শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার ভাষা নির্মানে লোকাভরণ শৈলী
পার্থসারথি সরকার
লোকজীবনের ক্ষেত্র থেকে আহৃত লোকউপাদান যখন সাহিত্যক্ষেত্রে সার্থকভাবে ব্যবহার করা হয়, তখন সে নির্মানশৈলীর উপাদান রূপে অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে মিশে গিয়ে একটি রূপলাভ করে। এই উপাদান নির্মাণ কলার সঙ্গে অন্বিত হলে তাকে সেখান থেকে পৃথক করা যায় না। বাক্যবিন্যাস, পদের ব্যবহার কিংবা ভাবান্বয়ের নানা ক্ষেত্রে উপাদানগুলির মিশে যাওয়াটা প্রত্যেক সাহিত্যিকের নিজস্ব রচনাশৈলীর উপর নির্ভর করে। আসলে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা কিংবা লোকউপাদানের সঙ্গে একাত্মতাবোধই নয়, শিল্পীর নিজস্ব প্রায়োগিক গুণের মধ্যে দিয়ে লোকউপাদান কায়ারূপ লাভ করে। লোকাভরণের বৈচিত্র্যের হেতুও তাই শিল্পীর স্ব- শৈলীনির্মান ক্ষমতা এবং প্রায়োগিক দক্ষতা।
লোকউপাদানকে সাহিত্যের মধ্যে অঙ্গীভূত করাই হল লোকাভরণের মূল কথা। এই উপাদান এমনিভাবে কাব্যকায়ায় মিশে থাকে, যেখান থেকে তাকে পৃথক করা যায় না। এখানেই লোকাভরণ অলংকারের থেকে পৃথক হয়ে যায়। অলঙ্কার বহিরঙ্গ ভূষণ। কিন্তু লোকাভরণে লোক উপাদান কোনরূপ বহিরঙ্গ বিষয় নয়। সে কাব্য শরীরে মিশে রূপ পায় এবং কাব্যের শরীরের সামগ্রিক রূপেরই অংশ হয়ে ওঠে। লোকাভরণ প্রধাণত দুই প্রকারের – অন্বয়ী লোকাভরণ এবং অনন্বয়ী লোকাভরণ। সমালোচকের মতে—
“প্রথমটির ক্ষেত্রে মূল লোক-উপাদানটি রচনায় অনুক্ত থাকে। অর্থাৎ শৈলীগতভাবে মূল রচনার সঙ্গে অন্বিত হয় না। আভাসে ও ইঙ্গিতে তার অস্তিত্ব বোঝা যায়। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে মূল লোক-উপাদান রচনার সঙ্গে অন্বিত হয়। প্রথম ক্ষেত্রে উপাদানটি নিহিত থাকে পরোক্ষভাবে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে থাকে ব্যক্ত বা প্রত্যক্ষভাবে।”
অনন্বয়ী লোকাভরণের থেকে অন্বয়ী লোকাভরণের অনেক বেশী ব্যবহার দেখা যায়। অন্বয়ী লোকাভরণের পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল – পদান্বয়ী লোকাভরণ, বাক্যান্বয়ী লোকাভরণ, ভাবান্বয়ী লোকাভরণ, অবধারক লোকাভরণ এবং পাদপূরক লোকাভরণ। এই লোকাভরণগুলির মধ্যে যথাক্রমে পদের অন্বয়, বাক্যের অন্বয়, ভাব অন্বয়, লোকজীবনের ইঙ্গিত এবং মূলভাবের পাদপূরক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বিপ্লব চক্রবর্তীর মতে-
