বিচার
অমিয় আদক (চিলাডাঙ্গি, হুগলি)
আপনকক্ষ মধ্যে পদচারণায় রত দীর্ঘকায় ব্রাহ্মণ। তাঁহার গাত্র মধ্যম কৃষ্ণবর্ণ। চারি হাতের অধিক দৈহিক উচ্চতা। মস্তকের গঠন দেহকাণ্ড অনুপাতে যথেষ্টই বৃহৎ। প্রশস্ত ললাট আড়াআড়ি চন্দনের তিনটি সমান্তরাল রেখায় চিত্রিত। আয়ত নয়ন হইতে নির্গত দ্যুতিতে প্রখর বুদ্ধির বিকিরণ স্পষ্ট ছিল। পরিধানে শ্বেত-শুভ্রধুতি এবং উত্তরীয়। তাঁহার স্বহস্ত নির্মিত যজ্ঞ উপবীত উত্তরীয় মধ্যে অবস্থিত। মুণ্ডিত মস্তকের পশ্চাৎভাগে তুলনায় অতিরিক্ত কেশগুচ্ছের দ্বারা গঠিত একটি গ্রন্থি যুক্ত দীর্ঘ শিখা। তাঁহার পদক্ষেপনের সাথে সাথেই মস্তক পশ্চাতের শিখাটি ঘোটক পশ্চাতে লোমশ লাঙ্গুলের ন্যায় পর্যাবৃত্ত আন্দোলনে রত ছিল। কোন কারণে তাঁহার চিত্ত অধিক চঞ্চল।
তাঁহার চিন্তার স্তরগুলি তাঁহার দৃষ্টির মাধ্যমেই যেন নির্গত হইতে ছিল। বসন্ত সমাগমে প্রকৃতিতে যৌবনের আগমন। সেই আগমন সৌরভ দেশ-রত্ন পণ্ডিত মহোদয়ের অন্তরকে বিন্দুমাত্র আন্দোলনে অক্ষম ছিল। তাঁহার অস্থির পদক্ষেপন এবং চিন্তা তাঁহার ললাটের ভাঁজগুলিকে আরও স্পষ্টতর করিয়াছিল। বৈকালিকপবনে বসন্তের সৌরভ মেদুরতা। মধ্যম মানের উষ্ণতা। তৎসত্ত্বেও বিন্দু বিন্দু স্বেদের চিহ্ন দ্বারা তাঁহার ললাটরেখা সমূহ সিক্ত ছিল। দুই একটি স্বেদবিন্দু দ্বারা প্রস্তর নির্মিত গৃহাভ্যন্তরের মসৃন তলও সিক্ত ছিল। রাণী দুর্ধরার মৃত্যুকালে এবং রাজা বিন্দুসারের জন্মকালেও তাঁহাকে এই রূপ বিচলিত হইতে কেহ দেখিয়াছিল কিনা সেই বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ।
রাজ্ঞী দুর্ধরার মৃত্যু এবং রাজপুত্র বিন্দুসারের জন্ম সময়ের ঘটনা সমূহ অদ্যও তাঁহার স্মৃতিপটে উজ্জ্বল এবং অক্ষয়। সেই উত্তেজনাময় দিবসের স্মৃতি আমৃত্যু তাঁহার সঙ্গী হিসাবেই বর্তমান থাকিবে। রানী দুর্ধরার মৃত্যুর কারণ তিনি অবশ্যই সবিশেষ জ্ঞাত ছিলেন। তদুপরিজ্ঞাত ছিলেন আর্যাবর্তের প্রবল পরাক্রমী সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত। আসন্ন প্রসবা রানী দুর্ধরার মৃত্যু ঘটিলেও তাঁহার গর্ভস্থসন্তানের মৃত্যুকে রোধ করিয়া ছিলেন প্রাজ্ঞ ব্রাহ্মণ স্বীয় চেষ্টায়। আয়ুর্বেদ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁহার অগাধ পাণ্ডিত্য। তদুপরি তিনি প্রচণ্ড সাহসী এবং আত্মপ্রত্যয়ী।
ধাত্রী ও পরিচারিকাদের সম্মুখেই মৃত রাজ্ঞীর উদর দেশে তাঁহার কর্নপত্র স্থাপন করিয়া অনুভব করিলেন গর্ভস্থ সন্তানের অবস্থান এবং অবস্থা। রানী দুর্ধরার গর্ভস্থ সন্তানের হৃদ-স্পন্দন তিনি স্পষ্ট শুনিলেন। তজ্জন্য সময় অপচয় সমীচীন নয় বিবেচনা করিলেন। সেই জন্য রাজ বৈদ্যকে আহ্বানের অপেক্ষাও তিনি করিলেন না। স্বহস্তে তুলিয়া লইলেন শল্যকরণের অস্ত্র।
