অন্তর

দেবাংশু ভট্টাচার্য্য

দুজনেরই রক্ত-মাংস-মজ্জা বিরাজমান,
তবু জমিন-আসমান ফারাক ওদের ।
একজন ব্যাগ নেয়,দামি ব্যাগ ।
ওতে দামি টিফিন বক্স,দামি পেন-পেনসিল,খাতা ।
আরেকজন ব্যাগ নেয়,বড় ব্যাগ ।
ওতেও খাতা-পত্তর আছে, কুঁড়িয়ে তুলে আনা ।
একজনের মাথার উপর বাঁধানো ছাদ ।
পাখা ঘোরে বনবন করে । ঠান্ডা মেশিন চলে ।
বাড়ির সামনে গাড়ি থামে,গন্তব্যে নিয়ে যেতে ।
সহস্র আলোকের সমাহারে উজ্জল প্রতি কোন ।
অন্যজনের ত্রিকোন তাঁবু, উন্মুক্ত জানালা ।
প্রকৃতির শীতলতা স্নীগ্ধ করে দিয়ে যায় প্রতিদিন ।
বাড়ির সামনে হতে লক্ষ বাহন চলে । একটিও তার নয় ।
দিবাকরের বিশালতম আলোকেই তার ঘর আলোকিত ।
একজনের বাবা এক বায়নায় হীরকে মুড়তে চায় ।
কেদারার সমাহারে রোজকার ভোজন ।
প্রশ্রাবাগার রাজমহল,স্নানাগার ঝলমলে,
এক চাওয়ায় চন্দ্রিমা নেমে আসে হাতের তালুলে ।
অপরের পিতা জন্মদানের প্রক্রিয়া সেরেই নিখোঁজ ।
ফুটপাথের ধারেই রোজ নামে চড়ুইভাতির আসর ।
স্নান সারে অসীম গঙ্গায়, সুর ছাড়াই গান গায় ।
নির্মম প্রচেষ্টায় এক মুঠো ভাত জোটে রোজ ।
একজনের জন্মেই তুলোয় ঢেকেছিল শরীর,ওষ্ঠে রৌপ্যের দন্ড
মধুর স্বাদে শুরু হয়েছে মধুর জীবন ।
নিদ্রা যেতে কোমল পালঙ্ক ছিল সদা প্রস্তুত ।
নিদ্রার শেষে উষ্ণ পানিয়ে উষাগমন ।
জন্ম হয়েছিল মৃত্তিকার পরে, ভূমির স্নেহে ।
মাতৃদুগ্ধের স্বাদেই সূচিত হল দূর্গম জীবন ।
শান্তির নিদ্রা আসত বাঁধানো পথের উপর ।
নিদ্রার শেষ হত এক মুঠো জলের ঝাঁপটে ।
দুজনের বয়স একই ।
উৎপত্তির পদ্ধতি একই, প্রায় একই উচ্চতা দুজনের ।
তবু ভিন্ন তারা । ভিন্ন তাদের সমাজ ।
ভিন্ন তাদের উপর আমার তোমার নজর ।
ভিন্ন তাদের মান, ভিন্ন তাদের জগৎ ।
এক আকাশে বিচরনের যোগ্যতা তাদের নেই ।
একজনকে আমি ‘তুমি’ বলেছি,একজনকে ‘তুই’ ।
একজনের চকচকে বুটে আমি নিজের মুখ দেখেছি,
আরেকজনের মুখটা দেখার ইচ্ছাও জন্ম নেয়নি !
একজনকে ভগবান জন্ম দিয়েছেন ।
আর একজনকে কোনও এক বেশ্যা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen + 2 =