“পদান্বয়ী লোকাভরণ মূলত একাধিক পদের ব্যবহারে সীমিত থাকে। বাক্যান্বয়ী লোকাভরণ কবিতার বিভিন্ন অংশের ভাব-অন্বয়ে গঠিত হয়। অবধারক লোকাভরণ অবধারকরূপে লোক-উপাদানের তথা লোকজীবন বা সংস্কৃতির ইঙ্গিত দান করে। পাদপূরক লোকাভরণ সাধারণত কবিতার মূলভাবের পাদপূরণে ব্যবহৃত হয়। স্তবকের শেষে বা কবিতার শেষে লোকউপাদান পাদপূরক রূপে শিল্পিত রূপ পায়।”
লোকাভরণ নির্মিতির মূল হল লোকসাহিত্য এবং লোকসংস্কৃতির বহু বিচিত্র উপাদান। এই লোকাভরণকে লোকঐতিহ্য নির্ভর রচনাশৈলী বলা যায়। স্বাভাবিকভাবে লোকসাহিত্যের ছড়া, প্রবাদ-প্রবচন, ধাঁধা ইত্যাদিও লোকাভরণের লোকউপাদান হিসাবে পরিগণিত হয়। আবার লোকসংস্কার, লোককাহিনি, লোকগীতি, লোকধর্ম, লোকক্রিয়া ইত্যাদি নানা বিষয় সাহিত্যের রচনাশৈলীর উপাদান হিসাবে ধরা দেয়। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার কায়া নির্মানেও এমনি লোকসংস্কৃতি ও লোকঐতিহ্যের বিস্তীর্ণ আহৃত উপাদান ব্যবহৃত হয়েছে।
তাঁর কবিতায় লোকছড়া প্রধান উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ছড়া লোকসাহিত্যের অন্তর্ভূক্ত এবং লোকঐতিহ্যের একটি প্রধান উদাহরণ। ছড়া লোক প্রচলিত এবং ব্যক্তিবিশেষের রচনা হতে পারে। তবে লোকছড়া যেমন ব্যক্তি নিরপেক্ষ তেমনি কৃত্তিমতা বর্জিত। ছড়াকে সার্থকভাবে কবিতায় অন্তর্ভূক্ত করার ব্যাপারে তাঁর কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। বাস্তব প্রেক্ষিতকে আরও উপযোগী করে তোলার জন্য ছড়াকে তিনি অবলম্বন করেছেন আনায়াসে—
“ প্রভু হে কেন শুকালো ফুল, মুড়ালো গাছ পীতল মালা
দরদী মুখে মলিন হাসি বুঝিনি ছল শিল্পকূট…” (মুকুর)
-এখানে তিনি লোকপ্রচলিত ছড়াকে ব্যবহার করেছেন বর্তমানের প্রেক্ষাপটে।
“ফুটো তাঁবু লাগে পাঁজরে, ফাঁদ্রা ডুলি,
বুড়ো বেদুইন খরমুজ খায় দেখে
বলি, বড়মিয়াঁ, যাবো সে কমলাপুলি…” (ছায়ামারীচের বনে)
আবার,
“ছড়ার মতো ঢঙে দুঃখকে নিয়ে এতোলবেতোল শামলাশেতোল
খেলেছি যেন!” (দুঃখ আমার)
এছাড়াও “আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে সূ্য্যি গেছে পাটে” লোকছড়াকে ভেঙে তিনি ব্যবহার করলেন “সুয্যি পাটে নেমেছে” হিসাবে। তবে তিনি সবচাইতে সার্থকভাবে লোকছড়াকে ব্যবহার করেছিলেন যেখানে, সেই কবিতাটি রবীন্দ্রনাথকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন। লোকছড়া যেমন মিশে গেছে মানবজীবনে, সেখান থেকে তাকে আলাদা করা যায় না, তেমনই রবীন্দ্রনাথও। এই ছড়াটি সেদিক থেকে আরও সার্থক হয়ে উঠেছে—
“বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর/ হৃদয় ভরে বান
আকাশ বাতাস ছেয়ে রয়েছে/ রবি ঠাকুরের গান
রবি ঠাকুরের গান ওরে ভাই/ রবি ঠাকুরের ছবি
ঘরে এবং ঘরের বাইরে/ যখন একলা হবি
কাজি ফুল কুড়োতে কুড়োতে/ জড়িয়ে গেলি মালায়
হাত ঝুমঝুম পা ঝুমঝুম/ এক ঠাকুরের জ্বালায়।”