মৃত রাণী দুর্ধরার উদর ব্যবচ্ছেদ করিলেন সতর্কতার সহিত। রক্তমাখা শিশুটি প্রথম পৃথিবীর আলো অবলোকন করিল। তাহার সুতীব্র ক্রন্দনে মুখরিত মহারানীর কক্ষ। অসীম উত্তেজনায় চিৎকার করিয়া উঠিলেন প্রাজ্ঞ পণ্ডিত, “জীবিত, শিশুপুত্রটি জীবিত। হে করুণাময়, আপনার অসীম করুণা। মহারাজ চন্দ্রগুপ্ত, আপনার পুত্রসন্তান জীবিত। আমি শল্য ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমেই তাহাকে জীবিত অবস্থায় এই ধরনীর আলো দেখাইতে সক্ষম হইয়াছি। পরম করুণাময়কে ধন্যবাদ এবং শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করুন মহারাজ।”
মহারাজ পত্নীবিয়োগের ব্যথায় কাতর। পত্নীর মৃত্যুর কারণ তিনি জ্ঞাত ছিলেন। তাঁহার প্রাজ্ঞ প্রধান মন্ত্রী সমস্ত বিষয়টি তাঁহাকে অবগত করাইয়া ছিলেন। সেই কারণ সমূহ তাঁহাকে যুগপৎ বিস্মিত এবং বিমর্ষ করিল। তৎ সত্ত্বেও তাঁহার নয়ন যুগল অশ্রু শূন্য। তাই পুত্রলাভের আনন্দ অথবা পত্নী বিয়োগের বেদনা কোনটিকে তিনি পৃথক উপায়ে উদযাপন করিবেন তাহা স্থির করিতে অক্ষম। সেই কারণেই তিনি নিরুত্তাপ নিরুদ্বেগ। তাঁহার শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রীর দিকেই পলক বিহীন দৃষ্টি নিবদ্ধ। এই সমস্ত ঘটনা অবশ্যই অতীত।
সেই পুত্রের নামকরণ করা হইল বিন্দুসার। রাজপ্রাসাদে যোগ্য ধাত্রীর তত্ত্বাবধানে বিন্দুসার বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইতে লাগিল। তাহার জন্মের পূর্বেই তাহার মাতা মৃত। তজ্জন্য ধাত্রীকেই মাতৃজ্ঞান করিত শিশু রাজপুত্র। বয়োবৃদ্ধির সাথেই বালক বিন্দুসার পিতার কাছেই জ্ঞাত হইল তাহার জন্ম বৃত্তান্ত। মহাজ্ঞানী, মহাপণ্ডিত, মহামন্ত্রী তাহার মৃত মাতার উদর ব্যবচ্ছেদ করিয়া তাহাকে পৃথিবীর আলো দেখাইতে সক্ষম হইয়াছেন। সেই কাহিনী অবগত হইবার পর হইতে বিন্দুসার মনে মনে মহামন্ত্রীর প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞতার আবেশ অনুভব করিল।
বালক বিন্দুসার শাস্ত্র শস্ত্র ইত্যাদির শিক্ষা লাভ করিল সেই মহা পণ্ডিতের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। সেই জন্যই গুরু হিসাবেও মহামন্ত্রীর প্রতি তাহার অন্তহীন শ্রদ্ধা। বালক বিন্দুসার হইতে কিশোর রাজপুত্র বিন্দুসারকে কোন এক দিনের জন্যও মহামন্ত্রীর প্রতি বিন্দুমাত্র অশ্রদ্ধা পোষণ করিতে কেহই দেখিল না।
কিশোর বিন্দুসার বয়স্ক রাজ কর্মচারীদের নিকট হইতে জ্ঞাত হইল মৌর্য্য বংশের শৌর্য্যের ইতিহাস। মহাপণ্ডিতের নন্দরাজ দ্বারা অপমানের কাহিনী হইতে তাহার পিতাকে রাজা নির্বাচন, রাজার অভিষেক, সৈন্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ ইত্যাদি সর্ব প্রকার কাহিনী জ্ঞাত হইতে বিন্দুসারের বিশেষ সময়ের অপচয় ঘটিল না। একাধিক বারের প্রচেষ্টায় পাটলীপুত্র বিজয়ের রোমাঞ্চকর অধ্যায় ইত্যাদি সমস্তই তাহার অধিগত হইল।
