর স্বভাবতই মেজাজও একটু চড়া দেখে‚ কোনরমে গলাধঃকরণ করে উঠি |

দিন-তিনেক পরে‚ অফিসে প্রদ্যুম্নের মুখোমুখি রমেনবাবু………
–এই প্রদ্যুম্ন‚ তোমাকে কদিন ধরেই খুঁজছি‚ দেখাই নেই……..
–আমি তো দুদিন আসিনি‚ একটু শ্বশুরবাড়ি থেকে ঘুরে এলাম | তারপর বল‚ তোমার রান্নার লোক কেমন সার্ভিস দিচ্ছে ?
-আরে‚ সেই কথা বলব বলেই তো তোমায় খুঁজছি ……
ওঃ খাসা মেয়েটি | যেমন রান্নার হাত‚ তেমনি পরিস্কার পরিপাটি কাজ |
অপালা শুধু প্রথমদিন বলে দিয়েছে‚ কোথায় কি থাকে‚ ব্যাস……অপালাকে আর ও-মুখোও যেতে দেয়না | একা হাতে কুটে-বেটে একেবারে সময়মত সব রেডি |
–হাঃ হাঃ হাঃ….তাহলে বল‚ এতোদিনে গৃহে শান্তি ফিরেছে ?
–তা যা বলেছ ভায়া‚ অপালাও হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে‚ আমিও গিন্নীর হাসিমুখ দেখে খুব খুশী |
-আচ্ছা রমেন‚ এখন চলি ভাই | দুদিন আসিনি‚ প্রচুর পেন্ডিং কাজ আছে | ওর মা-ও খুবই ভালো লোক | আমার বাড়িতেই তো কতদিন হয়ে গেল |
-আচ্ছা প্রদ্যুম্ন‚ আমিও এবার আসি…..
এখন ছুটির পরে বাড়ি ফিরেও কি শান্তি | অপালা নিজে বেশ পরিপাটি হয়ে চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে টেবলে অপেক্ষা করে | ফ্রেশ হয়ে‚ দুজনে টুকটাক প্রেমালাপের সঙ্গে চা পান পর্ব চলে |
এভাবে দেখতে-দেখতে ছমাস কেটে গেল……..

রমেনবাবু এবার গিন্নীকে সঙ্গে নিয়ে মনের সুখে পুজোর বাজার করলেন |
অপালার পছন্দ অনুযায়ী‚ সুচিত্রার জন্যে‚ একটু দামী শাড়ি কেনা হল |
সত্যিই তো‚ অমন গুণের মেয়ে | আর এই ছমাসের মধ্যে‚ একটা দিনও ছুটি করেনি |
পুজোর দিন-সাতেক আগেই‚ অপালা‚ শাড়িটা আরও পাঁচশো টাকা দিল সুচিত্রাকে |
সুচিত্রাতো বেজায় খুশি | শাড়িটা তার খুব পছন্দ হয়েছে |
ঢিপ করে একটা প্রণাম করলো অপালাকে‚ সেইসঙ্গে বলল ‚ ও কাকী ‚ আমারে কিন্তুক পুজোর চারটে দিন ছুটি দিতি হবে | আমরা সে সময় দেসের বারিতি জাব | আগেরতে বলে আকলাম তোমারে ………
-আচ্ছা আচ্ছা‚ সে পুজোর সময় ছুটি নিস | আমাদের অসুবিধে হবেনা | ঐসময় আমার মেয়েও আসে কদিনের জন্যে | প্রায়ই আমরা বাইরে খাওয়া-দাওয়া করি তখন | সে-কটা দিন চালিয়ে নেব আমরা | কি খুশি তো ?
হ্যাঁ গো কাকী‚ তুমি খুব ভালো‚ বলে হাসতে-হাসতে‚ শাড়ির প্যাকেট আর টাকাটা নিয়ে বেরিয়ে গেল |
তারপর বেশ স্বাভাবিক ভাবেই সব চলছে |
পঞ্চমীর দিন আমাদের মেয়ে সুকন্যা ওরফে মিমি এসে গেল | সঙ্গে জামাই আরণ্যক আর ওদের একমাত্র মেয়ে তিতাস ওরফে মিঠাই |
ওরাও দুদিন সুচিত্রার রান্না খেয়ে‚ খুব খুশী | ওরা আবার একাদশীর দিনই ফিরে যাবে বেঙ্গালুরুতে |
–সপ্তমী থেকে তো সুচিত্রার ছুটি | অপালা সকালেই গিয়ে ঢুকলো রান্নাঘরে |
একে পুজো‚ তায় ঘরে জামাই‚ বেশ জমিয়ে জলখাবারের আয়োজন হল |
তারপর দুপুরের রান্নার সময়‚ মিমি গিয়ে মায়ের সঙ্গে হাত লাগালো | আর রাতে তো বাইরে খাওয়া …..