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় লোকসাহিত্যের যে উপাদানটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে ব্যবহৃত হইয়েছে তা হল প্রবাদ প্রবচন। আসলে তাঁর জীবনের সঙ্গে এই লোকউপাদান একেবারে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। তাই কবিতার কায়া গঠনের ক্ষেত্রে তিনি প্রবাদ প্রবচনকে এনেছেন, এবং এই ব্যবহার কোথাও অস্বাভাবিক ঠেকেনি। তাই তিনি লেখেন-
“পুবের বাতাসে নড়ে ধর্মের কল
আমায় ধরেছে হিন্দুর আফজল
‘তুই স্বাধীনতা চাস?”’ (ধর্ম)
বাংলাদেশ তার মায়াময় রূপ নিয়ে কবিকে বারবার আকৃষ্ট করেছে। কবিও সেই বাংলার কথা উচ্চারিত করে গেছেন নির্ভিক কণ্ঠে—
“আমরা স্বীকার করি পদ্মাপারে বাংলার স্বাধীন
মায়ার আকাশ, তার এলোচুল, নদী-নৌকা-নদী
আমরা স্বীকার করি সার্বভৌম সূচাগ্র মেদিনী
বুড়ো আংলা বাংলাদেশ মাথা তোলে রক্তে ও সবুজে…” (আমরা স্বীকার করি…)
এছাড়াও বহু প্রবাদ প্রবচন তাঁর কবিতায় বিচ্ছিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে ‘ভয় আমার পিছু নিয়েছে’ একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা। এখানে একাধিক প্রবাদ প্রবচন ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন—
“তিজেল মালসা নেই, ভিটে-মাটি চাটি করে নিয়ে গেছে উই
নবাবপুত্তুর, বাবু দুই!
বলে কিনা সব দেবে, হাতে চাঁদ পেড়ে দেবে, ফেলাগ্টা গেড়ে দেবে আশমানে-জমিনে
দেঁড়েমুসে খেতে পাবো, সেনেমাযাত্রা যাবো—বড়ো বড়ো কথা!” (ভয় আমার পিছু নিয়েছে)”
ছড়া কিংবা প্রবাদ প্রবচনের মতো লোককথা, লোকসংস্কার ইত্যাদি বিষয়ও লোকাভরণ শৈলীর উপাদান হসাবে ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে “সাধারণ লৌকিক উপাদানগুলি শিল্পরসে জারিত হয়ে পরিবর্তিত হয়ে যায়। অনেক সময় অর্থদ্যোতনাও ভিন্নতর হয়।” বিভিন্ন লোককথাকে শিল্পী সমকালীন প্রেক্ষাপটে স্থাপন করেছেন। যা অনেকক্ষেত্রে বাস্তবের চিত্রধর্মীতার যথাযথ সহযোগী হিসাবে সার্থক হয়ে উঠেছে। তিনি লোকজীবন ও সংস্কৃতিকে ভেঙ্গে তাঁর রচনায় সার্থকভাবে প্রয়োগ করেছেন—
“হেম্লিনের বাঁশিওলা, এ-সশব্দ কলকাতা আমার
সানাইয়ে সংগীতে যন্ত্রে ট্রিস্টানের নবম সিম্ফনি
কতদূর যাবে, এ যে ঢের বড়ো সমুচ্চ বিহার
সেনেটের শতপ্রান্তে মেথি খোঁজে ইঁদুরের শ্রেণি।” (সেনেট ১৯৬০)
হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার গল্প পাঠক মাত্রেই উপলব্ধি করতে পারেন। বর্তমান দিনের প্রেক্ষিতে তার প্রাসঙ্গিকতা কতটা তাও বুঝতে পারেন। এই কাহিনীটিকে তিনি অন্যত্রও ব্যবহার করেছেন—
“কোথায় যে শব্দ-গঙ্গোত্রী? দিগ্বিদিকে চলেছি খুঁজে