পাটলীপুত্র বিজয়ান্তে পাটলীপুত্রের পরাজিত রাজা ধননন্দের যুবতী কন্যা দুর্ধরাকে বিবাহের আখ্যানও তাহাকে পুলকিত করিল। পিতার বীরত্বের আখ্যান তাহাকে মোহিত করিল। পুত্র হিসাবে বীর পিতার পদাঙ্ক অনুসরণের প্রতিজ্ঞাও অজ্ঞাতসারে বিন্দুসার গ্রহণ করিল। মহামন্ত্রীর বুদ্ধি ও পরামর্শ, মহারাজ চন্দ্রগুপ্তের বিপুল সৈন্য বলের সাহায্যে সমগ্র উত্তর ভারতে বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপনের কাহিনী রাজকুমার বিন্দুসারকে রাজপুত্র হিসাবে গৌরবান্বিত হইতে সাহায্য করিল।
অদ্যকার ক্লান্ত দিবাকর পশ্চিম দিগন্তের অন্তরালে প্রায় আগত। তাঁহার ক্লান্ত রক্তিম মুখচ্ছবির কিঞ্চিৎ মাত্র অংশ দৃশ্যমান।রাজ উদ্যানের পাদপে পাখিদের বিদায় কলরবে দিবা অবসানের ইঙ্গিত। গোধূলির রক্তিম আভা তখনও দিগন্তের মায়া কাটাইতে অক্ষম। ম্লান আলোর আভায় সন্ধ্যার আগমণ সূচিত। রাজপ্রাসাদের অলিন্দে অলিন্দে প্রদীপ সমূহে সদ্যপ্রস্তুত তৈলসিক্ত সলিতায় অগ্নিসংযোগের কাজে ব্যস্ত পরিচারিকাবৃন্দ। বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ রাজার সম্মুখে উপস্থিতির আহ্বান অপেক্ষায় আপন কক্ষে অপেক্ষমান।
অল্প সময় পরেই মহারাজ বিন্দুসারের কক্ষে তাঁহার উপস্থিত হওয়ার সময় নির্দিষ্ট। তিনি স্নানাগারে অথবা জলাশয়ে অবগাহন স্নানের সময়ে দৃশ্য স্বীয় প্রতিবিম্ব ব্যতীত এই ধরাধামে কোন কিছুতেই ভীতি অনুভব করিতেন না। অথচ তাঁহার অদ্যকার উদ্বেগের কারণ নিজেই অনুমানে অক্ষম। তাঁহার কোন অজ্ঞাত চিত্ত চাঞ্চল্যের কারণেই এই অস্থিরতা।
মহারাজ বিন্দুসারের অনুমতি সাপেক্ষে তাঁহার কক্ষে প্রবিষ্ট হইলেন ব্রাহ্মণ। মহারাজের জয় সূচক অভিবাদনেও ব্রাহ্মণ অভ্যস্ত কোন কালেই ছিলেন না। সেই জন্য স্বয়ং বিন্দুসারকে কুশল সূচক প্রশ্ন করিতে বাধ্য হইলেন। উত্তরে বিন্দুসার তাঁহার কুশল জ্ঞাত করাইলেন। সেই সঙ্গে প্রণাম পূর্বক ব্রাহ্মণকে তাঁহার নির্দিষ্ট আসনে উপবেশনের অনুরোধ জানাইলেন। ব্রাহ্মণ আসন গ্রহণ করিলেন।
এক্ষনে ব্রাহ্মণ স্বয়ং প্রশ্ন করিলেন, “মহারাজ, আমাকে আপনার কক্ষে সাক্ষাতের জন্য আহ্বানের হেতু কী?” বিন্দুসার উত্তরে জ্ঞাত করাইলেন, “আপনি আমার পিতার মহামন্ত্রী ছিলেন, আর আমার ক্ষেত্রেও প্রধান রাজ উপদেষ্টা। কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে কিছু তথ্য আমি প্রাপ্ত হইয়াছি। সেই বিষয়ের সত্যতা সম্পর্কে আমি স্বয়ং সন্দিহান। তাই সেই সমস্ত বিষয়ে আপনাকে প্রত্যক্ষে প্রশ্ন করার নিমিত্ত আহ্বান জানাইয়াছি। আপনার নিকট সদুত্তর প্রত্যাশা করি। আশাকরি নিরাশ করিবেন না।” জলদ গম্ভীর কন্ঠে ব্রাহ্মণ উত্তর প্রদান করিলেন, “আমি জীবনে সর্ব প্রকার মিথ্যাচারে অ্নভ্যস্ত। কিন্তু আপনার প্রশ্নটি কি?”