পুজো তো দেখতে-দেখতে কেটে গেল |
একাদশীতে‚ মর্ণিং-ফ্লাইটেই যাওয়া |
আরণ্যকের কোম্পানী মাইনে-পত্র ভালোই দেয়। আর ওরা, বছরে এই একবারই আসে। তাই ফ্লাইটেই যাতায়াত করে। সময়ও বাঁচে।
আজই তো বেঙ্গালুরু পৌঁছে, ওদের ছেড়ে দিয়ে, অফিস যাবে ।
সাতটা নাগাদ চা খেয়ে‚ ওরা বেরিয়ে গেল | ওদের ফ্লাইট ন-টায় |
ওদের ট্যাক্সী বেরিয়ে যেতেই‚ অপালা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল ….
সাড়ে-সাতটা প্রায় বাজে‚ এখনও সুচিত্রার পাত্তা নেই…এতো বেলাতো ও কখনো করেনা …
বাজার নিয়ে এসে রমেনবাবু রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখেন‚ ব্যাজার মুখে অপালা রান্নার আয়োজনে ব্যস্ত | বাজারের ব্যাগটা পিছনে রাখতেই …
–আচ্ছা কি হল বল তো ? চারদিন ছুটি নিয়ে গেল‚ অথচ আজও….
-দেখ হয়তো শরীর খারাপও হতে পারে‚ সান্ত্বনার ছলে বললেন রমেনবাবু |
যাকগে আজকেটা তুমি ধীরে-সুস্থে কর | আমি আজ আর অফিস যাব না | কাল তো শনিবার‚ একেবারে সোমবারেই জয়েন করব |
পিকলু এসে বললো‚ মা‚ আমি একটা নাগাদ একটু বেরোবো | বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমায় যাওয়ার প্ল্যান আছে |
-সে ঠিক আছে | তার অনেক আগেই আমার রান্নাবান্না হয়ে যাবে | তুই সময়মত বলিস‚ ভাত দিয়ে দেবো |
এদিকে আরো দুটোদিন কেটে গেল‚ সুচিত্রার পাত্তাই নেই‚ কোন খবরও নেই |
রমেনবাবু ক-বার প্রদ্যুম্নর ফোনে চেষ্টা করল‚ লাইনই পেলনা | হয়তো গন্ডগোল আছে | অগত্যা সোমবারে অফিস ছাড়া গতি নেই ………
সোমবারে অফিসে গিয়েই প্রদ্যুম্নর টেবলে…
আরে রমেন‚ আমিও তোমার খোঁজ করছি, সেদিন….
আমি তো আসিনি‚ এই আজই জয়েন করলাম | আবার তোমার টেলিফোনটাও খারাপ | কোন খবরই পাচ্ছিনা |
আচ্ছা‚ যে জন্য তোমাকে খুঁজছি….
প্রদ্যুম্ন,সুচিত্রার কোন খবর জানো ?
আরে ভায়া‚ আমিও তো তোমাকে সেই ব্যাপারে বলবো বলেই খুঁজছি …..
ওর মায়ের কাছে শুনলাম‚ অন্য একটা ছেলের সঙ্গে প্রায়ই ঘুরতে দেখা যেত আজকাল | ওর মা কয়েকদিন বকাবকিও করেছে‚ সে শোনেনি |
ওর বরটা আবার ভালোমানুষ গোছের | সে কোনদিনও এসব নিয়ে কিছু বলেনি |
তারপর সপ্তমীর দিনই‚ তুমি যে শাড়িখানা দিয়েছিলে‚ সেটা পরে‚ সেজেগুজে‚ কাঁধের একটা ব্যাগে কিছু জামা-কাপড় ভরে‚ ছেলেটাকে বাপের কোলে দিয়ে বেরিয়ে গেছে | সেই থেকে তার আর কোন পাত্তাই নেই |
সারাদিন পর‚ ওর বরটা ছেলে কোলে নিয়ে‚ সুচিত্রার মায়ের কাছে গিয়ে শোনে‚ ওর মা কিছু জানেইনা |
-তবে ওর মা বুঝতে পেরেছে‚ ঠিক সেই ছেলেটার সঙ্গেই ভেগেছে |
বাচ্চাটাকে তো ওর মা রেখে দিয়েছে | ওর বরটা সারাদিন পরে‚ একবার করে রাত্রে গিয়ে ছেলেটাকে দেখে আসে আর সুচিত্রার খোঁজ নিয়ে আসে |
কি বলছ হে প্রদ্যুম্ন? ওকে দেখেতো কখনো মনেই হয়নি‚ ও এমন ধরনের কাজ করতে পারে ….
–হ্যাঁ গো রমেন ভায়া‚ আমরাও তো সবাই অবাক |
সন্ধ্যেবেলা দরজা খুলেই‚ অপালা আমার মুখের দিকে অধীর আগ্রহে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো……..
আমি বেশ মনোকষ্ট নিয়েই বললাম‚ কি বলবো বলতো অপালা….সে সুচিত্রা আর আসবেনা | সে অন্য একটা ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে | এমনকি বাচ্চাটাকেও ফেলে রেখে গেছে |
-সেকি গো ? ঐ মেয়ে অমন করতে পারে‚ ভাবা যায় ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + seventeen =