উইঢিবি, ক্যাকটাশের মধ্যে হ্যামলিনের বাঁশির ইঁদুর…” (পোকায় কাটা কাগজপত্র)
‘সিন্দ্বাদ নাবিকের কাহিনীর জন্ম হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার কাহিনীর মতো বাংলার বাইরে হলেও বাংলা তাকে আপন করে নিয়েছে। কবির লেখনীতে তাই এই কথাও অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে এসে পড়ে—
“সব দিকে কি সাধ্য চলা
ভ্রমণকারী, একলা থাকি
সিন্ধুবাদের রোমাঞ্চকর স্বপ্ন দেখতে অল্প বাকি…” (শিল্পকলা)
লোকউপাদানের একটি বিশেষ দিক হল লোকাচার। লোকাচারের মধ্যে কোন জনগোষ্ঠীর একেবারে অন্তরঙ্গ সুরটির সন্ধান মেলে। কোন জনগোষ্ঠীর মানুষের জীবনযাত্রার ছবিটি এখানে ধরা পড়ার জন্য, তাদের সম্বৎসরের নানা প্রকার উৎসব, অনুষ্ঠান, আচার-বিচার এ সবেরই ছবি ফুটে ওঠে। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিরার মধ্যেও অত্যন্ত আন্তরিকভাবে এই সমস্ত আচার আচরণের ছবিটি অত্যন্ত সাবলীলভাবে যেমন হাজির হয়েছে, তেমনই পাশাপাশি তা অত্যন্ত নিখুঁতও হয়ে উঠেছে। বাংলার লোকায়ত জীবনে যে সমস্ত বিষয়গুলি প্রাধান্য পায়, তার মধ্যে উলু দেওয়া, শঙ্খধ্বনি করা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার মধ্যে এই সমস্ত মাঙ্গলিক বিষয়গুলি এসেছে।
“ধূপধুনা গন্ধ মাখে হাওয়া
নিজেকে বৃহৎ করে স্তম্ভে তুলি স্বাধীন পতাকা
ওরা উলু দেয়, পঞ্চমূখী শাঁখ বাজে প্রাণে…(পতাকার)
বাংলার সর্বপ্রধান উৎসব দুর্গাপূজা। আর এই দুর্গাপূজাকে বাঙালির কাছে জানান দেয় যেমন শরতের প্রকৃতি, তেমনই পাশাপাশি ঢাকের কাঠিও। এই উৎসবের দিকটিও তাঁর কবিতায় এসেছে স্বাভাবিকভাবে—
“ঢাকে কাঠি পড়ে।
কাঁসর ক্রন্দন করে ওঠে,…
রঙিন শিক্লিতে করে ঝলমল ঝলমল
পুজোর মণ্ডপ।” (মনে রেখো)
লোকাচারের পাশাপাশি লোকবিশ্বাসের প্রসঙ্গ বহু ক্ষেত্রে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কাব্যকায়া নির্মাণ করেছে সার্থকভাবে। সাধারণ মানুষের লোকবিশ্বাসের জায়গা থেকেই তৈরী হয় বিভিন্ন আচার বিচার, ব্রত পার্বণ ইত্যাদি। লক্ষ্মী ঠাকুরের গৃহে প্রবেশের মধ্যে লুকিয়ে থাকে সমৃদ্ধির ছবি। সেই বিশেষ দিকটির ছবি তাঁর কবিতার মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে-
“লক্ষ্মীঠাকুর যেমন হাঁটেন উঠোন জুড়ে—” (মানুষ দেখে ভয় পেয়েছে)
পাশাপাশি তামা তুলসী গঙ্গাজল ছাপোষা হিন্দুদের কাছে পবিত্র হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে। আর সেই সমস্ত সাধারণ সরল মানুষের মেঠো ঘরের মোহ যেন অত্যন্ত গভীরভাবে পেয়ে বসে। শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাঁর কবিতার মধ্যে এই দিকেরই একটি বিস্তৃত ছবি চিত্রিত করেছেন—