-মন্ত্রী সুবন্ধু আমাকে জানাইয়াছেন, আমার মাতা দুর্ধরার মৃত্যুর জন্য আপনিই দায়ী। বিষয়টি সত্য কিনা, আমাকে তথ্য প্রদান করুন।
-মহারাজ বিন্দুসার, আপনার মাতা দুর্ধরার মৃত্যু ঘটিয়াছিল বিষ মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণে। তাহা অবশ্যই সত্য। প্রকৃতসত্য জ্ঞাত হওয়ার প্রবল বাসনা আপনার? প্রকৃত সত্য অবশ্যই নিবেদন করিব।
-আপনি নন্দ বংশের শত্রু। আমার মাতা নন্দ বংশীয় কন্যা। সেই জন্যই বিদ্বেষ বশতঃ…………
-মহারাজ, আপনার ধারণা ভুল। আপনার পিতা মহারাজ চন্দ্রগুপ্ত নন্দ রাজধানী বিজয়ান্তেই রাজকুমারী দুর্ধরার
রূপমুগ্ধ ছিলেন। সেই বিবাহ বিষয়ে আমি বিরোধিতা না করিয়া পক্ষান্তরে উৎসাহ প্রদানই করিয়াছিলাম।
-তাহা হইলে আমার মাতার খাদ্যে বিষ প্রযুক্ত হইল কি উপায়ে?
-মহারাজ, আমি ভীষণ ভীত ছিলাম, মহারাজ চন্দ্রগুপ্তকে কেহ বিষ প্রয়োগে হত্যা করিবার পরিকল্পনা করিতে
পারে। সেই কারণেই মহারাজের অজ্ঞাতসারে প্রতিদিন তাঁহার খাদ্যে সামান্য মাত্রায় বিষ মিশ্রিত করিয়া তাঁহার
শরীরে গরল প্রতিষেধকতা সৃষ্টি করিতে ছিলাম। মহারাজকে আমি বার বার নিষেধ করিয়া ছিলাম, তাঁহাকে
প্রদত্ত খাদ্য যেন অন্য কেহ গ্রহণ না করেন। কিন্তু মহারাজ আমার বক্তব্যকে গুরুত্ব প্রদান করেন নাই। তিনি তোমার মাতা দুর্ধরার সহিত সেই বিষ প্রযুক্ত খাদ্য আনন্দের আতিশয্যে ভাগ করিয়া খাইয়া ছিলেন। সেই বিষ সহ্য করিবার ক্ষমতা বা গরল প্রতিষেধকতা আপনার পিতার শরীরে বর্তমান ছিল। কিন্তু আপনার মাতার তাহা ছিলনা। তাই তাঁহার মৃত্যু ঘটিয়াছিল।
-আপনার এই কল্প কাহিনী আমার নিকট বিশ্বাসযোগ্য নয়। আপনিই আমার মাতার মৃত্যুর জন্য দায়ী।
-যদি আমি প্রকৃতই দায়ী হইতাম, তাহা হইলে মহারাজ চন্দ্রগুপ্ত কি আমাকে শাস্তি প্রদান করিতেন না?
-আপনি আমার পিতাকে মিথ্যা তথ্য প্রদান করিয়া বিভ্রান্ত করিয়া ছিলেন।
-না, কোন প্রকার মিথ্যা তথ্য প্রদানে মহারাজকে বিভ্রান্ত করিবার উদ্দেশ্য আমার ছিল না।
-শাস্তি হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিবার জন্যই আপনি মিথ্যাচার করিয়া ছিলেন।
-আমি মিথ্যাচারী এবং রাজ পরিবারের প্রতি দায়িত্ব বোধহীন ছিলাম? তাহা হইলে আপনার জীবিত থাকিবার প্রশ্নই থাকিত না।
-সেই তথ্যও আমি অবগত আছি।
-তাহা হইলে আপনার স্বীকৃতি পাইলাম, আপনার জীবিত থাকিবার জন্য আমার ভূমিকা অবশ্যই ছিল।
-আপনি কেন এই রূপ মিথ্যা দাবী উত্থাপিত করিতেছেন?
-বিশ্বাস না হইলে, কোন প্রবীণা পরিচারিকার নিকট জানিবার চেষ্টা করিবেন, আপনার জীবিত থাকার রহস্য। তারপর বিচার বিশ্লেষণ অবশ্যই করিবেন, আমার মিথ্যাচারের পরিমাণ।
-সে কাহিনীও আমি সম্যক অবগত আছি। তবুও আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য, আমার মাতার মৃত্যুর জন্য আপনি একমাত্র দায়ী। তাহা সত্ত্বেও আমি আপনার শাস্তিবিধান করিব না। আপনার স্বীয় শাস্তির সিদ্ধান্ত আপনাকেই গ্রহণ করিতে হইবে।
-যথা সিদ্ধান্ত মহারাজ। আমার অধিক বয়স। রাজার প্রধান পরামর্শ দাতা থাকিবার ক্ষেত্রেও আমার সামর্থ্যের অভাব আমি উপলব্ধি করিতেছি। আমার শত্রু স্থানীয় মন্ত্রী সুবন্ধুর বক্তব্যকেই আপনি বেদবাক্য জ্ঞান করিতেছেন। সেই জন্যই আমি নিরুপায়। আমার নিজের জন্য শাস্তি নির্বাচনের প্রয়োজনে আমায় কিঞ্চিৎ সময় প্রদান করুন।
-কোন প্রকার অপেক্ষা আমার পক্ষে অসম্ভব। আপনি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
-মহারাজ, আমি আমার সিদ্ধান্ত জ্ঞাপন করিতেছি। আপনার আজ্ঞা অনুসারে স্বীয় শাস্তি নির্বাচন করিয়াছি।
-কি শাস্তি নির্বাচন করিলেন?
-আমি কদাপি নত শির ছিলাম না। অদ্যও নত করিব না। আমি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছি, আমি স্বেচ্ছা উপবাসে মৃত্যু বরণ করিব। মহারাজ সেই সঙ্গে আমার এইকথাস্মরণে রাখিবেন। যদি ভবিষ্যৎ কালে মৌর্য্য বংশীয় রাজন্যবর্গের ইতিহাস রচিত হয়, তাহা হইলে আমার পরোক্ষ অপরাধ কাহিনী অন্য ভাবেই বিবেচিত হইবে। রাজ্ঞী দুর্ধরার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী ছিলাম না। সেই কথা ইতিহাস স্বীকার করিতে বাধ্য থাকিবে। আপনার জন্মদাত্রী দুর্ধরা ইতিহাসের পাতায় উপেক্ষিতাই থাকিবেন। কেবল তাঁহার অকাল মৃত্যুর কারণে। আমায় কক্ষ ত্যাগের অনুমতি প্রদান করুন মহারাজ। অথবা অতিরিক্ত কোন শাস্তি প্রদানের অভিলাষ থাকিলে তাহা অবশ্যই ব্যক্ত করিবেন।
ক্রুদ্ধ মহারাজ বিন্দুসা্রের সংক্ষিপ্ত উত্তর, “আপনি কক্ষ ত্যাগ করিতে পারেন।” প্রাজ্ঞ ব্রাহ্মণ তৎক্ষণাৎ উন্নত মস্তকে দৃঢ় পদক্ষেপেই মহারাজ বিন্দুসারের কক্ষ পরিত্যাগ করিলেন। তাঁহার মুখমণ্ডল দর্পনে অনুশোচনার সামান্য প্রতিফলনও অনুপস্থিত ছিল।