“এবং তাকেও চাই, জীবনের সার্থক খেলায়
যে তোমার সঙ্গে যাবে, কোনদিন পিছনে ফিরবে না
সঙ্গে যাবে মেঠোঘর, গঙ্গাজল তুলসীর মতো” (প্রতিক্রিয়াশীল)
সাধারণের মনে বালগোপালের যে ধারণা তা অত্যন্ত বিশ্বস্ত। সেকথাও ফুটে উঠেছে তাঁর কবিতায়—
“যদি যাই আমাকে নেবে বুক পেতে
বৈষ্ণব-কলসে থাকবে নিত্য দুধ আমার তৃষ্ণার
বালক গোপাল আমি” (সারারাত গান গায়)
দেবতাকে হাত বাড়ালে পাওয়া যায় না। কিন্তু মানব তার মানবত্ব ছাড়িয়ে দেবতা হয়ে ওঠে। এ ঐতিহ্য সকল দেশে সকল কালেই দেখা যায়। আর সেদিক থেকে সাঁওতাল পরগণার বীর বীরসা মুন্ডা স্বভবতই দেবতার রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে, তাই চার চরিত্রে সেই ভাবটাই ধরা পড়েছে—
“গভীর গভীরতর মর্মতলে ডাকে
শিশু শাল পিয়ালের নিচু কণ্ঠস্বর।
বনমুরগি উড়ে যায় বনেট পেরিয়ে
রামধনু হাতে সেই বীরসা ভগবান
পাহাড়চূড়ায়…” (মনে রেখো)
লোকসংগীত শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার কোন কোন স্থানে এসেছে, যদিও তা ব্যাপকভাবে নয়। অনেক ক্ষেত্রেই প্রাসঙ্গিকভাবে—
“তুমি কবিগান বেঁধে দোরে দোরে অমন ঘুরো না
মুকুন্দ দাসের মতো” (সদর স্ট্রীট)
আবার কখনও কখনও কবিতার বিশেষ অভিব্যক্তিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য প্রয়োজন হয় লোকসংগীতের। ‘কবিতার মতো স্নিগ্ধ বৃষ্টিপাত’ কবিতার শুরুতে এমনই একটি প্রাচীন লোকগীতির ( আমার কালো পাখি উড়ে গেছে ভালোবাসার শিকল ছিঁড়ে/ কী হবে আর প্রাণপাখিশূণ্য পিঞ্জর যত্ন করে…) উল্লেখ করেছেন তিনি।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু কিছু লোকক্রীড়ার উল্লেখ, কিংবা কখনও কখনও সার্থকতার সঙ্গে ব্যবহার করতে দেখা যায়। এদের মধ্যে কানামাছি খেলা (হলুদ নদী সবুজ বন), এক্কা-দোক্কা খেলা (শব্দের বিয়ে) ইত্যাদি কয়েকটি ক্ষেত্রে এসেছে। আর এইভাবেই লোকাভরণ শৈলীর প্রয়োগ শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় বহুবার ঘটেছে। কবিতার নির্মানকলায় এই শৈলী সাহায্য করেছে বহু দিক দিয়ে। প্রায়োগিক দিকের যথার্থতায় লোকাভরণ শৈলী শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাকে বিশেষ মাত্রা দান করেছে।
তথ্যসূত্রঃ
১। লোকাভরণ আধুনিক কবিতার শৈলী, বিপ্লব চক্রবর্তী, পুস্তক বিপণী, কলকাতা-০৯, জানুয়ারি ২০০৬।
২। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা, সম্পা. মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়, প্রতিভাস, কলকাতা-০২, জানুয়ারি ২০১৫।
৩। আমার সময়, সম্পা. বব রয়, ১ম বর্ষ ১০ম সংখ্যা, কলকাতা-১৭, এপ্রিল ২০১০।